পুজোর আগেই খুলে দেওয়া হচ্ছে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোডের উড়ালপুলের ‘র্যাম্প’। কথা ছিল, দেড় বছরে এই কাজ শেষ হবে। কিন্তু সেই সময় বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় চার বছরে। ৪২৫ মিটার দীর্ঘ এই ‘র্যাম্প’-এর কাজ শুরু হয় ২০০৮ সালের শেষ ভাগে। কাজে দেরির জন্য প্রকল্প-ব্যয় নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১০ কোটি টাকার উপরে।
২০০৩-এর অগস্ট মাসে চালু হয় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ এ জে সি বসু রোড উড়ালপুল। খরচ হয়েছিল ১৩৯ কোটি টাকা। শুরুতেই ঠিক হয়, এই উড়ালপুলের একটি ‘র্যাম্প’ তৈরি হবে। তদারকি সংস্থা ‘হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্স’ (এইচআরবিসি)-এর ভাইস চেয়ারম্যান সাধনরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় এ কথা জানিয়ে বলেন, “তখন বিভিন্ন সমস্যার দরুণ জাপানি লগ্নি-সংস্থার সঙ্গে আলোচনার পরে এই র্যাম্প এবং পরিকল্পিত আরও দু’টি উড়ালপুলের প্রস্তাব কার্যকর না করার সিদ্ধান্ত হয়। বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখে ২০০৮ সালে ফের এ জে সি বসু রোড উড়ালপুলের র্যাম্প তৈরির সিদ্ধান্ত হয়।” খরচ ধার্য হয় ১৮ কোটি টাকা।
|
বিভিন্ন জটিলতায় অস্বাভাবিক সময় লেগেছে নাগেরবাজার উড়ালপুল তৈরির কাজে। এই দেরির জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও উষ্মা প্রকাশ করেছেন। নির্দিষ্ট সময় ধরে নগরোন্নয়ন প্রকল্পগুলির কাজ শেষ করতে বলেছেন তিনি। রাজ্যের দায়িত্ব নেওয়ার কিছু দিন বাদে তিনি নিজে এইচআরবিসি-তে গিয়ে তাদের অসম্পূর্ণ প্রকল্পগুলি যত দ্রুত সম্ভব শেষ করার নির্দেশ দেন। তার পরেই র্যাম্প তৈরির কাজ এগোতে থাকে দ্রুত গতিতে।
জেএনএনইউআরএম প্রকল্পে কেন্দ্র এই কাজের এক-তৃতীয়াংশ ব্যয় বহন করতে রাজি হয়। কিন্তু সময় বৃদ্ধির ফলে প্রস্তাবিত ব্যয় ১৮ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৮ কোটি টাকা। বাড়তি এই ১০ কোটি টাকার দায় কেন্দ্র নেবে না।
মূল উড়ালপুলের প্রায় মাঝামাঝি অংশ থেকে বার হওয়া ৬ মিটার চওড়া এই রাস্তাটি হবে একমুখী। রবীন্দ্র সদনের দিক থেকে যে সব গাড়ি পার্ক সার্কাসের দিকে যায়, র্যাম্পটি চালু হলে তাদের একাংশ সংলগ্ন কোনও রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারবে। উড়ালপুলের নীচের যানজট এড়িয়ে রেসকোর্সের দিক থেকে আসা গাড়ি র্যাম্প দিয়ে সহজে চলে যেতে পারবে শিয়ালদহের দিকে।
কিন্তু আইনি কোনও জট না-থাকা সত্ত্বেও কাজে এত দেরি হল কেন? নির্মাতা সংস্থার দাবি, র্যাম্পের ১১টি স্তম্ভ ও আনুষঙ্গিক নির্মাণকাজের জন্য রাস্তায় যে অংশের দরকার ছিল, তা পাওয়া যাচ্ছিল না। এইচআরবিসি-র বক্তব্য, ট্রাফিক পুলিশের কাছ থেকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় অনুমতি পেতে সময় লেগেছে। লালবাজারের ট্রাফিক-কর্তারা অবশ্য জানিয়েছেন, ২০০৮-এর ডিসেম্বর থেকে তাঁরা প্রকল্পের নির্মাণকাজের জন্য দফায় দফায় রাস্তায় স্থান বরাদ্দ করেছেন। যাত্রিবাহী বিভিন্ন বাস ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে লেনিন সরণি দিয়ে। ইউ এন ব্রহ্মচারী রোড এবং বেকবাগান রোড দিয়েও ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে বহু গাড়ি।
তবে ট্রাফিক-কর্তাদের একাংশের আশঙ্কা, র্যাম্পটি চালু হলে এ জে সি বসু রোড এবং শেক্সপিয়র সরণির সংযোগস্থলে অস্বাভাবিক যানজট হবে। কারণ, ওই মোড়ে এখনই প্রচুর যানজট থাকে। এইচআরবিসি-র কর্তারা অবশ্য জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে পুলিশ-কতৃর্র্পক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। বরং, র্যাম্পের উপর দিয়ে যান চলাচল শুরু হলে পার্ক সার্কাস মোড়ে গাড়ির চাপ কমবে বলে তাঁদের দাবি। |