এক কদম এগিয়ে তো দু’কদম পিছিয়ে। রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতি ভোটের আগে এই কৌশল নিয়েই এগোতে চাইছে কংগ্রেস। সে কারণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে খাদ্যশস্য-সহ নিত্যপণ্যের ফরওয়ার্ড ট্রেডিং বা আগাম লেনদেন আইন সংশোধন বিলে অনুমোদন আপাতত স্থগিত রাখল মনমোহন সিংহ সরকার। একই ভাবে ইস্পাতমন্ত্রী বেণীপ্রসাদ বর্মা এ দিনের মন্ত্রিসভার বৈঠকে না থাকায় সেল-এর বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্তও পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ইউপিএ-র দ্বিতীয় দফায় বারবার মমতার আপত্তিতেই আটকে গিয়েছে সংস্কার-সহ কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত। সেই তালিকায় যেমন রয়েছে বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির জন্য দরজা খুলে দেওয়া, তেমনই আছে জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র এনসিটিসি গঠনের মতো সিদ্ধান্ত। মনমোহন অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ইউপিএ সরকারের তরফে বলা হচ্ছিল, শরিকদের বিরোধিতা থাকলেও এ বার আর্থিক সংস্কারের কর্মসূচি রূপায়ণ করা হবে। তা হলে আজ ‘ফরওয়ার্ড কনট্র্যাক্ট রেগুলেশন আইন’-এ সংশোধনের সিদ্ধান্ত পিছিয়ে দেওয়া হল কেন? সরকারি সূত্রের বক্তব্য, এই বিলে খাদ্যশস্যের ফাটকা বাজারের নিয়ন্ত্রক ‘ফরওয়ার্ড মার্কেট কমিশন’-কে আরও বেশি আর্থিক স্বাধীনতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। এর ফলে আরও বেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ আসত এবং বাজার আরও স্থিতিশীল হত। কিন্তু গত কালই মুকুল রায়ের মাধ্যমে এ বিষয়ে ‘নোট অফ ডিসেন্ট’ পাঠান মমতা। তিনি মনে করছেন, এর ফলে মধ্যসত্ত্বভোগীদের আরও বাড়বাড়ন্ত হবে। দাম বাড়বে পণ্যের। কাল মমতার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কথাও হয়েছিল। এর পরে সৌজন্যের খাতিরেই আজ প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়টি আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেন।
উত্তরবঙ্গ সফরে থাকা মমতা এই খবর শোনার পরে বলেন, “আমি খুশি হব বিষয়টা পুরোপুরি বন্ধ করা হলে।” তাঁর সাফ কথা, “এর ফলে ফড়ে এবং মজুতদাররা যত্রতত্র মাল মজুত করে শেয়ার বাজারের মতো জিনিসের দাম নিয়ন্ত্রণ করবে। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন চাষিরা। এটা কী করে মেনে নেব!”
এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি ফের শিকেয় উঠল সংস্কার প্রক্রিয়া? ইউপিএ সরকারের তরফে বলা হচ্ছে, রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন পর্যন্ত কৌশলগত কারণেই কিছু ক্ষেত্রে সংস্কার প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে কিন্তু পদক্ষেপ করা হচ্ছে। যেমন, পেনশন সংস্কার। এ দিনই জাতীয় পেনশন প্রকল্পে তহবিল পরিচালনার ক্ষেত্রটি খুলে দেওয়া হয়। সরকারি শর্ত পূরণ করলে যে কেউ এখন এই তহবিল পরিচালনার কাজ করতে পারবে।
এমনিতেই রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি ভোট নিয়ে কংগ্রেস-তৃণমূল মতর্পাথক্য তৈরি হয়েছে। এখন তাই মমতার সঙ্গে নতুন করে সংঘাতে যেতে চায় না কেন্দ্র। বরং এই দুই ভোটের পরে ডিজেলে ভর্তুকি কমানোর মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে দিল্লি। আমজনতার স্বার্থের প্রশ্ন তুলে সেখানেও মমতা আপত্তি তুলবেন, এমনটাই প্রত্যাশিত। তার আগে আপাতত সংঘাত এড়াতেই চান সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব। একই সঙ্গে বার্তা দিতে চান মমতাকে।
যে বার্তা আর এক দফা মিলল এনসিটিসি নিয়েও। এই বিষয়ে রাষ্ট্রপতি ভোটের পরে মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির কাছে যে নোট পাঠানো হবে, সেখানে প্রস্তাব করা হচ্ছে: স্থানীয় থানাকে জানিয়ে তবেই গ্রেফতার বা তল্লাশি চালাতে পারবে এনসিটিসি। রাজ্য পুলিশকে এড়িয়ে এনসিটিসি-কে গ্রেফতার ও তল্লাশির ক্ষমতা দেওয়া নিয়ে মমতা আপত্তি তুলেছিলেন। এ ছাড়া এনসিটিসি-কে আইবি-র বদলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আওতায় আনারও প্রস্তাব করা হয়েছে। এনসিটিসি নিয়ে রাষ্ট্রপতি ভোটের পরে পদক্ষেপ করার কথা বলেও মমতাকে তুষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
|
অদূর ভবিষ্যতে কোনও নির্দিষ্ট দিনে/সময়ে কোনও পণ্যের দাম কী হতে পারে, তা অনুমান করে যখন একাধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে (এক পক্ষ ক্রেতা, অন্য পক্ষ বিক্রেতা) সেই সংক্রান্ত লেনদেন নিয়ে চুক্তি হয়, তাকেই বলে আগাম লেনদেন। ধরা যাক, সেই ক্রেতা এবং বিক্রেতা আলোচনা করে ঠিক করলেন, দু’মাস পরে কোনও পণ্যের দাম হবে কেজি প্রতি ৩০ টাকা। সেই দামের উপরেই চুক্তি হল। দু’মাস পরে কেনাবেচার দিনে পণ্যের দাম যদি ৩০ টাকার বেশি হয়, লাভ ক্রেতার। আর ৩০ টাকার কম হলে লাভ বিক্রেতার। |