আর্থিক সমস্যায় ধুঁকতে থাকা উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমকে (এনবিএসটিসি) নিজের পায়ে দাঁড়াতে আয় বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। সংস্থা সূত্রের খবর, শুধু পরিষেবার মাধ্যমে আয় বাড়ানো নয়, পরিকাঠামোর রক্ষণাবেক্ষণের খরচও নিজেদের তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়েই তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাসের বেসরকারি বাসের পার্কিং ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। সংস্থার আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, “বাস মালিকেরা হিলকার্ট রোডের মত এলাকা ব্যবহার করে সামান্য পার্কিং ফি দিচ্ছেন। সংস্থার যা আর্থিক অবস্থা তাতে বেসরকারি বাসের ওই এলাকাটি কোনও সংস্থাকে ‘লিজে’ দেওয়া হলে প্রায় কোটি টাকা বছরে আয় হতে পারে। সেখানে বাড়তি ফি দিয়ে বাস মালিকদেরই উত্তরবঙ্গের এই সংস্থাকে বাঁচানোর লড়াই-এ সাহায্য করা উচিত।” কাল, বৃহস্পতিবার শিলিগুড়িতে পার্কিং ফি নিয়ে সংস্থার ম্যানেজিং ডাইরেক্টর সি মুরুগন বাস মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেখানে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হবে। এনবিএসটিসি-র শিলিগুড়ির ডিভিশনাল ম্যানেজার উত্তম গণ বলেন, “টার্মিনাসের বেসরকারি বাসের স্ট্যান্ডের জন্য আমাদের যা খরচ হয় তা পার্কিং ফি থেকে আদায় হয় না। কর্মী বেতন, রক্ষণাবেক্ষণের খরচ রয়েছে। ৮ বছর পার্কিং ফি বাড়ানো হয়নি। তাই ফি বাড়াতে বলা হয়েছে।” সংস্থার কয়েকজন অফিসার জানিয়েছেন, তেনজিং নোরগে টার্মিনাসের বিদ্যুৎ খরচ বাদে ১ লক্ষ টাকা খরচ হয়। এর অর্ধেক (৫০ হাজার টাকা) খরচ বেসরকারি বাসের এলাকার জন্য ধরা হয়। পার্কিং ফি আদায় এবং টার্মিনাস দেখভালের জন্য ৩ জন কর্মী আছেন। তাঁদের মাসে বেতন প্রায় ৬০ হাজার টাকা। রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ প্রায় ২৫ হাজার টাকা প্রতি মাসে মিলিয়ে প্রায় ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকার মোট খরচ হয়। সেখানে গত জুনে পার্কিং ফি বাবদ আয় হয় ১ লক্ষ ৯ হাজার টাকা। মে মাসের আদায় ১ লক্ষ ১৯ হাজার টাকা। কমবেশি ১৮০ মত বাস থেকে রোজ ওই ফি আদায় করা হয়। নতুন বিজ্ঞপ্তি অনুসারে বড় মাসের থেকে দুই ঘণ্টায় ৬০ টাকা এবং মিনিবাসের ক্ষেত্রে ৫০ টাকা কার্যকরি করা হলে টাকা আদায় প্রায় দ্বিগুণ হবে। এই প্রসঙ্গে নর্থবেঙ্গল প্যাসেঞ্জার ট্রান্সপোর্ট ওর্নাস কো-অর্ডিনেশন কমিটির সম্পাদক প্রণব মানি বলেন, “ফি বাড়ালে আপত্তি নেই। আমরা এনবিএসটিসিকে সাহায্য করতে চাই। তবে চিঠি দিয়ে হুটহাট ফি বাড়ানোটা ঠিক নয়। দুইপক্ষের মধ্যে চুক্তি থাকা প্রয়োজন। তাতে প্রতি বছর সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে ফি বাড়ানো যেতে পারে।” বর্তমানে এনবিএসটিসি মাসে প্রায় ১১ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। সেখানে আসের পরিমাণ প্রায় ৬ কোটির টাকার মত। প্রতি মাসে সরকার ৫ কোটি টাকা করে ভর্তুকি দিচ্ছে। আগামী দিনে এই ভর্তুকি ধীরে ধীরে বন্ধ করা হবে বলে সরকারের তরফে জানানো হয়েছে। সেখানে সংস্থার নিজস্ব সম্পত্তির ব্যবহার করে আয় বাড়ানো ছাড়া কোনও উপায় নেই। ইতিমধ্যে তেল সংস্থাগুলির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে পেট্রোল পাম্প খোলা, ফাঁকা জমিতে এটিএম, মোবাইল টাওয়ার বসানোর জন্য ভাড়া দিচ্ছে সংস্থা। |