জঙ্গলে চোরাশিকারিদের দৌরাত্ম্য রুখতে বনকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ-প্রশাসনকেও সামিল করার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার গরুমারা জাতীয় উদ্যান লাগোয়া ধূপঝোরাতে বন দফতরের কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানিয়েছেন, যেই ভাবেই হোক চোরাশিকারিদের দৌরাত্ম্য সম্পূর্নরূপে রুখতে হবে। শুধু বনরক্ষীদের নয়, এই কাজে পুলিশ প্রশাসনকেও একইরকম ভাবে সামিল করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, দ্রুত পুলিশ প্রশাসনের শীর্ষ ও থানা স্তরের অফিসারদের সঙ্গে বন বিভাগের আধিকারিকরা বৈঠকে বসবেন। সেই বৈঠকে যৌথভাবে বন সুরক্ষার পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নির্দেশ দিয়ে কালিম্পঙের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যাওয়ার পরেই ধূপঝোরাতেই বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে ফের বৈঠকে বসেন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পালন করার জন্য ডিএফও, রেঞ্জারদের কী করণীয় তার বিশদ নির্দেশ দেন বনমন্ত্রী। |
ধূপঝোরায়। বৃহস্পতিবার। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক। |
এ দিন বনমন্ত্রী হিতেনবাবু বলেন, “জঙ্গলে কাঠচুরি বা বন সুরক্ষা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিশেষ জোর দিয়েছেন। তিনি পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে বন সুরক্ষার কাজ করতে বলেছেন। সেই মত ডিএফও, রেঞ্জারদেরও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে সমন্বয় তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ কীভাবে পালন করা হচ্ছে তা খতিয়ে দেখতে পরবর্তীতে মহাকরণেও বৈঠক করা হবে।” এ দিনের বৈঠকে বনমন্ত্রী ছাড়াও রাজ্যের সাধারণ প্রধান মুখ্য বনপাল অতনু রাহা, উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল, বনপাল এবং ডিএফও, রেঞ্জাররা উপস্থিত ছিলেন। ধূপঝোরাতে বছর দেড়েকের একটি হস্তিশাবকের নামকরণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী শাবকটির নাম দিয়েছেন ‘বর্ষণ’। ধূপঝোড়াতে কৃষ্ণবটগাছের চারা গাছও লাগান মুখ্যমন্ত্রী। কালিম্পং যাওয়ার আগে বনমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বন দফতরের আধিকারিক, জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের কর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মিনিট দশেকের বৈঠকে বন সুরক্ষাতেই জোর দিয়েছিলেন তিনি। এছাড়া বন দফতরের কাঠের নিলামের প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ডুয়ার্সের জয়ন্তী এলাকায় পর্যটন প্রসারের বিস্তারিত পরিকল্পনা তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন জাতীয় উদ্যান, অভয়ারণ্যের সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট তুলে ধরতে একটি তথ্যচিত্র তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই তথ্যচিত্রের নাম ‘বাংলার অরণ্য’ হবে বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে। বনমন্ত্রী জানিয়েছেন, দ্রুত পেশাদারি সংস্থাকে দিয়ে এই তথ্যচিত্র তৈরি করা হবে। দক্ষিণের সুন্দরবন থেকে উত্তরের গরুমারা সবই তথ্যচিত্রে থাকবে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বনাঞ্চলকে একত্রিত করে বন দফতরকে একটি পর্যটন মানচিত্র তৈরি করারও নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই মানচিত্রে কোন এলাকায় কী কী দর্শনীয় এলাকা রয়েছে তার উল্লেখ থাকবে। বন দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, যাতে পর্যটকেরা একনজরেই তাদের ভ্রমন পথের পরিকল্পনা করতে পারেন তার জন্যই মুখ্যমন্ত্রীর ওই নির্দেশ। বনবস্তিবাসীদের উন্নয়নে বেশি করে প্রকল্প তৈরির বিষয়েও এদিন মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। |