|
|
|
|
পুলিশে কাজ নিয়ে প্রতারণা, পুলিশকর্মীর নামে চার্জশিট |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
পুলিশে চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রতারণার অভিযোগে ধৃত ঝাড়গ্রামের পুলিশকর্মী বাসুদেব সিংহের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিল সিআইডি। সোমবার মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে এই চার্জশিট জমা পড়েছে। এ ক্ষেত্রে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০বি, ২০১, ৪২০ ও ৪৭১ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। সিআইডি জানিয়েছে, এখনও তদন্ত চলছে। প্রয়োজনে ‘সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট’ও দেওয়া হতে পারে।
প্রতারণা-চক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত ২৫ মে বাসুদেবকে গ্রেফতার করে সিআইডি। তার আগে গত ১১ মে তাঁকে কলকাতার ভবানী-ভবনে ডেকে পাঠিয়ে এক-দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অভিযোগ, পুলিশে চাকরি করে দেওয়ার নাম করে বেশ কয়েক জন যুবকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন এই পুলিশকর্মী। ঠিক কী ভাবে প্রতারণ-চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে গেল তাঁর নাম? এএসআই বাসুদেববাবু ঝাড়গ্রাম আর-ও (রিজার্ভ-অফিসে) অফিসে কাজ করতেন। পুলিশে চাকরি করে দেওয়ার নাম করে টাকা নেওয়ার অভিযোগে গত ৯ মে রাতে খড়্গপুর স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে ২ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা হলেন--পশ্চিম মেদিনীপুরের কুলটিকরির মিহির রাণা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের হাউরে অনুপ পট্টনায়েক। ওই দিন রাতে পুলিশ ও সিআইডির একটি দল যৌথ ভাবে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেফতার করে। পরে ঘটনার তদন্তভার নেয় সিআইডি।
পশ্চিম মেদিনীপুরে জুনিয়র কনস্টেবল-পদে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। সাঁকরাইলের দিলীপ সিংহ নামে এক যুবক অভিযোগ করেন, পুলিশে চাকরি করে দেওয়ার নাম করে তাঁর কাছ থেকে দেড় লক্ষ টাকা চাওয়া হয়েছিল। জুনিয়র কনস্টেবল পদের লিখিত পরীক্ষায় পাশ করার পরে মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন দিলীপ। এর পর এক ব্যক্তি তাঁকে ফোন করে জানান, মৌখিক পরীক্ষায় তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৬। এই নম্বরে চাকরি পাওয়া অসম্ভব। তবে দেড় লক্ষ টাকা দিলে তাঁর চাকরি হয়ে যাবে। ৯ মে রাতে ২০ হাজার টাকা নিয়ে খড়্গপুর স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় আসেন দিলীপ। ঠিক ছিল, এখানেই ফোনে কথা বলা ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর দেখা হবে। সেই মতো দেখাও হয়। ফাঁদ পেতে প্রতারণা-চক্রের ২ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই বাসুদেব সিংহের নাম জানা যায়। ধৃতদের দাবি, মৌখিক পরীক্ষায় কে কত নম্বর পেয়েছেন, তাঁর একটি তালিকা বাসুদেবই তাঁদের দেন। ধৃত ৩ জনই এখন জেল হেফাজতে রয়েছেন। ঘটনার তদন্তে নেমে সিআইডি জানতে পারে, জুনিয়র কনস্টেবলের চাকরি করে দেওয়ার নাম করে একটি চক্র ‘সক্রিয়’ হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে বেশ কয়েক জন যুবকের কাছ থেকে অন্তত ১২-১৪ লক্ষ টাকা তোলা হয়েছে। তদন্তে আরও একটি বিষয় উঠে আসে। জানা যায়, বাসুদেব মোট ৪টি মোবাইল ‘সিম-কার্ড’ ব্যবহার করতেন। এর মধ্যে ২টি তাঁর নিজের নামে কেনা। বাকি ২টি কেনা হয়েছিল কোনও কাগজপত্র ছাড়াই। এর মধ্যে একটি সিম রয়েছে ডেবরার এক যুবকের নামে। অন্যটি মেদিনীপুরের এক যুবকের নামে। জেনেবুঝেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া ‘সিম’ কিনেছিলেন বাসুদেব বলে দাবি সিআইডি-র। সেই ‘সিম’ ব্যবহার করেই প্রতারণা-চক্র চালানো হত।
জঙ্গলমহলের যুবক-যুবতীদের পুলিশের চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই চাকরি নিয়েই এমন প্রতারণা-চক্র ‘সক্রিয়’ হওয়ায় এবং এক পুলিশকর্মীর নাম তাতে জড়িয়ে যাওয়ায় বিড়ম্বনা বাড়ে প্রশাসনের। সোমবার মেদিনীপুরের সিজেএম কল্লোল দাসের এজলাসে এই মামলার চার্জশিট জমা পড়েছে মিহির রাণা, অনুপ পট্টনায়েক ও বাসুদেব সিংহের নামে। মামলার তদন্তকারী অফিসার নীহার ভট্টাচার্য বলেন, “তদন্ত এখনও চলছে। চক্রে আরও কেউ জনিত কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
|
|
|
|
|
|