সম্পাদকীয় ১...
এত বন্দি কেন
বশেষে মুক্তি। তিন সপ্তাহ পর জামিনে মুক্তি পাইলেন পিঙ্কি প্রামাণিক। তাঁহার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ যে জামিনের একান্তই অযোগ্য নহে, সে বিষয়ে অতএব সংশয় নাই। এত দিন তাঁহার বন্দিদশা এত আবশ্যক ছিল, ইহাতেই সাধারণ নাগরিক কিছু আশ্চর্য হইয়াছেন। কোন অভিযুক্ত ব্যক্তি জামিন পাইবেন, তাহা নির্ণয় করিতে পারে কেবল আদালত। যেমন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা প্রয়োজন কি না, সেই সিদ্ধান্ত একমাত্র পুলিশই লইতে পারে। আদালত এবং পুলিশ দফতরের সেই ক্ষমতাকে সম্পূর্ণ সম্মান জানাইয়াও, সামাজিক ন্যায় এবং মানবাধিকারের দৃষ্টি হইতে এই ক্ষমতা প্রয়োগের নীতি ও কার্যধারা সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন উঠিয়া আসে। এ বিষয়ে কোনও সংশয় নাই যে, স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। রাষ্ট্র, সরকার, বিচার ব্যবস্থা, কেহ এই মৌলিক অধিকারকে অস্বীকার করিতে পারে না। বিশেষ গুরুতর কারণ না ঘটিলে কোনও ব্যক্তিকে পুলিশ হাজত অথবা কারাগারে বন্দি করা অন্যায় এবং অপরাধ। সুতরাং প্রশাসন, আইন এবং সমাজবিদ্যার বিশেষজ্ঞদের বারবার মূল্যায়ন করিতে হইবে যে, সামগ্রিক ভাবে কোনও একটি রাজ্যে, এবং দেশে, গ্রেফতার করিবার এবং জামিনের আবেদন অগ্রাহ্য করিবার যে সিদ্ধান্তগুলি নেওয়া হইয়াছে সেগুলি কতখানি গ্রহণযোগ্য। এই সমস্যাটি যে যথেষ্ট গুরুতর, তাহা বলিবার অপেক্ষা রাখে না। একটি সমীক্ষা অনুসারে, এ দেশের মাত্র ৩০ শতাংশ বন্দি কারাবাসের দণ্ড পাইয়াছে। বাকিরা সকলেই বিচারাধীন, এমনকী অনেকের বিরুদ্ধে কোনও নির্দিষ্ট অভিযোগও নাই। মানব জীবনের কী অবমাননা! পুলিশ-আদালতের দীর্ঘসূত্রিতায় এই বিপুল মানব সম্পদ অপচয় হইতেছে, ইহা রাষ্ট্রেরও ক্ষতি। বহু বার মানবাধিকার কমিশন বিচারপ্রার্থীকে বন্দি করিবার জন্য পুলিশকে ভর্ৎসনা করিয়াছে। অতএব আশঙ্কা হয়, স্বাধীন নাগরিককে বন্দি করিবার যে বিধি কেবলমাত্র অতি ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করিবার কথা, তাহা অনায়াসে, অবিবেচনায় প্রয়োগ হইতেছে। রাষ্ট্র বিচার করিবার নামে অপরাধ করিতেছে।
আইন অনুসারে প্রধানত দুটি ক্ষেত্রে জামিনের আবেদন অগ্রাহ্য করা যাইতে পারে। এক, যদি অভিযুক্ত ছাড়া পাইলে অপরাধের তদন্তে কোনও ব্যাঘাত ঘটিবার সম্ভাবনা থাকে। দুই, যদি রাজনৈতিক বা সামাজিক অস্থিরতার কারণে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হইবার আশঙ্কা থাকে। এই দুটি কারণই ন্যায্য, কিন্তু বস্তুত কি কেবল এই কারণগুলি অনুসরণ করা হইতেছে? পিঙ্কি যদি বিখ্যাত ক্রীড়াবিদ না হইতেন, তাঁহার খবর যদি সংবাদ মাধ্যমে ফলাও করিয়া প্রকাশিত না হইত, তাহা হইলেও কি তাঁহাকে এত দিন কারাবাস করিতে হইত? সমাজের চোখে অপরাধের গুরুত্ব যাহাই হউক, অপরাধের ফলে যত ব্যাপক কিংবা ভয়ানক ক্ষতিই হইয়া থাকুক, অভিযুক্তের মানবাধিকার যাহাতে লঙ্ঘিত না হয় তাহা বিচার ব্যবস্থাকে নিশ্চিত করিতে হইবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রজত গুপ্তের বিরুদ্ধে আনীত ব্যবসায়িক আইনভঙ্গের অভিযোগে ওয়াল স্ট্রিটের ইতিহাসে সর্বাধিক বৃহৎ অঙ্কের টাকা জড়িত ছিল। তাহা সত্ত্বেও তিনি আত্মসমর্পণ করিবার সঙ্গে সঙ্গে জামিন পাইয়াছিলেন। অপরাধী কে, তিনি সুপরিচিত ক্ষমতাশালী ব্যক্তি না কি নিম্নবিত্ত বা দরিদ্র সাধারণ নাগরিক, তাহা গ্রেফতার বা জামিনের ক্ষেত্রে বিবেচ্য হইতে পারে না। কিন্তু এ রাজ্যে কী ঘটিতেছে? এ এম আর আই হাসপাতালের পরিচালক গোষ্ঠীর সদস্যবৃন্দ হইতে নোনাডাঙার বস্তিবাসী, সকল ক্ষেত্রেই অভিযুক্তদের গ্রেফতার এবং জামিনের আবেদন বাতিল করিবার সিদ্ধান্ত এই অস্বস্তির সৃষ্টি করিয়াছে যে, যাহাকে ছাড়িয়া দিলে তদন্ত-প্রক্রিয়ায় কিংবা রাজ্যের নিরাপত্তায় কোনও বিঘ্ন ঘটিত না তাহাকেও বন্দি করিয়া রাখা হইল কি? অপরাধ প্রমাণের পূর্বেই কি সাজা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হইয়া গেল? সরকার-প্রশাসনের ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্যই কি উলুখাগড়ার এই বন্দিদশা? পিঙ্কির মুক্তিতে জনসমাজ হাঁপ ছাড়িয়াছে, কিন্তু প্রশ্নগুলি পিছু ছাড়িতেছে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.