|
|
|
|
আইআইটি-র প্রকল্প |
জঙ্গলমহলে সেচের উন্নয়নে উদ্যোগ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
লালগড়, বেলপাহাড়ি এলাকায় সেচের উন্নয়নে খড়্গপুর আইআইটি-কে দিয়ে একটি প্রকল্প তৈরি করানো হয়েছে। এ বার এই প্রকল্প-রূপায়ণে উদ্যোগী হল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা-প্রশাসন। আজ, মঙ্গলবার কালেক্টরেটে এ নিয়ে বৈঠক রয়েছে। উপস্থিত থাকবেন জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত এবং সেচ-দফতরের আধিকারিকেরা। আইআইটি-র পরামর্শ মেনে কী ভাবে এই এলাকায় সেচের উন্নয়ন সম্ভব, কোন কাজটা আগে শুরু করা জরুরি, তা নিয়ে আলোচনা করতেই বৈঠক ডাকা হয়েছে।
জঙ্গলমহল এলাকায় সেচের ‘হাল’ ভাল নয়। এখানে কৃষি-জমি রয়েছে ২ লক্ষ ১২ হাজার ৯৭৮ হেক্টর। তার মধ্যে সেচের সুবিধা রয়েছে মাত্রই ১ লক্ষ ৯ হাজার ২৯ হেক্টরে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, খাতায়-কলমে যা দেখানো হয়েছে, সেই পরিমাণ জমিতেও সেচের সুবিধা নেই। সেচের সুবিধা না-থাকায় কৃষিও বৃষ্টি-নির্ভর। একটাই ফসল সারা বছরে। যা এই এলাকার আর্থ-সামাজিক ভাবে ‘পিছিয়ে পড়া’রও কারণ বলে অনেকেই মনে করেন। বিনপুর-১ ব্লকের (লালগড়) ৫৫ শতাংশ এলাকা চাষযোগ্য। বিনপুর-২ ব্লকের (বেলপাহাড়ি) মাত্র ৩৪ শতাংশ এলাকা চাষযোগ্য। জলের অভাবে এই পরিমাণ জমিতেও চাষ করা সম্ভব হয় না। পরিস্থিতি দেখে খড়্গপুর আইআইটি-র এগ্রিকালচার অ্যান্ড ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টকে দিয়ে একটি প্রকল্প-রিপোর্ট তৈরি করানো হয়েছে। এলাকার আবহাওয়া কেমন, কী পরিমাণ বৃষ্টি হয়, কী কী কাজ করলে সেচের উন্নতি হতে পারে--এ সবই উল্লেখ করা হয়েছে সেই রিপোর্টে। সঙ্গে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। অবস্থা খতিয়ে দেখে এ বার এই প্রকল্প রূপায়ণেই উদ্যোগী হচ্ছে জেলা প্রশাসন।
লালগড়-বেলপাহাড়িতে ৮১৪টি গ্রামে মূলত ধান, গম, আলু-সহ নানা রকম সব্জির চাষ হয়। বছরে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৪০০ মিলিমিটার। বৃষ্টিপাত হয় গড়ে ৭৭ দিন। এলাকার সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন ২১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গরমকালে অবশ্য তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে পৌঁছয়। সবমিলিয়ে এখানে সেচের ‘হাল’ ফেরানো গেলে চাষের এলাকা বাড়ানো সম্ভব হবে বলেই মনে করছে জেলা প্রশাসন। বিশ্বব্যাঙ্কের আর্থিক সহায়তায় সেচ ব্যবস্থা ঢেলে সাজতে ইতিমধ্যে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকারও। এ জন্য প্রায় সাড়ে ৪ হাজার প্রকল্প রূপায়ণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরে ২৩৬টি প্রকল্প রূপায়িত হবে। সেচের পরিকাঠামো গড়ে তুলতে এ বার রিভার-লিফট ইরিগেশন, গভীর নলকূপ তৈরি-সহ বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প রূপায়ণের উদ্যোগ শুরু হয়েছে। বিদ্যুৎ-চালিত ১০১টি ও ডিজেল-চালিত ১৫টি রিভার-লিফট ইরিগেশন প্রকল্প তৈরি হবে। নলকূপ, সেচ-খালও তৈরি হবে।
এক-একটি প্রকল্পে কোথাও ৩০ হেক্টর, কোথাও ২০ হেক্টর, কোথাও বা ১০০ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া যেতে পারে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, আইআইটিকে দিয়ে যে প্রকল্প তৈরি করানো হয়েছে, তা রূপায়িত করতে আইএপি (ইন্টিগ্রেটেড অ্যাকশন প্ল্যান), পিইউপি-র (পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ) অর্থ খরচ করা হবে। কিন্তু নির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রয়োজন। তা নিয়ে আলোচনা করতেই জেলা-স্তরে বৈঠক হবে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “জঙ্গলমহলে সেচ-ব্যবস্থার সম্প্রসারণ জরুরি। জলের অভাবে অনেক জায়গায় ফলন কম হয়। পরিস্থিতি পাল্টাতে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ওখানে বেশি সংখ্যক ‘চেক ড্যাম’ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এর ফলে বৃষ্টির জল উঁচু এলাকা থেকে গড়িয়ে এসে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় জমা হবে। ফলে বর্ষার পরেও এই জল নানা কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।” আর তা হলে ‘পিছিয়ে পড়া’ দশাও ঘুচবে বলে আশাবাদী প্রশাসন। |
|
|
|
|
|