সোমবার বিধানসভায় প্রচার বৈঠকে বাম এবং তৃণমূল, দুই শিবিরকেই কৌশলে ‘বার্তা’ দিলেন রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী প্রণব মুখোপাধ্যায়।
কংগ্রেস ও বাম সূত্রের খবর নৌশর আলি কক্ষে কংগ্রেস ও বাম বিধায়কদের সঙ্গে পৃথক বৈঠকে প্রণববাবু তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বে থাকাকালীন সব ‘ভাল’ করছেন, এমন দাবি তিনি নিশ্চয়ই করেন না। কিন্তু তিনি কারও ‘ক্ষতি’ বা ‘খারাপ কিছু’ করেননি, এই কথাটা অন্তত বলতে পারেন।
বৈঠকে প্রণববাবুর আরও বক্তব্য ছিল, সংবিধান মেনেই তিনি এত কাল যা করার করেছেন। সাংবিধানিক ‘গণ্ডি’র বাইরে বেরোননি। রাষ্ট্রপতি হিসেবেও তাঁর কাজ হবে সংবিধানের ‘রক্ষকের’ ভূমিকা পালন করা। প্রণববাবুর ব্যাখ্যা, অনেকে ভাবেন, রাষ্ট্রপতি মানে ‘রবার স্ট্যাম্প’ হয়ে যাওয়া! প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রপতির হাতে সংবিধানকে রক্ষা করা এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাজে সংবিধান অনুসারেই ‘সম্মতি’ দেওয়ার গুরু দায়িত্ব ন্যস্ত থাকে।
কংগ্রেস সূত্রের ব্যাখ্যায়, পশ্চিমবঙ্গের জন্য তিন বছর ঋণশোধ স্থগিত (মোরাটোরিয়াম) রাখার আর্জি জানিয়েও সাড়া পাননি বলে তাঁকে মমতা যে ভাবে কাঠগড়ায় তুলেছেন, কৌশলে তারই জবাব দিয়ে প্রণববাবু বলে গেলেন সংবিধান অনুযায়ী যা করার ছিল, তা-ই করেছেন। আবার সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা, আটের দশকে জ্যোতি বসুর নেতৃত্বাধীন এ রাজ্যের বামফ্রন্ট সরকার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে (প্রণববাবুই তখন দিল্লিতে অর্থমন্ত্রী) যে বঞ্চনার অভিযোগ তুলত, সেটাও যে ‘সংবিধানসম্মত’ ছিল না, প্রচ্ছন্ন ভাবে সেই বার্তাও দিয়ে রাখলেন প্রণববাবু। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন প্রণববাবুর ভূমিকা নিয়ে তৃণমূলের তরফে অবশ্য প্রশ্ন তোলা অব্যাহত। তবে প্রণববাবু রাজ্যকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করেনি বলে যাঁরা প্রচার করছেন, তাঁদের ‘আহাম্মক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য, কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়া। তাতে আবার সুব্রতবাবুর মন্তব্য, “প্রণববাবু যখন অর্থমন্ত্রী ছিলেন, তখন ইচ্ছে করলে রাজ্যকে সাহায্য করতে পারতেন। সাহায্য করার নৈতিক দায়িত্ব ছিল তাঁর। তাঁর সম্মতিতেই রাজ্যের ঋণের পরিমাণ ২ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। তাই কে আহাম্মক, জনগণই বিচার করবেন!” প্রণববাবুকে ঘিরে বাঙালি-আবেগের একটা প্রশ্ন উঠছে। সুব্রতবাবুর পাল্টা মন্তব্য, “মমতা তো অসমিয়া বা ওড়িয়া নন! তাঁর পাশেও তো বাঙালি অর্থমন্ত্রীর দাঁড়ানো উচিত ছিল!” |