পাঠভবনের ‘নিগৃহীত’ ছাত্রীর পরিবারের পাশে দাঁড়াল স্টেট লিগাল সার্ভিস অথরিটি। ওই মামলায় তাঁরা আইনি সহায়তা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। পাশাপাশি এ দিন সন্ধ্যায় ছাত্রীটির বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন ‘চাইল্ড ওয়েল ফেয়ার কমিটি’র জেলা চেয়ারপার্সন সংযুক্তা ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “জুভেনাইল জাস্টিস আইন অনুযায়ী চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটিকে বিষয়টি পুলিশের আগেই জানানো উচিত ছিল। গোটা ঘটনাটি খতিয়ে দেখে আমরা জেলাশাসককে রিপোর্ট দেব।”
এই ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা হচ্ছে। ফেসবুকে একের পর এক স্ট্যাটাসে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন মহল থেকে অভিযুক্ত ওয়ার্ডেনের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিও উঠতে শুরু করেছে। এই ঘটনা নিয়ে বিশ্বভারতী ভূমিকায় প্রাক্তনীদের একাংশ ক্ষুব্ধ। এ দিনই এবিপি আনন্দকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ঘটনাটি ‘বর্বরোচিত’ আখ্যা দিয়ে লোকসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় (বোলপুরের প্রাক্তন সাংসদ) বলেন, “বিশ্বভারতীর অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। ওই ছাত্রীর প্রতি ওয়ার্ডেনের কার্যকলাপের কথা শুনে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। ঘটনাটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।” |
ছাত্রীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছেন এসপি। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী। |
বিশ্বভারতী সূত্রে খবর, সমগ্র ঘটনায় বিশ্বভারতীর উপর অধিকাংশ আশ্রমিকই ক্ষুব্ধ। তদন্ত কমিটি আদতে গোটা ঘটনাটিকে ‘আড়াল’ করতে নেমেছে বলেই তাঁদের আশঙ্কা। সোমবারের সাংবাদিক বৈঠকে উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত তদন্ত কমিটির দোহাই দিয়ে ছাত্রীটিকে প্রস্রাব চাটানো হয়নি বলে দাবি করেছিলেন। তাতে অনেককেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
অন্য দিকে, ওই ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের কেন তিন দিন লেগে গেল এ প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার দুপুরেই পাঠভবনের অধ্যক্ষা বোধিরূপা সিংহ ফোন করেছিলেন ওই ছাত্রীর বাবাকে। তিনি ছাত্রীর বাবাকে তাঁর সঙ্গে দেখা করার অনুরোধ জানিয়েছেন। যদিও ছাত্রীর বাবা এ দিন ব্যস্ততা ও মানসিক অস্থিরতার জন্য তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারেননি বলে দাবি করেছেন। তবে তিনি অধ্যক্ষাকে পাল্টা অনুরোধ জানিয়েছেন, তাঁর মেয়ের সঙ্গে কথা বলে যাওয়ার জন্য। এ দিন উপাচার্যের দফতর থেকেও তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কর্তৃপক্ষ তাঁদের জানিয়েছেন, উপাচার্য ওই ছাত্রীকে ‘ডে স্কলার’ হিসেবে পড়াশোনা করার অনুমতি দিয়েছেন। গোটা ঘটনায় আতঙ্কিত ওই ছাত্রী অবশ্য বলেছে, “আমার এখন ওখানে পড়তে লজ্জা করবে।” বিশ্বভারতী ১০ বছরের এই মেয়ের পড়াশোনার ক্ষেত্রকে ঘিরে তৈরি হওয়া আতঙ্ককে দূর করতে কি ব্যবস্থা নেয়, এখন সেটাই দেখার।
সোমবার বিচারকের ‘ভর্ৎসনা’র পর এ দিন জেলা পুলিশের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। অভিযুক্ত ওয়ার্ডেনের বিরুদ্ধে জুভেনাইল অ্যাক্টের ধারাটি যুক্ত করার পাশাপাশি ঘটনার তদন্তকারী অফিসার শান্তিনিকেতনের আইসি পার্থসারথি মণ্ডল ও বোলপুর থানার আইসি কমল বৈরাগ্য-র নেতৃত্বে জেলা পুলিশের একটি তদন্তেকারী দল পৌঁছয় ‘করবী ছাত্রী নিবাসে’। সেখান থেকে বেশ কিছু নথি তাঁরা আটক করেন। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় আবাসিক ছাত্রী ও কর্মীদের। এ দিনই ওই ছাত্রীর বাড়িতে যান জেলা পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনা। তিনি ছাত্রীর বাবা-মাকে জানান, পুলিশ ওই ছাত্রীর মেডিক্যাল পরীক্ষা করাতে চায়। যদিও ঘটনার তিন দিন কেটে যাওয়ার পর কেন মেডিক্যাল টেস্টের জন্য বলা হল, তার সদুত্তর অবশ্য মেলেনি। |