যাত্রীর অভাবে এ শহর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে একের পর এক আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থা। দেশি বিমান সংস্থাগুলিও কলকাতাকে নিয়ে বিশেষ উৎসাহী নয়।
এ বার সেই তালিকায় যুক্ত হল একটি নামী হোটেল সংস্থার নামও। বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে তাদের যে অভিজাত লাউঞ্জটি ছিল, তা এ বার বন্ধ হতে চলেছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে ওই সংস্থা লিখিত ভাবে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছে। কলকাতা বিমানবন্দর যে লগ্নিকারীদের পছন্দের তালিকায় নেই, এই ঘটনায় আরও এক বার তা প্রমাণিত।
যাত্রীদের একাংশ যদিও মনে করেন, ওই লাউঞ্জ বন্ধ হওয়াটা কলকাতা বিমানবন্দরের পক্ষে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সাধারণ যাত্রীদের পক্ষে ‘শাপে বর’ হল। তাঁদের বক্তব্য, এগ্জিকিউটিভ শ্রেণির যাত্রীদের জন্য রাখা ওই বিলাসবহুল ‘ক্লিপার লাউঞ্জ’ ভেঙে ফেলতে পারলে অনেকটা জায়গা বেরোবে। সে ক্ষেত্রে লাইনে দাঁড়ানোর দুর্ভোগ কমবে যাত্রীদের। সকাল ও সন্ধ্যায় কলকাতার অভ্যন্তরীণ ভবন থেকে উড়ান ধরতে গিয়ে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। যার প্রধান কারণ, নিরাপত্তা বেষ্টনীতে যাওয়ার পথ প্রশস্ত নয়। এত দিন হোটেল সংস্থার সঙ্গে চুক্তি থাকায় ওই লাউঞ্জ ভাঙা যায়নি।
তা হলে এ বার কি ওই লাউঞ্জ ভেঙে ফেলা হবে? বিমানবন্দরের অধিকর্তা বি পি শর্মা অবশ্য বলেছেন, “এখনই ওই লাউঞ্জ ভেঙে ফেলার মতো কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।” |
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, লাউঞ্জের ভাড়া হিসেবে প্রতি মাসে ছ’লক্ষ টাকা করে দিত ‘ওবেরয় গ্রুপ’। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে শুধু এয়ার ইন্ডিয়া, জেট এবং কিংফিশারেরই এগ্জিকিউটিভ শ্রেণি রয়েছে। ওবেরয়দের সঙ্গে ওই তিন বিমান সংস্থার চুক্তি অনুযায়ী, বিমানে ওঠার আগে এগ্জিকিউটিভ শ্রেণির যাত্রীরা গিয়ে ওই লাউঞ্জে বসে বিশ্রাম নেবেন, খাওয়া-দাওয়া করবেন। এবং সেই বাবদ বিমান সংস্থা হোটেল কর্তৃপক্ষকে টাকা দেবে।
জানা গিয়েছে, তিন-চার বছর আগেও এগ্জিকিউটিভ শ্রেণির যাত্রী-সংখ্যা যথেষ্ট থাকায় মোটা টাকা ভাড়া দেওয়ার পরেও লাভ করত লাউঞ্জ। কিন্তু, জেট এবং এয়ার ইন্ডিয়ার এগ্জিকিউটিভ শ্রেণির যাত্রী-সংখ্যা গত দু’বছরে তলানিতে ঠেকেছে। কিংফিশার তাদের উড়ানই তুলে নিয়েছে। হোটেল সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে এয়ার ইন্ডিয়ার কাছ থেকে মাসে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা পাওয়া যেত। এখন মাসে সেই টাকার পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার। ওবেরয় গ্রুপের এক কর্তার কথায়, “এতটা লোকসান নিয়ে লাউঞ্জ চালানোর কোনও অর্থই নেই।” ওই লাউঞ্জের জন্য ওবেরয় গ্রুপের সঙ্গে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের চুক্তি গত ৩০ জুন শেষ হয়ে গিয়েছে। লোকসানের কারণ দেখিয়ে ওই চুক্তি পুনর্নবীকরণ করতে চায়নি তারা।
বিমানবন্দরের অধিকর্তা বি পি শর্মা বলেন, “ওই হোটেল সংস্থা লিখিত ভাবে আমাদের এ কথা জানিয়েছে। অন্য কোনও সংস্থাকে দিয়ে ওই লাউঞ্জটি পুনরায় চালু করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক ভবনেও ওবেরয় গ্রুপের একটি লাউঞ্জ রয়েছে। সেটির চুক্তিও এই বছরের ৩০ জুন শেষ হয়েছে। জানা গিয়েছে, মাসে পাঁচ লক্ষ টাকা ভাড়া গোনার পরে সেই লাউঞ্জ থেকেও নিয়মিত লোকসান হচ্ছে। কারণ হিসেবে ওবেরয় গ্রুপের এক কর্তা জানিয়েছেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, লুফ্ৎহানসা কলকাতা থেকে উড়ান তুলে নিয়েছে। যে সব নতুন উড়ান আসছে, তারা সকলেই বিভিন্ন সস্তার বিমান সংস্থার। তাদের এগ্জিকিউটিভ শ্রেণিই নেই। যদিও এখনই সেই লাউঞ্জ থেকে হাত গুটিয়ে নিচ্ছেন না ওবেরয় কর্তৃপক্ষ।
বিমান সংস্থাগুলির কাছ থেকে ইদানীং একটি যুক্তিই শোনা যায় কলকাতা ব্যবসা দিতে পারছে না। অন্য রাজ্যে যেখানে উড়ানের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, সেখানে কলকাতা থেকে নিয়মিত কমছে। তুলনায় ছোট রাজ্য কেরল এখন তাদের পঞ্চম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৈরিতে ব্যস্ত। তথ্য বলছে, সেখানে বিদেশি যাত্রী হু হু করে বাড়ছে। কলকাতায় বিদেশি যাত্রীর সংখ্যা তুলনায় নগণ্য। সম্প্রতি যে কয়েকটি নতুন বিমান সংস্থা শহরে এসেছে, তা সবই ‘সস্তার’। হংকং-এর প্রধান বিমান সংস্থা ‘ক্যাথে প্যাসিফিক’ নিজে না এসে পাঠিয়ে দিয়েছে সহযোগী সস্তার বিমান সংস্থা ‘ড্রাগন এয়ার’-কে। |