মাঠে যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা না-রেখে ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন বন্ধ করার দাবি জানাল প্রয়াত ফুটবলার
|
মহেশ |
মহেশ থাপার পরিবার। রবিবার জলপাইগুড়ি সদর থানার তোড়লপাড়ায় ফুটবল খেলতে গিয়ে বুকে চোট পান তিনি। অভিযোগ, মাঠে ব্যবস্থা না থাকায় প্রাথমিক চিকিৎসা পরিষেবা পাননি মহেশ। ঘটনার পর অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে প্রথমে হাসপাতালে এবং পরে দুটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। নার্সিংহোমে চিকিৎসা না মেলায় ফের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। জেলার সাবজুনিয়র এবং জুনিয়র দলের হয়ে খেলে আসা এই তরুণ ফুটবলারের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ জেলার ক্রীড়া মহল। সোমবার জলপাইগুড়ির রেসকোর্সপাড়ায় প্রয়াত মহেশের বাড়িতে বসে বাবা চন্দ্রবাহাদুর থাপা এবং কাকা বসন্ত থাপা বলেন, ‘‘খেলার সময় বুকে আঘাত পেয়েছিল বলে জানতে পেরেছি। তখনই যদি মাঠে প্রাথমিক চিকিৎসা হত এবং দ্রুত হাসপাতালে পাঠিয়ে সুষ্ঠু চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া যেত তা হলে হয়ত ওকে বাঁচানো যেত। এ রকম সর্বনাশ আর কোনও ফুটবলারের পরিবারে যেন না হয়। তাই মাঠে যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা ছাড়া এ ভাবে ছোট, বড় কোনও ফুটবল প্রতিযোগিতা যেন না হয় সেই আর্জি জানাব।” টুর্নামেন্ট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা তোড়লপাড়ার পল্লিমঙ্গল শোভাবাড়ি ক্লাবের ক্রীড়া সম্পাদক রাজীব ভট্টাচার্য অবশ্য দাবি করেছেন, দুই কিলোমিটার দূরে ধাপগঞ্জ ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের অ্যাম্বুল্যান্স এবং এলাকার এক হাতুড়ে চিকিৎসক খেলার মাঠে ছিলেন। তিনি বলেন, “ওই অ্যাম্বুল্যান্সে মহেশকে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। গত তিরিশ বছর ধরে টুর্নামেন্ট চলছে। আগে কখনও এমন ঘটনা ঘটেনি।” |
গত বছর জেলার সুপার ডিভিশনের দল রায়কতপাড়া স্পোর্টিং অ্যাসোসিয়েশন (আরএসএ)-এর হয়ে খেলেছিলেন তিনি। এ বছর ক্লাবেই সই করেছেন। ক্লাবের যুগ্ম সচিব কিরণ শাহ বলেন, “ফেডারেশন কাপে জুনিয়রের মৃত্যুর পর মাঠে চিকিৎসা পরিষেবা রাখা বাধ্যতামূলক করার দাবি উঠেছিল। রবিবার তোড়লপাড়ার মাঠে চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিল-না বলেই জেনেছি। জেলার বিভিন্ন ফুটবল প্রতিযোগিতা এ ভাবেই হচ্ছে। এর ফল কতটা মারাত্মক হতে পারে তা আশা করি সকলেই বুঝতে পারছেন।” এমনকী জেলা ক্রীড়া সংস্থার অনেক ফুটবল ম্যাচেও মাঠে চিকিৎসক বা অ্যাম্বুল্যান্স থাকে না বলে ক্লাবগুলির একাংশ অভিযোগ তুলেছেন।
মহেশের মৃত্যুর পর নড়েচড়ে বসেছেন জলপাইগুড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থা। বিভিন্ন জায়গায় এ ভাবে ফুটবল প্রতিযোগিতা বেড়ে চলায় উদ্বিগ্ন তারাও। সংগঠনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রেফারি অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে। নিজেদের খেলোয়াড়দের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ক্লাবগুলিকেও চিঠি পাঠাচ্ছেন তাঁরা।
ক্রীড়া সংস্থার সচিব অঞ্জন সেনগুপ্ত বলেন, “পরিকাঠামো ছাড়া প্রতিযোগিতা করা হলে রেফারিদের সংগঠন যাতে ম্যাচ পরিচালনার জন্য রেফারি না-পাঠায় সে জন্য তাদের জানানো হবে। আমাদের অনুমদিত ক্লাবগুলিও যাতে ফুটবলার না ছাড়ে তাহলে ওই সমস্ত টুর্নামেন্ট নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। শীঘ্রই চিঠি দিয়ে সেটা জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কোনও টুর্নামেন্টের অনুমোদন দেওয়ার আগে দেখে নেওয়া হবে যে খেলার সময় মাঠে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা আছে কি না।” তা ছাড়া তোড়লপাড়ায় যে ধরনের ফটবল প্রতিযোগিতা হচ্ছিল তাতে ২০ মিনিটের ম্যাচে উত্তেজনা বেশি থাকে। এ সব ক্ষেত্রে আরও বেশি সতর্ক থাকা জরুরি বলে দাবি করেন অনেক ক্লাবের কর্মকর্তারাই।
জলপাইগুড়ি ক্রীড়া সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সমস্ত ক্লাব ওই ফুটবল খেলার আয়োজন করে থাকে তারা ক্রীড়া সংস্থা অনুমোদিত নয়। তাই সরাসরি তাদের নিয়ন্ত্রণ করার উপায় নেই। পাড়ায় গজিয়ে ওঠা কয়েকটি ক্লাব ফুটবলার ভাড়া করে এ ভাবে প্রতিযোগিতা চালায়। যে ক্লাবে ফুটবলাররা বছরভর খেলে তাদের অনুমতির দরকারও হয়না। মহেশের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আরএসএ’র কর্মকর্তারা জানান, এখন থেকে অনুমতি না নিয়ে কেউ অন্যত্র খেলতে গেলে তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্য ক্লাবগুলির তরফেও এই ব্যবস্থা চালু করা উচিত বলে তারা মনে করেন।
|
ছবি: রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়। |