|
|
|
|
চোদ্দো মাস বন্ধ থাকার পরে কেশপুরের অফিস খুলল সিপিএম |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কেশপুর |
১৪ মাস পরে কেশপুরের আনন্দপুরে বন্ধ লোকাল কমিটির অফিস খুলল সিপিএম। সেই কেশপুর, যা এক সময় ছিল তাদের ‘দুর্গ’। গত বছর বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরে-পরেই যে কেশপুরের ‘রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ’ পেয়েছিল তৃণমূল।
এ হেন কেশপুরে মঙ্গলবার দলীয় অফিস খোলার পরে সিপিএমের কর্মী-সমর্থকদের উল্লাস ছিল চোখে পড়ার মতো। মহিলাদের সামনে রেখে মিছিল করে এ দিন তালা ভেঙে অফিসের ‘দখল’ নিলেন সিপিএম নেতৃত্ব। প্রাক্তন মন্ত্রী নন্দরানি দল, জোনাল সদস্য রুবি রায়-রা স্থানীয় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলনও করলেন। কর্মী-সমর্থকেরা নাচলেন অফিসের সামনে। কেউ কেউ দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে ছাদে উঠে পড়লেন। দলীয় কার্যালয়ের ভিতরে থাকা ধুলোপড়া ছবিগুলিকে সযত্নে মুছতে দেখা গেল কিছু কর্মীকে। নন্দরানির বক্তব্য, “আরও যে-সব কার্যালয় জোর করে বন্ধ করা হয়েছে, সেগুলিও একে একে খোলা হবে। বহু আন্দোলন করেই আমরা এই জায়গায় এসেছি। সাধারণ মানুষ আমাদের পাশেই রয়েছেন।”
কেশপুরে দলীয় দ্বন্দ্বে জেরবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের অস্বস্তি এই ঘটনায় আরও বাড়ল বলেই মনে করা হচ্ছে। বিধানসভা ভোটের পরেই দলে-দলে সিপিএম নেতা-কর্মীরা এলাকা ছাড়া হয়েছিলেন। |
|
পার্টি অফিস খোলায় দলীয় কর্মীদের উচ্ছ্বাস। কেশপুরে। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ |
বন্ধ হয়েছিল একের পর এক পার্টি অফিস। কিন্তু চোদ্দো মাসের মধ্যেই নব্য-শাসক দলের প্রায় প্রতিদিনের গোষ্ঠী-সংঘর্ষ, অশান্তি, একাধিক গোষ্ঠীর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে তোলা আদায়ের অভিযোগসব মিলিয়ে কেশপুরে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধছিল।
এখনও সেখানে গোষ্ঠী-সংঘর্ষে গুলি চলে, তির ছোড়া হয়। আগুন লাগানো হয় বাড়িতে, হয় লুঠপাট। প্রশাসনকে ১৪৪ ধারাও জারি করতে হয়েছে। অশান্তিতে ব্যাহত উন্নয়নও। এই প্রেক্ষিতেই জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব সোমবার পরিদর্শকদল পাঠিয়েছিলেন কেশপুরে। সেই পরিদর্শকেরাও ব্লকস্তরে দলীয় নেতাদের উপরে ‘অনাস্থা’ প্রকাশ করেছেন। শান্তি ও উন্নয়নের স্বার্থে বিডিও এবং থানার ওসি-কেই ‘ভালমন্দের দায়িত্ব’ নিতে বলেছেন। দলের ব্লক নেতাদের কথায় কান না দিয়ে ‘নিরপেক্ষ’ ভাবে কাজ করার জন্য ব্লক-প্রশাসনকে ভরসা জুগিয়ে এসেছেন জেলা তৃণমূলের পরিদর্শকেরা।
বস্তুত, শাসকদলের উপরে তৈরি হওয়া ‘ক্ষোভ’কে কাজে লাগিয়ে কেশপুরের অন্যত্রও রাজনৈতিক কাজকর্ম শুরুর চিন্তাভাবনা শুরু করেছে সিপিএম। পরিবর্তনের পরে জেলায় সিপিএমের মোট ১৪৫টি কার্যালয় বন্ধ হয়েছিল। কেশপুরেই ছিল ১০১টি। নিত্যনতুন মামলাতেও যুক্ত করা হয়েছিল এন্তাজ আলি-সহ কেশপুরের সব গুরুত্বপূর্ণ সিপিএম নেতাকে। প্রথম সারির নেতারা এখনও কেউ এলাকায় না ফিরলেও অনেক মামলাতেই বহু সিপিএম কর্মী জামিন পেয়েছেন। তাঁরা এলাকায় ফিরতেও শুরু করেছেন।
তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক আশিস চক্রবর্তীর দাবি, “শান্তি বিঘ্নিত করার চেষ্টা চলছে। সাধারণ মানুষ সিপিএমের সঙ্গে নেই। বাইরের লোকজন এনেই এ দিন ওরা আনন্দপুরে পার্টি অফিস খুলেছে।” সোমবার তিনিই তৃণমূলের পরিদর্শকদলের তরফে কেশপুর ঘুরে এসে বলেন, “আমাদের ব্লক-নেতৃত্ব দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর চিন্তাভাবনাকে কেশপুরে প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। ফলে দলেরও কিছু বদনাম হচ্ছে।” শুধু আশিসবাবুই নন, তৃণমূলের অনেক জেলা নেতাই মানছেন, ব্লকস্তরে দলের কর্মী-সমর্থকদের ‘আচরণে’ আইনের শাসন বিঘ্নিত হচ্ছিল। এই অভিযোগগুলিই এক বছর ধরে করে এসেছে সিপিএম।
|
|
|
|
|
|