সমবায়ে ‘নয়-ছয়’,অভিযুক্ত সম্পাদক
ণ না-নিয়েও ৩ লক্ষ টাকা ঋণের বোঝা চেপেছে হাসপাতালের নার্স চিন্ময়ী মুখোপাধ্যায়ের নামে!
আড়াই লক্ষ টাকা ঋণ পরিশোধ হয়ে গিয়েছিল ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসেই। হঠাৎ হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট চিত্তরঞ্জন পাল দেখছেন, তাঁর নামে ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা ঋণের বোঝা! ২ লক্ষ টাকা ঋণ পরিশোধ করতে করতে বাকি ঠেকেছিল ২৮ হাজারে। কিন্তু হিসেব বলছে হাসপাতালের আর এক ফার্মাসিস্ট শক্তিরঞ্জন ভট্টাচার্যের বকেয়া ঋণের পরিমাণ নাকি ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা!
এ হেন ভূতুড়ে-কাণ্ডে হিজলি গ্রামীণ হাসপাতালের কর্মী-সমবায়ের অর্থ তছরূপের অভিযোগ উঠেছে সমবায়েরই সম্পাদক তথা হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী সৌমেন দে-র বিরুদ্ধে। বিষয়টি জানাজানি হতেই শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ওই কর্মী পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাঁর বাড়িতে গিয়েও দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ হাসপাতাল-কর্মীদের। ফলে মাথায় হাত পড়েছে সকলেরই। আরও কতজনের নামে এমন হয়েছে তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় কর্মীরা। সমবায়ের সভাপতি প্রদীপ ভুঁইয়া বলেন, “হঠাৎ এই ধরনের বিষয় নজরে আসে গত সপ্তাহে। সমবায়ের সমস্ত সদস্য ও হাসপাতালের কর্মীদের বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে কেউ এমন কাজ করতে পারেন ভাবতেও পারছি না। সমবায়ের মাধ্যমে যে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়া হত সেই ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাঁদের পরামর্শ মতোই আমরা চলব। কোনও কর্মী হয়রান হবেন, তা মেনে নেব না।” হাসপাতালের কর্মী-সমবায়ের মাধ্যমেই কর্মীরা বিদ্যাসাগর কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে নানা কারণে ঋণ নিতেন। আবার নিজেদের সমবায়ের মাধ্যমেই পরিশোধও করতেন। বিদ্যাসাগর কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের জেনারেল ম্যানেজার বিবেক সেন বলেন, “হাসপাতালের সমবায়ের সম্পাদক অর্থ তছরূপ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। তার পরেই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” জেনারেলে ম্যানেজারের কথায়, “প্রাথমিক ভাবে যা জানতে পেরেছি তা থেকে মনে হচ্ছে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার মতো নয়ছয় হয়েছে। সব দিক খতিয়ে দেখার পরেই বোঝা যাবে কত টাকা কী ভাবে নয়ছয় করা হয়েছে।”
নিজেদের স্বার্থেই সমবায় তৈরি করেছিলেন হিজলি গ্রামীণ হাসপাতালের কর্মীরা। প্রায় ৮ বছর ধরে সমবায়টি ভালই চলছিল। সমবায়ে সদস্যের সংখ্যা প্রায় ৬৫। সমবায়ের সম্পাদকের সিদ্ধান্ত মতোই কর্মীদের ঋণ দিতেন বিদ্যাসাগর কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক। যাঁর নামে ঋণ দেওয়া হবে তাঁর চাকরির মেয়াদ কতদিন, মাসে কত মাইনে পানসেটাই দেখত ব্যাঙ্ক। ব্যাঙ্কের জেনারেল ম্যানেজারের কথায়, “যিনি ঋণ নেবেন তিনি যেহেতু সমবায়ের মাধ্যমে এসেছেন, আমরা শুধু দেখতাম তাঁর মাইনে কত, কতদিন চাকরি রয়েছে। সে দিক থেকে অসুবিধা না হলে ঋণ দিয়ে দেওয়া হত। সমবায়ের সম্পাদক যদি সই জাল করে, নথি জোগাড় করে ঋণ নিয়ে নেন এবং টাকা তুলে নেন--কারও কিছু করার থাকে না। একই ভাবে পরিশোধের টাকাও আত্মসাৎ করতে পারেন।” এ ক্ষেত্রে সম্পাদক সে-রকমই করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
হাসপাতালের নার্স চিন্ময়ী মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমি কোনও ঋণই নিইনি। এখন সমবায়ের নথি বলছে, আমার নামে ৩ লক্ষ টাকা ঋণ রয়েছে! এটা কী ভাবে সম্ভব।” ফার্মাসিস্ট চিত্তরঞ্জন পাল বলেন, “হাসপাতালের সমবায় থেকে ২০০৮ সালে আমি আড়াই লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসেই ঋণ পরিশোধ করে দিয়েছি। এখন ব্যাঙ্কের নথি বলছে, আমার নাকি এখনও ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা বাকি রয়েছে!” একই ভাবে অন্য ফার্মাসিস্ট শক্তিরঞ্জন ভট্টাচার্যের কথায়, “আমি ২ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। আর মাত্র ২৮ হাজার টাকা বাকি থাকার কথা। কিন্তু ব্যাঙ্কের নথি বলছে, আমার ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা নাকি বাকি রয়েছে!” তাঁদের দাবি, তাঁরা সকলেই হাসপাতালের সমবায়ে টাকা জমা দিয়েছেন। তাঁর যাবতীয় রসিদও রয়েছে। কিন্তু সে টাকা আসল জায়গায় পরিশোধ করা হয়নি। কেন কর্মীরা ঋণ পরিশোধ করছেন না--তার তদন্তে নেমেছিল বিদ্যাসাগর কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক। তখনই গোলমালের বিষয়টি জানাজানি হয়। তার পর থেকেই সম্পাদক সৌমেন দে বেপাত্তা। হাসপাতালের বিএমওএইচ পম্পা রায় বলেন, “কর্মীদের সমবায়। টাকা লেনদেনের ব্যাপারে হাসপাতাল প্রশাসনের সঙ্গে কোনও যোগ নেই। তবু আমরা বিষয়টি নজরে রেখেছি। সৌমেন দে নামে কর্মীটি অসুস্থতার কথা জানিয়ে ছুটি নিয়েছেন। দেখি কত দিন পরে কাজে যোগ দেন।” ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তদন্তের পরে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.