দমদমের কাছে রেললাইনে ফাটল দেখতে পেয়ে মঙ্গলবার মা তারা এক্সপ্রেসকে বাঁচিয়েছিলেন চালক। বৃহস্পতিবার রেলের এক জন ‘কি-ম্যান’-এর তৎপরতায় বড়সড় দুর্ঘটনা এড়াল একাধিক এক্সপ্রেস ট্রেন। ঘটনাস্থল পূর্ব রেলের বোলপুর-রামপুরহাট শাখার সাঁইথিয়া স্টেশনের কাছে।
২০১০ সালে ১৯ জুলাই ওই স্টেশনেই বনাঞ্চল ও উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসের সংঘর্ষ ঘটে। ৬০ জনের মৃত্যু হয়। সেই স্মৃতি এখনও মোছেনি। এ দিনের ঘটনা জেনে রেলকর্তারা সাধুবাদ দিয়েছেন শ্রীসঞ্জয় নামে ওই ‘কি-ম্যান’কে। তাঁকে পুরস্কার দেওয়া যায় কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছেন রেলকর্তারা।
পূর্ব রেল সূত্রের খবর, সাঁইথিয়া স্টেশনের কাছে ডাউন মেন লাইনে কে বা কারা ১০০টি প্যান্ড্রোল ক্লিপ খুলে নিয়ে চলে গিয়েছিল। সকালে লাইন পরীক্ষার দায়িত্বে ছিলেন শ্রীসঞ্জয়। তিনি লাইন পরীক্ষা করার সময় দেখতে পান, এক দিকের লাইনে সার বেঁধে প্যান্ড্রোল ক্লিপ খুলে নেওয়া হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি খবর দেন স্টেশনে। সেখান থেকে খবর যায় কন্ট্রোলে। ওই লাইনে ট্রেন বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে পিডব্লিউআই (পাথওয়ে ইনস্পেক্টর)-এর কর্মীরা লাইনে ফের প্যান্ড্রোল ক্লিপ বসানোর পরে আবার ট্রেন চলাচল শুরু হয়। তত ক্ষণে পৌনে ১১টা বেজে গিয়েছে।
প্যান্ড্রোল ক্লিপ খুলে দিলে কী হতে পারে? রেলকর্তারা জানান, রেললাইনের লম্বা লম্বা টুকরো মাটির উপরে সিমেন্টের স্লিপারের সঙ্গে আটকানো থাকে। সেগুলি মাটির উপরে শক্ত করে ধরে রাখে রেললাইনকে। ক্লিপ খুললে রেললাইন আলগা হয়ে যাবে। ট্রেনের চাকা আলগা লাইনের উপর দিয়ে যেতে গেলেই পড়ে যাবে। ঘটবে দুর্ঘটনা।
এ দিনের ঘটনায় যে-সব ট্রেন আটকে ছিল, তার মধ্যে আছে আজিমগঞ্জ-হাওড়া কবিগুরু এক্সপ্রেস, রামপুরহাট-বর্ধমান প্যাসেঞ্জার, রামপুরহাট-কলকাতা এক্সপ্রেস। আটকে গিয়েছিল একটি মালগাড়ি। রেলকর্তারা জানান, প্যান্ড্রোল ক্লিপ খোলার বিষয়টি যদি চোখে না-পড়ত, তা হলে পরপর তিনটি এক্সপ্রেস ট্রেনের যে-কোনও একটি লাইনচ্যুত হয়ে যেতে পারত। একই ভাবে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসকেও বেলাইন করানো হয়েছিল বলে তদন্তের পরে জানায় পুলিশ। এ ক্ষেত্রে এখনও তেমন কোনও ষড়যন্ত্রের আভাস মেলেনি ঠিকই। তবে রেল পুলিশ সেই সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখছে। বছর সাতেক আগে আসানসোল ডিভিশনে মেন লাইনের ৩০০টি প্যান্ড্রোল ক্লিপ খুলে নেওয়া হয়েছিল। নজরে পড়ায় ট্রেন আসার আগেই তা মেরামত করা হয়। আর কেউ যাতে ওই ক্লিপ খুলতে না-পারে, তার জন্য নকশাও পরিবর্তন করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও আবার কী ভাবে ক্লিপ খোলা হল, সেটাই ভাবাচ্ছে রেলকর্তাদের। |