ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছিল প্রায় আধ ঘণ্টা আগে। হুড়মুড়িয়ে ঢুকতে গেলে শিক্ষক তাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “এত দেরি করে এলে ক্লাস করা যায় না।” একটুও না ঘাবড়ে ছেলেটি পাল্টা ওই শিক্ষকের কলার চেপে ধরে শুরু করে অকথ্য গালমন্দ। হুমকি দেয়, “স্কুল শেষ হোক তারপর দেখে নেব।’’
কান্দির বহড়া আদশ্য বিদ্যাপীঠ স্কুল কর্তৃপক্ষ অবশ্য ওই ঘটনায় রেয়াত করেনি ছাত্রটিকে। সঙ্গে সঙ্গে ওই ‘অভব্যতার’ শাস্তি হিসেবে তার হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় ট্রান্সফার সার্টিফিকেট বা টিসি। যার ফলে দ্বাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রের উচ্চমাধ্যমিক দেওয়াই এখন প্রশ্ন চিহ্নের মুখে। স্কুলের প্রধানশিক্ষক দীনেন্দমোহন ত্রিবেদী অবশ্য এ ব্যাপারে কোনও ‘মার্জনা’র রাস্তায় যেতে নারাজ। তিনি স্পষ্টই বলছেন, “কিছু অপরাধ আছে যার কোনও মার্জনা হয় না। ওই ছাত্রের অপরাধ সেই পর্যায়ের।”
রেজিস্ট্রেশন হয়ে গিয়েছে। ফলে ওই ছাত্রের নাম ইতিমধ্যেই উচ্চমাধ্যমিক কাউন্সিলের কাছে চলে গিয়েছে। এ অবস্থায় ওই ছাত্র কী করে পরীক্ষা দেবে? স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান, নিয়ম অনুযায়ী কাউন্সিল অনুমতি দিলে সে অন্য কোনও স্কুলে নাম লিখিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসতে পারে। জেলার সহকারী স্কুল পরিদর্শক (কান্দি) রাখী মণ্ডল বলেন, “নিয়ম একটাই, কাউন্সিল অনুমতি দিলে তবে সে অন্য স্কুলের হয়ে পরীক্ষা দিতে পারবে। তবে এ ক্ষেত্রে ছাত্রটির বাবা-মা স্কুলে এসে ক্ষমা চেয়ে নিলে স্কুল যদি ওর উপরে সদয় হয় তাহলে ছেলেটির ভবিষ্যৎটা বাঁচে। তবে এটা সম্পূর্ণ স্কুল কর্তৃপক্ষের ব্যাপার।”
বৃহস্পতিবার, সেই সময়ে স্কুলে চলছিল দর্শনের ক্লাশ। বেলা বারোটা গড়িয়ে গিয়েছে। ছাত্রটি স্কুলে এসেছিল ক্লাশ শুরু হওয়ার প্রায় আধ ঘণ্টা পরে। এ দিনই ব্যতিক্রম নয়। স্কুল সূত্রে দাবি, এর আগেও ক্লাস শুরুর কুড়ি থেকে পঁচিশ মিনিট দেরিতে আসত সে। এটা প্রায় ‘নিয়ম’ করে ফেলছিল ছাত্রটি। এ ব্যাপারে তাকে সতর্কও করা হয়েছিল বলে স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে। কিন্তু তাতে যে কাজ হয়নি এ দিন ফের আধ ঘণ্টা দেরি করে ক্লাশে ঢুকে তারই প্রমাণ দেয় সে। দ্বাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রটি জানায়, ওই শিক্ষককে মারধর সে করেনি। তার দাবি, “আমি ক্লাসে ঢুকতে গেলে ওই শিক্ষকের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছিল ঠিকই। তারপরেই উনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে যান। আমি মোটেই মারধর করার কথা বলিনি।”
তবে প্রধান শিক্ষক বলেন, “স্কুলের শিক্ষক এবং ছাত্রদের একাংশ ওই ছেলেটির ব্যবহারে আতঙ্কিত। এ ঘটনা কোনও বাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বিষয়টি নিয়ে তাই এ দিনই আমি পরিচালন সমিতির সঙ্গে বৈঠক করেছিলাম। সকলে মিলেই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” |