পুরোনো বেহাল সেতু বদলে নতুন সেতু গড়তে উদ্যোগী হল পূর্ত দফতর। দুর্গাপুর-বাঁকুড়া রোডে ডিভিসির বর্ধমান সেচখালের উপর পঞ্চাশের দশকে এই সেতুটি গড়েছিল সেচ দফতর। তারপর থেকে ছোটখাট মেরামতি করা হলেও দিনে দিনে ভারি যানবাহন চলাচলে বেহাল হয়েছে সেতু। বৃহস্পতিবার রাজ্যের পূর্ত মন্ত্রী সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার দুর্গাপুরে বলেন, “নতুন সেতু গড়ার জন্য ইতিমধ্যেই একবার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। কিন্তু সন্তোষজনক সাড়া না মেলায় পরিকল্পনায় কিছু রদবদল করে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
দুর্গাপুর থেকে সরাসরি বাঁকুড়া যাওয়ার একমাত্র রাস্তা এটি। আগে গুটিকতক যানবাহন চলাচল করলেও ক্রমে রাস্তাটি শুধু বর্ধমান ও বাঁকুড়া জেলা নয়, উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম সংযোগকারী রাস্তা হয়ে উঠেছে। গত কয়েক বছরে দামোদরের দুই পাড়ে দুর্গাপুর ও বড়জোড়ায় বহু নতুন কারখানা গড়ে উঠেছে। সেই সমস্ত কারখানায় মাল নিয়ে যাওয়া আসার কাজে ব্যবহৃত ভারি লরিগুলিও এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। এছাড়া দুর্গাপুরে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, হোটেল, শপিং মল, মাল্টিপ্লেক্স, বেসরকারি সংস্থার অফিস গড়ে ওঠায় শহরে আসা গাড়ির সংখ্যাও বেড়েছে বহুগুণ। সব মিলিয়ে সেতুটির উপর অনেকটাই চাপ পড়ছে। |
সেতুটির দশা বলতে রেলিং ভগ্নপ্রায়, ক্ষয়ে গিয়েছে কংক্রিটের মেঝেও। বহুবার নতুন করে তাপ্পি দেওয়া হলেও তা টেকে না। সেতুটি বসে যাওয়ায় দু’পাশের সংযোগকারী রাস্তা থেকে তা বেশ কিছুটা নেমে গিয়েছে। ফলে সেতুতে উঠতে সমস্যায় পড়ে ধীরগতির যানবাহন। বর্ষায় সেতুর খানাখন্দে জল জমে হাল আরও খারাপ। অহরহ আটকে পড়ছে সাইকেল, রিক্সা বা ছোট গাড়ি। ফলে যানজট লেগেই থাকে সবসময়।
সেতুটি দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে সেচ দফতরের দামোদর হেড ওয়ার্কস ডিভিশন। দশ টনের বেশি ভারি যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ বলে বোর্ডও ঝুলিয়েছে তারা। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করেই ভারি লরির চলাচল লেগে থাকে। আশঙ্কা, যে কোনও সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এলাকাবাসীরা বারবার সেতুটির বেহাল দশার কথা জানিয়ে নতুন সেতুর দাবি করলে সেচ দফতর নতুন সেতু গড়তে অপারগতা জানায়। তখন পূর্ত দফতর পুরোনো সেতুটির পাশেই একটি নতুন সেতু গড়ার উদ্যোগ নেয়। বছর দুয়েক আগে মাটি পরীক্ষার কাজ শুরু হয়। কিন্তু তারপরেই থমকে যায় নতুন সেতু গড়ার কাজ।
বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরে বাঁকুড়া রোডে রেল লাইনের উপরে রোড ওভার ব্রিজ নির্মাণের অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে এসেছিলেন পূর্তমন্ত্রী। তৃণমূল কাউন্সিলর বিশ্বনাথ পাড়িয়াল পূর্তমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন বেহাল সেতুটি নিজের চোখে দেখার জন্য। মন্ত্রী সেতুটির বর্তনাম অবস্থা দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, নতুন সেতু গড়ার প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
মন্ত্রীর এমন আশ্বাসে খুশি বাসিন্দারা। কাউন্সিলর বিশ্বনাথবাবু বলেন, “দীর্ঘদিনের আশা পূরণ হল এলাকাবাসীর।” |