কলকাতা বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল থেকে পরীক্ষামূলক ভাবে প্রথম উড়ান চালানোর পরিকল্পনা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে যা খবর: তাতে আগামী ১৫ জুলাই বিমানযাত্রীরা প্রথম ওই টার্মিনাল ব্যবহারের সুযোগ পেতে চলেছেন। কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা বিপি শর্মার কথায়, “আপাতত একটা উড়ান চালিয়ে দেখে নেওয়া হবে, সব ব্যবস্থা ঠিকঠাক রয়েছে কি না।”
তবে উড়ানটি চালাবে কোন বিমানসংস্থা, তা চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন অধিকর্তা। বিমানবন্দর-সূত্রের খবর: প্রাথমিক ভাবে ইন্ডিগো-কে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যদিও তারা এখনও দিল্লির সবুজ সঙ্কেত পায়নি। পাশাপাশি জেট-এর সঙ্গেও কথা চলছে।
স্থির হয়েছে, পরীক্ষামূলক উড়ানটি অন্য শহর থেকে যাত্রী নিয়ে কলকাতায় নামবে। যাত্রীরা সোজা নতুন টার্মিনালে ঢুকবেন, কনভেয়ার বেল্টের মালপত্র তুলে বেরিয়ে আসবেন বাইরে। যে জন্য নতুন টার্মিনালের ‘অ্যারাইভাল’-এর সামনে রাস্তা বাঁধানোর কাজ চলছে পুরোদমে। উপরন্তু যাত্রীদের যাতে শহরে নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছতে অসুবিধে না-হয়, তা মাথায় রেখে বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ঠিক হয়েছে, বড় একটা বাস তৈরি থাকবে। বেশ কিছু ট্যাক্সিও রাখা হবে। পরীক্ষামূলক উড়ানের যাত্রীদের এ সব তথ্য বিমানসংস্থা আগাম জানিয়ে রাখবে। এটা স্বাভাবিক যে, কিছু যাত্রীকে আনতে বিমানবন্দরে গাড়ি যাবে। সেই গাড়িগুলোকে ওই দিন আলাদা ভাবে পথ দেখিয়ে নতুন টার্মিনালের সামনে নিয়ে যাওয়া হবে।
নতুন টার্মিনাল খুলবে কি আপাতত ওই এক দিনের জন্যই? বহির্গামী উড়ানের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহারের সম্ভাবনা এই মুহূর্তে কতটা? |
কলকাতায় এয়ারলাইন্স অপারেটিং কমিটি’র চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন সর্বেশ গুপ্ত বলেন, “এ মাসের শেষে আন্তর্জাতিক কোনও উড়ান কলকাতায় নামার পরে যাত্রীদের একই ভাবে নতুন টার্মিনাল ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া যায় কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে সে দিন ওখানে অভিবাসন ও শুল্কের কাউন্টার রাখা হবে।” বিমানবন্দরের এক অফিসারের যুক্তি, “কলকাতা থেকে অন্যত্র যাওয়ার উড়ান পরীক্ষামূলক ভাবে চালাতে গেলে চেক-ইন কাউন্টার, এক্স-রে মেশিন, নিরাপত্তার ব্যবস্থা, যাত্রীদের তল্লাশি-সহ বহু পরিকাঠামো প্রয়োজন। নতুন টার্মিনালে ও সব তৈরি হয়নি।” কর্তৃপক্ষের বক্তব্য: কলকাতায় এসে নামার পরে যাত্রীরা শুধু কনভেয়ার বেল্ট থেকে মালপত্র তুলে টার্মিনাল দিয়ে হেঁটে বেরিয়ে আসবেন। সে ক্ষেত্রে কনভেয়ার বেল্ট ও শৌচাগার-সহ কয়েকটি যাত্রী-পরিষেবা চালু করলেই হবে। নয়া টার্মিনালে ইতিমধ্যে দশটা কনভেয়ার বেল্ট বসে গিয়েছে। পরীক্ষার দিন একটা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ দিকে কথা রয়েছে যে, নতুন টার্মিনালে প্রতিটা উড়ান এসে এরোব্রিজের গায়ে দাঁড়াবে। যাত্রীদের বিমান থেকে সিঁড়ি বেয়ে নামতে হবে না। তাঁরা বিমানের দরজা দিয়ে এরোব্রিজের বারান্দা হয়ে সোজা টার্মিনালে পৌঁছে যাবেন। কিন্তু ঘটনা হল, এখনও একটা এরোব্রিজও এসে পৌঁছায়নি। তাই ‘পরীক্ষা’র দিন যাত্রীদের সাবেক নিয়মেই বিমানের সিঁড়ি বেয়ে নামতে হবে। কলকাতার এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-এর বিশেষ অনুমতিসাপেক্ষে বিমানটিকে পথ দেখিয়ে আনা হবে নতুন টার্মিনালের একেবারে গায়ে তৈরি পার্কিং বে-তে। যাত্রীদের বাসে চাপিয়ে টার্মিনালের সামনে নিয়ে আসার দরকার পড়বে না।
পরীক্ষামূলক উড়ান না হয় উড়বে শিগগির। কিন্তু নয়া টার্মিনাল পাকাপাকি ভাবে চালু হবে কবে?
এ ব্যাপারে নানা মহলের নানা মত। যেমন বিভিন্ন বিমানসংস্থার কর্তাদের একাংশের মতে, আগামী নভেম্বরের আগে নতুন টার্মিনাল পুরোপুরি চালু করা অসম্ভব। এর আগে নির্ধারিত সময়সীমা পূরণে কর্তৃপক্ষ তিন বার ব্যর্থ হয়েছেন, যা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বছরে বিমানমন্ত্রী অজিত সিংহ কলকাতায় এসে তাঁর সঙ্গে যখন দেখা করেন, তখন মমতা পুজোর আগেই টার্মিনাল চালু করার দাবি জানিয়েছিলেন। বিমানমন্ত্রীও বিমানবন্দরের কর্তাব্যক্তিদের সেই মতো নির্দেশ দিয়ে যান। বিমানসংস্থা মহলের অনুমান, ওই নির্দেশ পুরোপুরি কার্যকর করতে না-পারলেও পুজোর আগে যাতে কয়েকটি বিমানসংস্থা নতুন টার্মিনাল থেকে নিয়মিত উড়ান চালাতে পারে, সেই লক্ষ্যেই এই পরীক্ষামূলক উড়ান চালানোর পরিকল্পনা। |