|
|
|
|
মারিশদা |
নাবালকের বিয়ে রুখল পুলিশ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কাঁথি |
ছাদনাতলায় পুলিশের হানা, বিয়ে ভেঙে স্কুলপড়ুয়া কচি মেয়ের ভবিষ্যৎ রক্ষা-- এমন ঘটনা আর নতুন নয়। তাই বলে নাবালকের বিয়ে রোখা? এ বার সেই কাজটাও সারল পুলিশ-প্রশাসন।
পূর্ব মেদিনীপুরের মারিশদা থানার দক্ষিণ পিঠুলিয়া গ্রাম। দিনমজুর পঞ্চানন বেরার মেয়ে কবিতার বিয়ে ছিল রবিবার। পাত্র মারিশদারই রামপুরের সত্যরঞ্জন মণ্ডলের ছেলে। তার পান-বিড়ির দোকান রয়েছে। বিয়েতে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনের বাইরে বিশেষ কেউ নিমন্ত্রিত ছিলেন না। আয়োজনও হয়েছিল নমো নমো করে। অগ্নিসাক্ষী করে চার হাত মিলিয়ে দিতে যেটুকু দরকার, সেটুকু বন্দোবস্তই করেছিলেন দরিদ্র কনেকর্তা। তার আগেই বাধল ধুন্ধুমার।
লগ্ন ছিল রাতে। বর ও বরযাত্রীরা সেই সন্ধেতেই হাজির। গ্রামেরই কারও মারফত খবর পেয়ে ১০টা নাগাদ এল পুলিশ। নেতৃত্বে মারিশদা থানার ওসি চম্পক রায়চৌধুরী। পুলিশ দেখে তো সকলের চক্ষু চড়কগাছ। বর কি তবে আগেও বিয়ে করেছে? নাকি কোনও অকাজ-কুকাজে জড়িত? বিয়েবাড়ি জুড়ে চাপা গুঞ্জন। বিষয়টা পরিষ্কার হতে সময় লাগল খানিকটা। আর সত্যিটা জানা যেতেই সকলের চোখ কপাল ছাড়িয়ে একেবারে মাথায়।
পুলিশ বলে কী? পাত্রের বয়স মাত্র ১৬! আর কনের একুশে পা! ওসি জানিয়ে দিলেন, এ বিয়ে সম্ভব নয়। কারণ, আইন অনুযায়ী ছেলের বয়স ২১ ও মেয়ের বয়স ১৮ না হলে সেই বিয়ে অবৈধ। ভবিষ্যতে আবার বিয়ে দিতে গেলে পাত্র-পাত্রীকে গ্রেফতার করা হবে বলেও চোখ রাঙাল পুলিশ। অতএব সব আয়োজন সাঙ্গ। কবিতার চোখে জল, জড়োসড়ো পাত্রও। দুই বাড়ির অভিভাবকদের মুখ থমথমে। বিয়েবাড়িময় তখন শুধু বয়স নিয়ে চর্চা। ১৮ আর ২১-এর আইনি অঙ্ক ছাপিয়ে সেই চর্চার মূলে একটাই কথা মেয়ে তা হলে ছেলের থেকে ৫ বছরের বড়? ইদানীং শহুরে সমাজে এমন বিয়ে অনেক হয়। বহু তারকা দম্পতিও রয়েছেন, যেখানে স্ত্রী বয়সে বড়। যেমন সত্যজিৎ ও বিজয়া রায়, সচিন ও অঞ্জলি তেন্ডুলকর, অভিষেক বচ্চন ও ঐশ্বর্যা। কিন্তু তাঁরা সাবালক হয়েই বিয়ে করেছেন। আইন বাধা হয়নি। যেটা হল এই কিশোর আর কবিতার ক্ষেত্রে।
বরের বাবা অবশ্য অন্য যুক্তি খাড়া করছেন। পুলিশকে তিনি বলেছেন, “বিয়ে নয় তো, আমরা মেয়ে দেখতে এসেছিলাম।” মারিশদা থানার ওসি চম্পকবাবু যদিও জানিয়েছেন, আয়োজন দেখে বিয়ের আসরই মনে হয়েছে তাঁদের। আর দু’পক্ষের অভিভাবকই স্বীকার করে নিয়েছেন, বয়সের ফারাক। কিন্তু কেন ১৬ বছরের এক কিশোরের সঙ্গে ২১ বছরের এক তরুণীর বিয়ে দেওয়া হচ্ছিল? জবাব খুঁজছে পুলিশও। |
|
|
|
|
|