দল যে দিকে যায়, তিনি চলেন অন্য দিকে! তাঁর এই ‘ট্র্যাডিশন’ই অব্যাহত রাখলেন আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা!
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রচারে এসে ইউপিএ-র মনোনীত প্রার্থী প্রণব মুখোপাধ্যায় সোমবার যখন বৈঠকে বসলেন সিপিএম-সহ বামফ্রন্টের চারটি দলের বিধায়কদের সঙ্গে, সেখানে অনুপস্থিত রেজ্জাক। কেন আসেননি, দলের পরিষদীয় নেতৃত্বকে জানানওনি। আর দলীয় নেতৃত্বও ধরে নিয়েছেন, তাঁরা যা করবেন, রেজ্জাক তার থেকে একটু আলাদা হবেন। তাই প্রাক্তন ভূমিমন্ত্রীর এ দিনের অনুপস্থিতিকে বিশেষ ‘গুরুত্ব’ দিতে চাইছেন না সিপিএম নেতৃত্ব।
ক্যানিং পশ্চিমের বিধায়ক রেজ্জাক সারা দিন তাঁর গ্রামের বাড়িতেই ছিলেন বলে নিজেই জানাচ্ছেন। রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর সঙ্গে বাম বিধায়কদের বৈঠকে এলেন না কেন? রাতে যোগাযোগ করা হলে রেজ্জাকের সাফ কথা, “গ্রামের বাড়িতে ছিলাম। ধানের বীজতলা হয়েছে, ওই কাজে ছিলাম। দলের সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে ভোট দেওয়া হবে। আর কী! এই নিয়ে এত কথার কী আছে?” প্রণববাবুকে ভোট দিতে যাবেন তো? রেজ্জাকের জবাব, “কেন যাব না? দলের সিদ্ধান্ত তো ওটাই হয়েছে।” বস্তুত, ঘনিষ্ঠ মহলে রেজ্জাক এমনও বলেছেন, “প্রণববাবুকে তো নতুন দেখছি না! চাষের কাজ ফেলে ওঁকে দেখতে যাওয়ার কী আছে?”
সিপিএমের ৩৯, ফরওয়ার্ড ব্লকের ১১, ডিএসপি এবং সমাজবাদী পার্টির এক জন করে মোট ৫২ জন বাম বিধায়কের প্রণববাবুর পক্ষে ভোট দেওয়ার কথা। তাঁদের মধ্যে রেজ্জাক ছাড়া আর এক প্রাক্তন মন্ত্রী, সিপিএমের বিধায়ক উপেন কিস্কুও এ দিনের বৈঠকে আসেননি। তিনি অবশ্য বাঁকুড়ায় নিজের এলাকায় স্বজনপোষণের অভিযোগে সদ্যই দল থেকে তিন মাসের জন্য সাসপেন্ড হয়েছেন। যদিও তাতে বিধায়ক হিসাবে কাজ করতে সাংগঠনিক ভাবে কোনও বাধা নেই বলে সিপিএম নেতৃত্ব জানাচ্ছেন। যোগাযোগ করা হলে উপেনবাবু বলেছেন, তাঁর শরীর খারাপ ছিল। উপেনবাবুর চেয়ে রেজ্জাকের অনুপস্থিতি নিঃসন্দেহেই সিপিএমের রাজনীতিতে অনেক বেশি ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। সিপিএমের একাংশের মতে, দলীয় নেতৃত্বকে ক্রমাগত ‘অস্বস্তি’তে ফেলার কৌশলই নিয়ে চলছেন রেজ্জাক।
প্রাক্তন ভূমিমন্ত্রীর দাবি, এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত থাকতে না-পারা পরিষদীয় নেতৃত্বকে জানানোর মতো বিষয় নয়। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রও বলেছেন, এমন কোনও ‘বাধ্যবাধকতা’ ছিল না। প্রণববাবুর সঙ্গে আলোচনার পরে এ দিন চার দলের বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিরোধী দলনেতা। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য ভোটগ্রহণ হবে ১৯ জুলাই। তার আগের দিন সন্ধ্যার মধ্যে বাইরের জেলার বিধায়কদের কলকাতায় পৌঁছে যেতে বলা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রকৃত অর্থে ‘হুইপ’ জারি করা যায় না। সুতরাং, রেজ্জাক শেষ পর্যন্ত কী করবেন, তা নিয়ে কৌতূহল থেকেই যাবে বাম মহলে! |