সুটিয়া গণধর্ষণ-কাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী বরুণ বিশ্বাসকে খুনের অভিযোগে ধৃতদের বনগাঁ আদালত চত্বর থেকে ‘ছিনিয়ে নেওয়ার’ চেষ্টা করল উত্তেজিত জনতা। পুলিশের গাড়িতে উদ্দাম চড়-থাপ্পড়-লাথি পড়ে। কোনও মতে অভিযুক্তদের সরায় পুলিশ। এ দিকে, সুটিয়া গণধর্ষণ-কাণ্ডের ‘গুরুত্ব বুঝে’ রাজ্য মানবাধিকার কমিশন গণধর্ষণ-কাণ্ডের তদন্ত শুরু করছে বলে জানিয়েছেন কমিশনের যুগ্মসচিব সুজয় হালদার।
মঙ্গলবার দুপুরে সুটিয়া থেকে হাজারখানেক মানুষ গাড়ি ভাড়া করে, প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন নিয়ে এসেছিলেন আদালত চত্বরে। দোষীদের ‘চূড়ান্ত শাস্তি’র দাবি তোলেন তাঁরা। পুলিশ সূত্রের দাবি, তাঁদেরই একাংশ এ দিন বরুণ-হত্যায় ধৃতদের ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। সরকারি আইনজীবী সমীর দাস জানান, ধৃত দেবাশিস সরকার, বিশ্বজিৎ বিশ্বাস, রাজু সর্দার ও শুভঙ্কর বিশ্বাসকে ১০ দিন রেল পুলিশের হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বনগাঁর এসইজেএম মধুমিতা রায়। বরুণ-হত্যার দিনেই ওই ঘটনায় গাইঘাটার আর এক দুষ্কৃতী ভীম বিশ্বাস ধরা পড়েছিল। ভীমকে ১৪ দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। খুনের অভিযোগে একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রকেও ধরেছে পুলিশ। তবে সে নাবালক কি না, তা নিয়ে ‘বিভ্রান্তি’ দেখা দেওয়ায় আদালতের নির্দেশে ছেলেটিকে রাখা হয়েছে বনগাঁ উপসংশোধনাগারের ‘নিরাপদ হেফাজতে’। আজ, বুধবার তার বয়সের শংসাপত্র খতিয়ে দেখে বিচারক পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবেন। |
২০০০ সাল নাগাদ সুটিয়ায় একাধিক মহিলাকে গণধর্ষণ করেছিল দুষ্কৃতীরা। কিন্তু দুষ্কৃতীদের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাননি কেউ। পরে বরুণবাবুরা স্থানীয় মানুষকে সংগঠিত করে ‘প্রতিবাদী মঞ্চ’ গড়ে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে সরব হন। গ্রেফতার হয় বেশ কয়েক জন। ৬ জন দাগি দুষ্কৃতীর যাবজ্জীবন হয়। গণধর্ষণের বেশ কিছু মামলা এখনও বিচারাধীন। বেশির ভাগ মামলাতেই অন্যতম সাক্ষী ছিলেন মিত্র ইন্সটিটিউশনের (মেন) শিক্ষক বরুণ।
রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের যুগ্ম সচিব সুজয়বাবু এ দিন জানান, এডিজি পদমর্যাদার অফিসার কে পি পি রাওকে সুটিয়া গণধর্ষণের ঘটনার তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুজয়বাবু জানান, তদন্তে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে, কমিশন তার বিরুদ্ধে সরাসরি আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।
এই মামলায় ধৃত দেবাশিস সরকার গোপালনগরের নহাটা কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ পরিচালিত ছাত্র সংসদের ক্রীড়া সম্পাদক। বিষয়টি ‘ছাত্র সমাজের কাছে কলঙ্কজনক’ বলে এ দিন প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মন্তব্য করেছেন এসএফআইয়ের রাজ্য নেতৃত্ব। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল পর্যবেক্ষক তথা মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক অবশ্য দাবি করেছেন, কয়েক মাস আগেই সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয় দেবাশিসকে। |