‘মরে’ গিয়েও গত ১৯ বছর ধরে গঙ্গায় ভাসছে জগাই। আর সেই ‘মরা’-র দায় নিয়ে ঢাকের দায়ে মনসা বিক্রি হওয়ার জোগাড় হয়েছে একটি সংস্থার।
জগাই হল গঙ্গা থেকে পলি তোলার জন্য ব্যবহৃত কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের একটি ড্রেজার। মাধাই নামে তার এক সঙ্গীও ছিল। দীর্ঘদিন হলদিয়া ডকের কাছে খারাপ হয়ে পড়ে থাকার পরে মাধাই নামের ড্রেজারটিকে টুকরো টুকরো করে কেটে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। জগাইকে ১৯ বছর আগে হাওড়ার বাঁধাঘাটের কাছে একটি বেসরকারি জাহাজ সারাই সংস্থার কাছে সারাতে দিয়েছিলেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু খরচ বেশি দেখে আর ফেরত নেয়নি। বছরের পর বছর পড়ে থেকে স্রেফ বাতিলের তালিকায় চলে গিয়েছে সেটিও।
ওই সংস্থা সূত্রে খবর, জগাই নামের ড্রেজারটি একবার নোঙর ছিঁড়ে চলে গিয়েছিল ব্যারাকপুরের দিকে। লঞ্চ পাঠিয়ে সেটিকে ধরে এনে ফের নোঙর করা হয়। বর্ষার বৃষ্টিতে নোঙর ছেঁড়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। কখনও আবার বাতিল ড্রেজারের ইস্পাত ও যন্ত্রাংশ চুরি করতে জলপথে হানা দেয় চোরেরা। তাই ২৪ ঘণ্টা নজর রাখতে হয়। ওই বেসরকারি সংস্থার ম্যানেজিং পার্টনার সুভাষ ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “এই ড্রেজারটি কার্যত গলগ্রহ হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের কাছে। শুধু ড্রেজারটি দেখভাল করতে আলাদা নিরাপত্তারক্ষী রাখতে হয়েছে। খরচ হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। কিন্তু ড্রেজারটি নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ নিচ্ছেন না বন্দর কর্তৃপক্ষ।”
|
কলকাতা বন্দর সূত্রে খবর, ১৯৭৪ ও ’৭৫ সালে পরপর দু’বছর ওই দু’টি ড্রেজার নিয়ে আসে কলকাতা বন্দর। গঙ্গা থেকে পলি তুলে জাহাজ যাতায়াতের পথ সুগম করত জগাই ও মাধাই। ওই ড্রেজার দু’টি হল ‘কাটার সাকশন ড্রেজার’ বা ‘সিএসডি ড্রেজার’। এদের কাজ ছিল গঙ্গার নীচ থেকে পলি কেটে তা সাকশন পাইপ দিয়ে বাইরে ফেলা। খারাপ হয়ে যাওয়ার পরে মাধাইকে মেরামতির জন্য পাঠানো হয় হলদিয়া ডকে। জগাইয়ের মেরামতির জন্য ১৯৯৩ সালের ২৮ জুন বন্দর কর্তৃপক্ষ বি কে ইঞ্জিনিয়ারিং নামে বাঁধাঘাটের ওই সংস্থাকে লিখিত ভাবে বরাত দেন। ওই সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, সারাইয়ের বরাত পাওয়ার পরে ড্রেজারটিকে সংস্থার ওয়ার্কশপে পাঠানো হয়। সে বছরই মেরামতি শুরু হয়। কিন্তু কিছু বছর কাজ চলার পরে ড্রেজারের যন্ত্রাংশ বদল নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ওই বেসরকারি সংস্থার মতবিরোধ হওয়ায় কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি নির্দেশ দেওয়া হয়, ড্রেজারের যে সব যন্ত্রাংশ ও ইঞ্জিন খুলে ফেলা হয়েছে বা অন্য সংস্থার কাছে পাঠানো হয়েছে সেগুলি এনে লাগিয়ে ড্রেজারটি ফেরত পাঠাতে।
১৯৯৫ সালে ওই নির্দেশ আসার পরে ওই সংস্থা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। সংস্থার ম্যানেজিং পার্টনার বলেন, “আদালত কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে ড্রেজারটি নিয়ে যেতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু সেটি আজও নিয়ে যাননি কর্তৃপক্ষ।”
কিন্তু প্রশ্ন হল, কেন ড্রেজারটি নিয়ে যাচ্ছেন না বন্দর কর্তৃপক্ষ? মেরিন বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, “জগাই নামের ড্রেজারটি মেরামত করতে গিয়ে দেখা যায় তার খরচ খুব বেড়ে গিয়েছে। ফলে সেটিকেও বাতিল করে দেওয়া হয়। যে সংস্থা ওই ড্রেজারটি সারাই করছিল, তার সঙ্গে আর্থিক জটিলতা হওয়ায় ড্রেজারটিকে এখনও গঙ্গাবক্ষ থেকে আনা যায়নি।” |