|
|
|
|
হত্যায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার পাঁচ |
বরুণ-খুনের ষড়যন্ত্র হয় জেলেই, বলছে পুলিশ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • গাইঘাটা |
জেলে বসেই বরুণ বিশ্বাসকে খুনের ছক কষা হয়েছিল বলে পুলিশের ধারণা। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, সুটিয়া গণধর্ষণ-কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত সুশান্ত চৌধুরী, বীরেশ্বর ঢালিরাই দমদম সেন্ট্রাল জেলে বসে খুনের ছক কষেছিল। বরুণবাবু ছিলেন ওই গণধর্ষণ মামলার অন্যতম সাক্ষী। পুলিশ কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সুবাদে এলাকার সমাজবিরোধীরা অনেকেই ছিল বরুণবাবুর ‘মুখচেনা।’ যে কারণে তাঁর উপরে হামলায় সামনের সারিতে রাখা হয়েছিল যাদের, তাদের কারও পুলিশের খাতায় নাম নেই।
ডিআইজি (প্রেসিডেন্সি রেঞ্জ) অনিলকুমার বলেন, “ওই খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কয়েক জনকে ধরা হয়েছে। বাকিরাও শীঘ্রই ধরা পড়বে। তদন্ত চলছে।” পুলিশের একটি অংশের ধারণা, এই খুনে এক নাবালক ছাত্রের জড়িত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ বিষয়ে আরও তদন্ত দরকার। খুনের জন্য ধৃতদের ৩ লক্ষ টাকা বরাত দেওয়া হয়েছিল। বরুণবাবুকে খুনে ব্যবহৃত পাইপগানটি উদ্ধার করা হয়েছে।
গণধর্ষণ-কাণ্ডের পরে গড়ে ওঠা ‘প্রতিবাদী মঞ্চ’-এর সভাপতি ননীগোপাল পোদ্দার বলেন, “পুলিশের ভূমিকায় আমরা আপাতত স্বস্তিতে। কিন্তু এলাকায় বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারেও তৎপরতা দরকার।” বরুণবাবুর দাদা অসিত বিশ্বাসের কথায়, “জেলে বসে যারা এই খুনের ছক কষেছিল, তাদের চর এখনও সুটিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদেরও গ্রেফতার করুক পুলিশ।”
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় গোবরডাঙা স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের সামনে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন বরুণ। ওই রাতেই সুটিয়া থেকে ভীম বিশ্বাস নামে সুশান্তর এক শাগরেদকে গ্রেফতার করে জেলা পুলিশ। তাকে জেরা করে খোঁজ মেলে বাদুড়িয়ার শুভঙ্কর বিশ্বাস ওরফে ফটিক নামে এক দুষ্কৃতীর। ২০১১ সালে সুটিয়া বাজারে ননীগোপালবাবুর উপরে হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত শুভঙ্কর। |
|
সুটিয়ায় প্রতিবাদ মিছিল বাসিন্দাদের। সোমবার শান্তনু হালদারের তোলা ছবি। |
রবিবার রাতে উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে তল্লাশি চালান জেলার বিভিন্ন প্রান্তে। সঙ্গে রেলপুলিশও ছিল। বাদুড়িয়া থেকে গ্রেফতার করা হয় শুভঙ্করকে। পুলিশ জানায়, তাকে জেরা করে খোঁজ মেলে গোপালনগরের বাসিন্দা দেবাশিস সরকার, বিশ্বজিৎ বিশ্বাস এবং রাজু সর্দারের। সকলকেই গ্রেফতার করে সোমবার জিআরপি-র হাতে তুলে দিয়েছে পুলিশ।
এই মামলার তদন্তভার ইতিমধ্যেই সিআইডিকে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার গাইঘাটায় পুলিশের কর্তারা ছাড়াও আসেন সিআইডি-র স্পেশাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট তমাল বসু।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, সুশান্ত-বীরেশ্বরেরা জেলে বসে যোগাযোগ করেছিল শুভঙ্করের সঙ্গে। শুভঙ্করই বাকি চার জনকে জোগাড় করে। ‘অপারেশন’-এর সামনের সারিতে না থাকলেও বরুণকে চিনিয়ে দিয়েছিল শুভঙ্কর। বিশ্বজিতের মোটর বাইকে চেপে বাকিরা একাধিক বার গোবরডাঙা স্টেশন চত্বরে ঘুরে গিয়েছে। সন্দেহভাজন ওই নাবালক ছাত্রটি ছাড়াও ধৃতদের মধ্যে রয়েছে দেবাশিস সরকার নামে গোপালনগর ন’হাটা যোগেশচন্দ্র মণ্ডল স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের এক ছাত্র। কলেজ সূত্রের খবর, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ পরিচালিত ছাত্র সংসদের ক্রীড়া-সম্পাদক তিনি। যদিও তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পর্যবেক্ষক তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দাবি, কয়েক মাস আগে দলীয় এক নেতার উপরে হামলার অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কার করা হয় দেবাশিসকে। দেবাশিসের কলেজ পরিচালন কমিটির সভাপতি তথা বনগাঁ (দক্ষিণ) কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক সুরজিৎ বিশ্বাস বলেন, “দুষ্কৃতীদের অন্য কোনও পরিচয় থাকতে পারে না। দেবাশিস দোষী হলে ওর কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।” দুষ্কৃতীদের শাস্তির দাবিতে এ দিনই সুটিয়ায় মিছিলও করেছে তৃণমূল।
২০০০ সাল নাগাদ উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার সুটিয়ায় দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবে জেরবার ছিলেন মানুষ। রাত নামতেই একের পর এক বাড়িতে ঢুকে গণধর্ষণ চালাত সুশান্ত চৌধুরী, বীরেশ্বর ঢালির মতো দুষ্কৃতী ও তাদের দলবল। প্রায় দু’বছর ধরে চলছিল এই পরিস্থিতি। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পরে রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়। দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে আন্দোলনে নামেন স্থানীয় মানুষ। তারই সামনের সারিতে ছিলেন সুটিয়ার বাসিন্দা বরুণবাবু। ‘প্রতিবাদী মঞ্চ’-এর সম্পাদক বরুণ ছিলেন কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউশন (মেন)-এর বাংলার শিক্ষক। তাঁদের কয়েক জনের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে সুশান্ত-বীরেশ্বর-সহ গণধর্ষণ-কাণ্ডে জড়িত আরও কয়েক জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। আরও কিছু মামলা বিচারাধীন। কয়েকটি মামলায় মূল সাক্ষী ছিলেন বরুণবাবু। সে কারণেই দুষ্কৃতীরা তাঁকে ‘সরিয়ে দিল’ বলে অনুমান ননীগোপালবাবুর।
তাঁর উপরেও একাধিক বার বোমা-গুলি নিয়ে হামলা
চালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। |
|
|
|
|
|