তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) দুই গোষ্ঠীর বিবাদে ফের অশান্ত হল বর্ধমান রাজ কলেজ। বৃহস্পতিবার দুপুরে দু’পক্ষের সংঘর্ষে জখম হন দুই ছাত্র। ভাঙচুর হয় বেশ কিছু নোটিস বোর্ড। এই ঘটনার পরে কলেজে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির ‘আশঙ্কায়’ শুক্র ও শনিবার কলেজে পঠনপাঠন বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করেছেন অধ্যক্ষ। তবে প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা হবে বলে জানানো হয়েছে। পুলিশ জানায়, অভিযুক্তদের খোঁজা হচ্ছে।
গত কয়েক মাসে রাজ কলেজে বেশ কয়েক বার গণ্ডগোলে জড়িয়ে পড়েছে টিএমসিপি-র দু’টি গোষ্ঠী। এর আগে গত ২৬ জুন মারপিটের ঘটনা ঘটেছিল। বারবার গোলমালের জেরে অনেক ছাত্র হস্টেলে থাকতে ভরসা পাচ্ছেন বলে কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে। এ সবের প্রভাব পড়েছে কলেজের পঠন-পাঠনেও। তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক অলোক দাস এ দিন বলেন, “দলের জেলা ছাত্র নেতাদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।”
|
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে কলেজের টিএমসিপি নেতা শুভায়ু সাহা ও মহম্মদ আজিজের অনুগামীদের সঙ্গে সংগঠনেরই আর এক নেতা সন্তোষ সিংহের গোষ্ঠীর লোকজনের ফের বিবাদ বাধে। শুভায়ু সাহা ও মহম্মদ আজিজ গোষ্ঠীর অনুগামীদের অভিযোগ, তাঁদের নেতা তথা ছাত্র সংসদের ক্রীড়া সম্পাদক আসিফ আনোয়ারকে কলেজের সাইকেল স্ট্যান্ডে একা পেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে সন্তোষের লোকেরা।
আসিফের অভিযোগ, “প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে আমাকে মারধর করা হয়। চোখ খুবলে নেওয়ারও চেষ্টা হয়। মারের চোটে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি।” এর পরেই শুভায়ু সাহার অনুগামীরা কলেজে ছুটে আসে। অভিযোগ, তাঁদের হাতে আক্রান্ত হয় অপর গোষ্ঠীর নেতা অভোরকিশোর লাহিড়ি। চোখ ও কপালে গুরুতর চোট পাওয়া আসিফকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগে ভর্তি করানো হয়েছে। অভোরকিশোরকে ভর্তি করানো হয়েছে একটি নার্সিংহোমে।
মারপিটের ঘটনার পরেই কলেজের অডিটোরিয়াম, কমার্স ভবন, মূল ভবন আফতাব ব্লকের নোটিস বোর্ড, বিজ্ঞান ভবনে ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ। কলেজ সূত্রে জানা যায়, প্রায় এক ঘণ্টা পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “কলেজে এ দিন বহিরাগতদের উপস্থিতি কম ছিল। যা ঘটেছে তা ছাত্রদের মধ্যেই। তবে ভাঙচুরে কারা জড়িত তা এখনও জানতে পারিনি। জানা গেলে পুলিশের কাছে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হবে।” |
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আগামী দু’দিন প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা হওয়ার কথা জানালেও কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষিকা নিরুপমা গোস্বামী তা বাতিলের দাবি জানিয়ে তাঁকে চিঠি লিখেছেন। ওই শিক্ষিকার দাবি, ফাঁকা কলেজে পরীক্ষা হলে তাঁরাও আক্রান্ত হতে পারেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জানান, পুলিশকে এই ভাঙচুরের কথা জানানোর পাশাপাশি কলেজের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিকেও নজর রাখতে বলা হয়েছে।
এ দিনের ঘটনায় শুভায়ু সাহা গোষ্ঠীর তরফে কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারড় সম্পাদক বিজয় পাল-সহ মোট ছ’জনের বিরুদ্ধে বর্ধমান থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। শুভায়ুবাবু অভিযোগ করেন, কলেজে ভাঙচুর চালিয়েছে সন্তোষের অনুগামীরাই। টিএমসিপি-র রাজ কলেজ ইউনিট সম্পাদক শেখ মাখনের দাবি, সন্তোষদের জন্যই কলেজের পঠনপাঠনের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। সন্তোষবাবুর অবশ্য পাল্টা দাবি, “ভাঙচুরের ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না।”
বর্ধমান থানার আইসি দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য কলেজে বিপুল ভাঙচুরের অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, “মাত্র পাঁচ-সাত মিনিটের মধ্যে কিছু ছাত্র নোটিস বোর্ডের কাঁচ ভেঙে পালিয়েছে। গোলমালের খবর পেয়েই আমি কলেজে গিয়েছিলাম। কয়েক জনের নামে অভিযোগ হয়েছে। তাদের খোঁজ চলছে।” |