সরকারের খবরে আর নেই, ‘ছুটি’ নিলেন প্রণব |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
পেয়েছি ছুটি বিদায় দেহো ভাই। ১৩ নম্বর তালকোটারা রোডের বাড়িতে মঙ্গলবারের সন্ধের থিম যেন এটাই।
সন্দেহ নেই, এই প্রণব মুখোপাধ্যায়কে আগে দেখেনি দিল্লি। যিনি বলছেন, “অনেক সময়ই রূঢ় ব্যবহার করেছি আপনাদের সঙ্গে। ক্ষমা করবেন।” যিনি নিজে থেকে উপস্থিত অন্তত দেড়শো সাংবাদিক এবং চিত্র সাংবাদিকের সঙ্গে করমর্দন করছেন। এবং বলছেন, “সরকারের কোনও খবর আর পাবেন না আমার কাছ থেকে।”
দীর্ঘ চার দশকের সংসদীয় রাজনীতির ইনিংস ‘শেষ’ করে আজ সাংবাদিকদের ‘বিদায়’ জানালেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। প্রায় ঘণ্টা দেড়েকের অনুষ্ঠানে আগাগোড়া তাঁর মুখে লেগে রইল হাসি। ছোটবেলার কথা, রাজনৈতিক জীবন, পারিবারিক জীবন নিয়ে গল্প করতে করতে আবেগপ্রবণ হয়ে উঠেছেন বারবার। বলেছেন, “আপনারা আমার কাছ থেকে কী পেয়েছেন জানি না। কিন্তু আপনাদের সান্নিধ্যে থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি।” |
গোড়া থেকেই জানিয়ে রেখেছিলেন, “আর কোনও প্রশ্ন নয়। আজ শুধু ঘরোয়া আড্ডাই হবে।” কিন্তু প্রশ্ন তো ওঠারই ছিল। বিশেষ করে ইউপিএ-র অন্যতম শরিক তৃণমূল কংগ্রেস এখনও তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রণবের প্রতিদ্বন্দ্বী পি এ সাংমা তাঁর বিরুদ্ধে ক্রমাগত আক্রমণ শানিয়ে চলেছেন। আজ তো মুম্বইয়ে সাংমা এ-ও বলেছেন, “ব্যর্থ অর্থমন্ত্রীর জন্য আস্তাকুঁড় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে রাইসিনা হিলকে।” তবে প্রণববাবুর ‘লাভজনক পদ’ নিয়ে সাংমা শিবিরের অভিযোগপত্র এ দিন খারিজ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
সুতরাং প্রশ্ন ওঠা ঠেকানো যায়নি। কিন্তু প্রণব নিজে আজ সে সব এড়িয়েই যেতে চেয়েছেন। আর ক’দিন বাদেই যে তিনি রাইসিনা হিলসে পৌঁছে যাবেন, সে বিষয়ে কংগ্রেসের কারও মনে সংশয় নেই। প্রণববাবুও যে মানসিক প্রস্তুতি সেরে ফেলেছেন, সেটাই আজ প্রতিফলিত হয়েছে বারবার। প্রশ্ন উঠেছে, দিনে আঠারো ঘণ্টা কাজ করতে অভ্যস্ত প্রণব মুখোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি ভবনে একঘেয়ে বোধ করবেন না? প্রণববাবুর উত্তর, “এটা একটা লক্ষ টাকার প্রশ্ন বটে! আগে তো নির্বাচিত হই। তার পর বুঝতে পারব, ঠিক কী হচ্ছে!” তাঁর কথায়, “আসলে রাষ্ট্রপতি ভবন সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা সীমিত। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী হিসাবে বাজেট বা অর্থবিলে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর নিতে রাইসিনা হিলসে অনেক বার গিয়েছি। বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানের জন্যও যেতে হয়েছে। কিন্তু তার বেশি জানি না।”
দীর্ঘ চার দশকের সংসদীয় রাজনীতিতে তাঁর কাছে সব থেকে বড় প্রাপ্তি কী? জবাবে আজ দৃশ্যতই বিনীত প্রণব। বললেন, “কতটা সফল হয়েছি বা ব্যর্থ হয়েছি তার মূল্যায়ন আপনারা করবেন, মানুষ করবে। তবে এটুকু বলতে পারি, যা দিয়েছি তার থেকে ঢের বেশি পেয়েছি!” |