‘দলকে দিশা দেখাচ্ছেন না রাহুল’
খুরশিদের মন্তব্যে অস্বস্তি বাড়ল কংগ্রেসের
রাহুল গাঁধী ও প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ সম্পর্কে মন্তব্য করে বিতর্কের মুখে পড়লেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদ। তাঁর মন্তব্য ঘিরে অস্বস্তি এড়াতে মরিয়া কংগ্রেস দ্রুত আসরে নামে। দলের চাপে সলমনও ‘আমার মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে’ বলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বিরোধীদের আক্রমণ থামানো যায়নি।
একটি সংবাদপত্রকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে সলমন বলেন, “রাহুল গাঁধী দলের নতুন প্রজন্মের নেতা। কিন্তু তিনি দলকে কোনও মতাদর্শগত দিশা দেখাচ্ছেন না।” একই সঙ্গে সলমন বলেন, “দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের সুশাসন ও রাজনীতির বিষয়টি একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে। অবিন্যস্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় এক মাত্র সনিয়া গাঁধীই ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারেন। তার পরেই প্রধানমন্ত্রী ঠিক মতো সরকার চালাতে পারবেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পরিস্থিতি শোধরানো সম্ভব নয়।”
দুর্নীতি থেকে সরকারের নীতি-পঙ্গুত্ব বিভিন্ন প্রশ্নে এমনিতেই চারদিক থেকে সমালোচনায় আক্রান্ত কংগ্রেস। তার উপর সরকার ও দলের দিশাহীনতা নিয়ে সলমনের মতো প্রবীণ নেতা প্রশ্ন তোলায় প্রচণ্ড অস্বস্তিতে পড়ে যান কংগ্রেস নেতৃত্ব। বিশেষ করে সলমনের মন্তব্যকে পুঁজি করে বিজেপি-সহ বিরোধীরা রাহুলকে নিয়ে প্রকাশ্যে আক্রমণাত্মক মন্তব্য করায় কংগ্রেসের অস্বস্তি বাড়ে। তা ছাড়া গাঁধী পরিবারের বিষয়টি কংগ্রেসের কাছে বরাবরই স্পর্শকাতর।
কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, এই অবস্থায় আজ সাতসকালেই সলমনকে ফোন করেন সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেল। সলমনকে তাঁর মন্তব্যের ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেন। হাইকম্যান্ডের নির্দেশের পর সলমনও দেরি করেননি। নিজের মন্তব্য ফিরিয়ে না নিলেও সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে সলমন জানান, তাঁর কথার ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীর কথায়, “কংগ্রেসের সামনে এখন বহু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তার মোকাবিলায় দলের নতুন প্রজন্মের নেতাদের তৈরি থাকা উচিত। আমি বিশ্বাস করি, দলের নতুন প্রজন্মের নেতাদের সেই যোগ্যতা রয়েছে। কিন্তু এই কথাটাই নেতিবাচক ভাবে তুলে ধরা হয়েছে।” এই বিভ্রান্তির জন্য সংশ্লিষ্ট সংবাদপত্রকেই আজ দায়ী করতে চেয়েছেন আইনমন্ত্রী।
অস্বস্তিতে পড়লেও কংগ্রেসের কোনও নেতাই আজ সলমনের মন্তব্য নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। তবে ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেসের একাধিক শীর্ষ নেতা যা বলেছেন, তা হল, সলমন খুব ভুল কিছু বলেননি! দলের নতুন প্রজন্মের নেতা হলেও এখনও দলকে সে ভাবে কোনও দিশা দেখাতে পারছেন না রাহুল। তবে কংগ্রেসের এক শীর্ষ সারির নেতার কথায়, “এই সব কথা দলের ভিতরে বললে কোনও সমস্যা ছিল না।” কংগ্রেসের একটি সূত্রের বক্তব্য, এই মন্তব্যের জন্য ভবিষ্যতে দলের মধ্যেই চাপে পড়তে পারেন সলমন।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে সলমন বলেছেন, “নব্বইয়ের দশকে যেমন আর্থিক উদারীকরণের নীতিকে সামনে এনে সময়োপযোগী মতাদর্শ দেশের সামনে রেখেছিল কংগ্রেস, এখন তেমনই নতুন মতাদর্শের প্রয়োজন।” এর পরেই রাহুল সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে রাহুলের উচিত সেই দিশা দেখানো। সন্দেহাতীত ভাবেই তিনি দলের দু’নম্বর ব্যক্তি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও কার্যকরী দায়িত্ব তিনি নিচ্ছেন না। তাই দল দিশাহীনতায় ভুগছে।”
স্বাভাবিক ভাবেই সলমনের মন্তব্যকে ‘কাজে’ লাগাতে দেরি করেননি বিজেপি নেতৃত্ব। দলের মুখপাত্র শাহনওয়াজ হুসেন বলেন, “এত দিন বিরোধী দলগুলি যে কথা বলে আসছিল, তা এ বার স্বীকার করে নিলেন কংগ্রেসেরই এক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। এই মুহূর্তে সনিয়া গাঁধী ও মনমোহন সিংহ কংগ্রেস ও সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ফলে সলমন যে দিশাহীনতার কথা বলেছেন, সেটা এই দু’জনের ব্যর্থতাই তুলে ধরল।” রাহুলকে কটাক্ষ করে বিজেপি-র এক নেতা বলেন, “রাহুল যে দায়িত্ব নিচ্ছেন না, তা ঠিক নয়। বহু বিষয়ে তিনি দায়িত্ব নিচ্ছেন। উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনেও দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং ব্যর্থও হয়েছেন!” শুধু বিজেপি নয়, ইউপিএ-র সমর্থক সমাজবাদী পার্টিও আজ রাহুলকে আক্রমণ করতে ছাড়েননি। সপা নেতা শাহিদ সিদ্দিকি বলেন, “সলমন ঠিই বলেছেন। আসলে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতাই রাহুলের নেই।”
এই অবস্থায় দশ জনপথ ঘনিষ্ঠ কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, “সনিয়া যখন সরকার ও কংগ্রেসের মধ্যে মতান্তর কমাতে সচেষ্ট, তখন কংগ্রেসের একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী হয়েও নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি করে ফেললেন সলমন।” এই অবস্থায় সলমনকে থামাতে পারলেও তাঁর মন্তব্য ঘিরে অস্বস্তির কাঁটা কংগ্রেস হাইকম্যান্ড কী ভাবে সামাল দেবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.