পাঠভবনে ছাত্রী ‘নিগ্রহ’
শান্তিনিকেতনে নতুন ধারা অভিযুক্ত ওয়ার্ডেনের বিরুদ্ধে
ছাত্রী ‘নির্যাতনের’ ঘটনায় প্রবল অস্বস্তিতে পড়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ সোমবারই সাসপেন্ড করেছিলেন অভিযুক্ত হস্টেল ওয়ার্ডেন উমা পোদ্দারকে। মঙ্গলবারও ‘তৎপরতা’ দেখা গেল বিশ্বভারতীর তরফে। সক্রিয় হল বীরভূম জেলা পুলিশও।
শনিবার রাতে বিছানা ভিজিয়ে ফেলার ‘অপরাধে’ তার নিজেরই প্রস্রাব চাটানোর অভিযোগ উঠেছে পাঠভবনের ‘করবী’ ছাত্রী নিবাসের ওয়ার্ডেন উমাদেবীর বিরুদ্ধে। তার তিন দিন পরে, মঙ্গলবার বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ পাঠভবনের পঞ্চম শ্রেণির ওই ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। আদালতের ‘ভর্ৎসনা’র মুখে পড়ে জেলা পুলিশ এ দিনই অভিযুক্ত ওয়ার্ডেনের বিরুদ্ধে ‘প্রিভেনশন অফ জুভেনাইল জাস্টিস, কেয়ার অ্যান্ড প্রোটেকশন অ্যাক্ট’-এর ধারাটি মামলায় যুক্ত করার আবেদন জানাল। বোলপুরের এসিজেএম পীযূষ ঘোষ আর্জি মঞ্জুর করেছেন। জেলার এসপি হৃষিকেশ মিনা বলেন, “তদন্ত চলাকালীন প্রয়োজনে আরও ধারা যোগ করা হতে পারে।”
বিশ্বভারতী সূত্রে খবর, এ দিনই গোটা ঘটনা সম্পর্কে বিশ্বভারতীর আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এবং প্রধান তথা রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনকে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি নিয়ে প্রাথমিক রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়কে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকও। রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন এ দিন কলকাতায় বলেছেন, “বিষয়টি নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলব।”
শান্তিনিকেতনে উপাসনা গৃহের সামনে ছাত্রছাত্রীদের প্রতিবাদ। মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
মঙ্গলবার দুপুরে পাঠভবনের অধ্যক্ষা বোধিরূপা সিংহ ফোন করেন ‘নির্যাতিত’ ছাত্রীর বাবাকে। ছাত্রীর খবর নেওয়ার সঙ্গে তাঁকে দেখা করার অনুরোধ করেন। পরে ওই ছাত্রীর বাবা বলেন, “অধ্যক্ষাকে জানিয়েছি, আমার পক্ষে এখনই দেখা করা সম্ভব নয়। তিনি চাইলে ছাত্রীর সঙ্গে এসে দেখা করতে পারেন।” এ দিন এবিপি আনন্দকে ফোনে বোধিরূপাদেবী বলেন, “কারও নির্দেশে ওঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করিনি। আমি বাইরে ছিলাম। এক জন শিক্ষিকা হিসেবে এটাই করা উচিত বলে মনে হয়েছিল।”
ছাত্রীটির বাবাকে এ দিন ফোন করেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্তের ব্যক্তিগত সচিব শ্যামলা রায়। তিন বছর আগে মেয়েকে ‘ডে স্কলার’ (বাড়ি থেকে যাতায়াত করে পাঠভবনে পড়াশোনার ব্যবস্থা) হিসাবে পড়তে দেওয়ার জন্য বিশ্বভারতীর কাছে আবেদন করেছিল ওই পরিবার। সেই আবেদন উপাচার্য মঞ্জুর করেছেন বলে শ্যামলাদেবী ছাত্রীর বাবাকে জানান। যদিও ওই ছাত্রীর বাবা জানান, মেয়ে ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। সে আর পাঠভবনে পড়াশোনা করতে চায় না। ওই ছাত্রীর কথায়, “আমার এখন ওখানে পড়তে লজ্জা করবে!” পাঠভবনের অধ্যক্ষার অবশ্য আশ্বাস, “পাঠভবনে ফিরে এলে আমরা ওর এই মনোভাব কাটানোর যথাসম্ভব চেষ্টা করব।” ওই ছাত্রীর বাবা এ দিন দুপুরে এসিজেএমের সঙ্গে দেখা করতে আদালতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, “এসিজেএমের নির্দেশে এসেছিলাম। তবে কোনও কারণে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়নি।” এ দিনই ‘করবী’ ছাত্রী নিবাসের বিভিন্ন নথি নিয়ে যায় জেলা পুলিশের তদন্তকারী দল। আবাসিক ছাত্রী ও কর্মীদের সঙ্গে তাঁরা কথা বলেন। ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে বলেন পুলিশ সুপারও।
লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার তথা বোলপুরের প্রাক্তন সাংসদ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। ওই ছাত্রীর বাবা-মায়ের গ্রেফতারিও অত্যন্ত অমানবিক ঘটনা।” বস্তুত, ‘নির্যাতিত’ ছাত্রীর বাবা-মায়ের গ্রেফতারি ঘিরে যে বিতর্ক দেখা দিয়েছে, সে প্রসঙ্গে পুলিশ সুপারের বক্তব্য, “বিশ্বভারতীর পক্ষে তনুজা খাতুন নামে এক হস্টেল কর্মীই সংরক্ষিত এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ করেছিলেন। সেই এফআইআরের ভিত্তিতেই পুলিশ ওই ছাত্রীর বাবা-মাকে গ্রেফতার করেছিল।” অথচ সোমবারের সাংবাদিক বৈঠকে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিলেন, তনুজা খাতুন নামে কোনও কর্মী তাঁদের নেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.