ইডেনে আইপিএলের বক্স নিয়ে পুরনো বিতর্কের জের |
সিএবি-তে চাঞ্চল্য সচিবের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানায় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
সিএবি নির্বাচনের ঠিক আঠারো দিন আগে হঠাৎই নতুন মোড়। মঙ্গলবার ব্যাঙ্কশাল আদালত থেকে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হল সিএবি-র যুগ্মসচিব বিশ্বরূপ দে-র নামে। সকাল থেকেই এই নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে সিএবি। গ্রেফতার এড়াতে তড়িঘড়ি সব আইনি দিক খতিয়ে দেখা শুরু হয়। ঠিক হয়েছে, নামী কোনও আইনজীবির সাহায্য নিয়ে আদালতে যাওয়া হবে। আপাতত গ্রেফতার এড়াতে বেসরকারি ভাবে দিন সাতেক সময় পাচ্ছেন সিএবি সচিব। গোটা ঘটনায় সিএবি-তে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, নির্বাচনের ঠিক আগে জটিলতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই হঠাৎ করে এমন মামলার উৎপত্তি। সন্ধেয় ক্ষুব্ধ সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া বলে দিলেন, “এটা কী হচ্ছে? আমরা এর শেষ দেখে ছাড়ব। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আদালতে যাব এটা নিয়ে।”
ঘটনার সূত্রপাত, ২০১০ সালের আইপিএলে ইডেন গার্ডেন্সের সুপার হসপিট্যালিটি বক্সকে ঘিরে। সে বছর আইপিএলের আগে ইডেনে শাহরুখ খান ও তাঁর বিশেষ অতিথিদের জন্য যা তৈরি করা হয়েছিল। ওই সময় কাঠামো প্লাইউডের তৈরি বলে তা প্রথমে দমকলের অনুমোদন পায়নি। সেই নিয়ে কেকেআর এবং দমকলের মধ্যে তীব্র অশান্তিও বাঁধে। তখনই ময়দান থানায় সিএবি-র বিরুদ্ধে দমকল আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। পরে সিএবি ও কেকেআর কর্তৃপক্ষ দমকলের সমস্যা মিটিয়ে নেয় এবং নতুন করে তৈরি হয় হসপিট্যালিটি বক্স। যা দমকলের সরকারি ছাড়পত্রও পেয়েছিল। ছাড়পত্র দিয়েছিল রাজ্যের পূর্ত দফতরও। দমকলের এডিজি দেবপ্রিয় বিশ্বাস স্বয়ং এই তথ্য স্বীকার করে নিয়েছেন। তা হলে এত দিন পরে হঠাৎ এই মামলার উদ্ভব কেন, এই প্রশ্ন উঠছে। দমকলের কর্তারা জানাচ্ছেন, সব মিটে গেলেও ছাড়পত্র দেওয়ার পরে থানায় গিয়ে যে এফআইআর প্রত্যাহার করতে হবে এ কথা কলকাতা পুলিশ জানায়নি। আবার লালবাজারে কলকাতা পুলিশের এক কর্তা জানান, পুলিশ কাউকে এফআইআর প্রত্যাহারের পরামর্শ দিতে পারে না। এখন যা পরিস্থিতি, মামলার নিষ্পত্তি হবে আদালতে। স্বয়ং সচিবকে আদালতে হাজিরা দিয়ে জামিন নিতে হবে।
মঙ্গলবার সিএবি সচিবের কাছে মামলার যে তথ্য এসে পৌঁছেছে, তাতে বলা হয়েছে মামলার বাদী ও বিবাদী পক্ষ যথাক্রমে রাজ্য সরকার ও বিশ্বরূপ দে। কিন্তু সিএবি কর্তাদের বক্তব্য, যে সুপার হসপিট্যালিটি বক্স তৈরি করেছিল কেকেআর। সেখানে সিএবি-র কোনও ভূমিকা ছিল না। তা হলে কেকেআরকে উপেক্ষা করে সিএবি সচিবের নামে পরোয়ানা কেন? এটি একটি সংগঠন। এখানে কোনও একজন ব্যক্তিবিশেষকে, যিনি পদাধিকার বলে সচিব, তাঁকে একা অভিযুক্ত করা হচ্ছে কেন? তা ছাড়া দু’বছর পরে হঠাৎ কী এমন হল যে এখন অস্তিত্বহীন একটা কাঠামো নিয়ে একেবারে গ্রেফতারি পরোয়ানা পাঠাতে হচ্ছে?
তাই প্রশ্ন, নির্বাচনী অঙ্কই এই গ্রেফতারি পরোয়ানার নেপথ্যে থেকে গিয়েছে কি না। মঙ্গলবার সন্ধেয় এ নিয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলতে চাননি সিএবি প্রেসিডেন্ট। ডালমিয়ার বক্তব্য, “আন্দাজে এ নিয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না। বরং মন্তব্য করলে কিছু লোক তার অন্য ব্যাখ্যা করবে।” তবে অভিযুক্ত বিশ্বরূপ দে বলছেন, “লোকে তো নির্বাচনী অঙ্কই তুলে আনছে এর পিছনে। তবে এ ভাবে ধাক্কা দিয়ে লাভ নেই। কারণ ধাক্কা সামলাতেও আমরা জানি। তবে যা চলছে, তাতে লোকে আর মাঠ-ময়দান করতে চাইবে না।” ঘটনা জানতে চেয়ে সারা দিনই অসংখ্য ফোন এসেছে সিএবি সচিবের কাছে। এসএমএস পাঠান সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও। ও দিকে, মহাকরণে বসে ঘটনা নিয়ে রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “সিএবি একটি স্বশাসিত সংস্থা। এটা ওদের নিজেদের ব্যাপার। এ নিয়ে সরকারের কিছু করণীয় নেই।” নিজের অফিসে বসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুলতান আহমেদও বলছিলেন, “সিএবি-র নির্বাচনী অঙ্ক এ সবের পিছনে নেই। তবে কিছু একটা ঘটেছে। নইলে আর এ রকম পরোয়ানা আসবে কেন?”
নির্বাচনী হাওয়া বলছে, কোনও রকম প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই এ বারও প্রেসিডেন্ট থেকে যাচ্ছেন ডালমিয়া। তবে আগামী ২৮ জুলাই বার্ষিক সাধারণ কোন দু’জন সচিব হিসেবে আসবেন, তা নিয়ে এখনও জল্পনা অব্যাহত। সম্প্রতি সরকার জেলা সংস্থাগুলি ভেঙে দিয়ে নির্দেশ জারি করায় তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছিল এবং আদালতে সরকারি নির্দেশ খারিজ হয়ে যায়। ১৮টি জেলা সংস্থার ভোট দখলই ওই নির্দেশের পিছনে ছিল কি না, তা নিয়ে তখন প্রশ্ন উঠেছিল। |