সার্বিক ভাবে আরামবাগ মহকুমায় ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে গতি এলেও ব্যতিক্রম আরামবাগ ব্লকের তিরোল পঞ্চায়েতের চারটি সংসদ এলাকা। মোমিনপুর-নৈসরাই, সাহালানপুর, পারআদ্রা-ভাবাপুর এবং কৃত্তিচন্দ্রপুর এই চারটি সংসদ এলাকায় ওই প্রকল্পের কাজ থমকে রয়েছে প্রায় ১৪ মাস ধরে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, তৃণমূলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের’ জেরে ওই প্রকল্পে সমস্যা হচ্ছে। অশান্তির আশঙ্কায় তাঁরা কাজ চেয়ে আবেদনও জানাচ্ছেন না। স্থানীয় প্রশাসনও এ ব্যাপারে উদাসীন।
মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী অবশ্য বলেন, “সমস্যাটি দেখা হচ্ছে। শ্রমিকেরা কাজ চেয়ে আবেদন করলে কাজ দেওয়া হবে।” একই বক্তব্য আরামবাগের বিডিও মৃণালকান্তি গুঁইয়েরও। তিনি বলেন, “১০০ দিনের প্রকল্প নিয়ে ব্যাপক প্রচার হয়েছে। কাজ চাইলে ১৫ দিনের মধ্যে শ্রমিকদের কাজ দিতে আমরা বাধ্য। কিন্তু ওই চারটি সংসদ থেকে কোনও কাজের দাবি ওঠেনি।”
তিরোল পঞ্চায়েতটি সিপিএমের দখলে রয়েছে। মোট ১৯টি সংসদ। ১৫টি সংসদে ওই প্রকল্পে কাজ চলছে জোরকদমে। কিন্তু নৈসরাই এলাকার ওই চারটি সংসদে তৃণমূলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ বড় আকার নিয়েছে বলে গ্রামবাসীদের অভিমত। স্থানীয় তৃণমূল নেতা গোলাম আম্বিয়া, বাবর আলি এবং জাকির খানের অনুগামীরা ওই প্রকল্পে মাতব্বরি করছে ওই প্রকল্পে কাজ পাওয়া ও সুপারভাইজার নিয়োগ নিয়ে প্রায়ই অশান্তি, মারামারিতে জড়িয়ে পড়ছে বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ। গোলমালে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় গ্রামবাসীরা পঞ্চায়েতে গিয়ে কাজ চাইছেন না। ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ যে রয়েছে, তা তিন তৃণমূল নেতার কথাতেই স্পষ্ট। গোলাম আম্বিয়ার অভিযোগ, “আমি যতবার কাজ করানোর চেষ্টা করেছি, বাবর আলির লোকেরা ঝামেলা পাকিয়েছে।” তাঁর দাবি, “পঞ্চায়েতের কলা গাছ বিলি, চাল বিলি বা ত্রিপল বিলির মতো যেটুকু কাজ হয়েছে, তা আমিই করিয়েছি।” বাবর আলি অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “কাজ করানোর কথা পঞ্চায়েত সদস্যদের। তাঁরা করাচ্ছেন না কেন? গোলাম আম্বিয়াকে আমি বাধা দিইনি। তাঁর পক্ষপাতিত্বের জন্য সাধারণ মানুষই প্রতিবাদ করেছেন।” আর এক তৃণমূল নেতা জাকির খান বলেন, “১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে কেউ হামলে পড়ুক, এটা হতে দেব না। পঞ্চায়েতের সরকারি আধিকারিকেরা নিজেরা দাঁড়িয়ে থেকে স্বচ্ছ ভাবে কাজ করান।”
কী বলছে পঞ্চায়েত?
প্রধান সান্ত্বনা বাগ বলেন, “এলাকার দুঃস্থ মানুষেরা কাজ পাচ্ছেন না, এটা খুবই দুঃখের। কেউ কাজ চাইছেন না। কারও কোনও উদ্যোগ না থাকলে, আমরা কী করব?” তবে, পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক (প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বপ্রাপ্ত) প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “কর্মীরা দাঁড়িয়ে থেকে কাজ করাবেন, এমন পরিকাঠামো এই পঞ্চায়েতের নেই। সুপারভাইজাররা কাজ দেখাশোনা করেন। কিন্তু ওই চারটি সংসদ থেকে ওই পদের জন্যও কেউ আবেদন করছেন না।”
চারটি সংসদের পঞ্চায়েত সদস্যেরাও (সকলেই সিপিএমের) সমস্যার পিছনে তৃণমূলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’কেই দায়ী করেছেন। তাঁরা নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলেছেন।
চারটি সংসদ এলাকায় ‘জবকার্ড’ আছে, এমন শ্রমিকের সংখ্যা ৯৬২ জন। ওই সব শ্রমিকদের প্রতিনিধিদের দাবি, তাঁরা একাধিকবার পঞ্চায়েতে গিয়ে মৌখিক ভাবে কাজ চেয়েও পাননি। অশান্তির ভয়ে তাঁরা লিখিত আবেদন জানাননি। |