নাথবতী হলেন অনাথ তাপসী
রিবারের পরিচয় এ পর্যন্ত জানা যায়নি। সংসার বাঁধতে ছাদনাতলা পর্যন্ত যাওয়ার স্বপ্ন দেখার কোন আবহও ছিল না এত দিন। তাই, কনের সাজে পানপাতায় মুখ ঢেকে ছাদনাতলায় ঢোকার ভাবনাটুকুও তাপসীর কাছে এত দিন ছিল অলীক স্বপ্ন। সেই স্বপ্নই বাস্তবে রূপ পেল সকলের উদ্যোগে। সরকারি সেবা নিকেতনের চৌহদ্দি ছেড়ে শ্বশুরবাড়িতে পাড়ি দিলেন তাপসী। মন্ত্রীর উপস্থিতিতে ঘটা করে বিয়ে হল অনাথ মেয়েটির।
জন্ম থেকেই কথা বলতে পারেন না তাপসী। শুনতেও পান না। জ্ঞান হওয়া ইস্তক তাঁর ঠিকানা প্রবর্তক সেবা নিকেতন। বোড়াইচণ্ডীতলা, সরকারপাড়া। থানা চন্দননগর। জেলা হুগলি। চন্দননগরের এই সেবা নিকেতন সাত দশকের পুরনো। এখন এখানে ২৩০ জন অনাথ এবং দুঃস্থ আবাসিকের বাস। তবে, প্রতিষ্ঠানের ইতিহাসে এই প্রথম কনের বেশে কেউ বিদায় নিচ্ছেন এই গণ্ডী ছেড়ে। হোক না কুড়িয়ে পাওয়া মেয়ে! সত্যিটা হলনিজের সন্তানের মতোই এত দিন ধরে তাঁকে সংসারে স্থিত করতে চেয়েছেন প্রবর্তকের অভিভাবকেরা। বেনারসী শাড়ি পরে তাপসী নতুন জীবনে পা রাখায় আজ তাঁদেরও স্বপ্ন সফল হল।
—নিজস্ব চিত্র।
প্রস্তুতিটা শুরু হয়েছিল কয়েক দিন আগে থেকেই। সোমবার তা চূড়ান্ত রূপ পেল। সুদৃশ্য আলপনা, ঝকঝকে আলো আর সানাইয়ের সুরে তাপসী সাতপাঁকে বাঁধা পড়লেন নদিয়ার ভোলা ময়রার সঙ্গে। ভোলা দুধের ব্যবসা করেন। তাপসীর মতোই তিনিও মূক-বধির। সেবা নিকেতনের মঞ্চে তৈরি করা হয়েছিল ছাদনাতলা। সমস্ত আচার মেনেই সেখানে পাত্রের হাতে কন্যা সম্প্রদান করলেন প্রবর্তকের কর্মকর্তারা।
সম্প্রতি প্রবর্তকের কর্মকর্তারা ভোলার কথা জানতে পারেন। তখনই ভোলার সঙ্গে তাপসীর বিয়ে দেওয়ার কথা মাথায় আসে তাঁদের। তাঁরা হুগলি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এর পরেই দুই জেলার সমাজকল্যাণ দফতর আসরে নামে। তাঁদের মধ্যস্থতাতেই ‘পাকা কথা’ হয়।
সোমবার সন্ধ্যায় বিয়েতে এসেছিলেন কৃষিমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, বিধায়ক তপন দাশগুপ্ত-সহ এলাকার অনেক বিশিষ্টজন। কয়েকশো পাত পড়ল। লুচি, পোলাও, মাংস, মিষ্টিকী নেই! প্রবর্তক সঙ্ঘের পাশাপাশি তপনবাবুর মতো অনেকেই তাপসীর বিয়েতে এগিয়ে এসেছেন। সকলেই তাই খুশি।
চন্দননগরের মহকুমাশাসক ভি এস লক্ষ্মী বলেন, “প্রশাসনিক স্তরে যতটা সম্ভব আমরা সাহায্য করেছি। আমরা অসম্ভব খুশি। মেয়েটি সুখী হোক, এই কামনা করি।” প্রবর্তকের সম্পাদক পরিমল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “একটা অনাথ মেয়েকে এই ভাবে স্বামীর ঘরে পাঠাতে পেরে আমাদের যে কী আনন্দ হচ্ছে, বলে বোঝাতে পারব না। তবে, বাড়ির মেয়ে শ্বশুরবাড়ি চলে গেলে বাবা-মায়ের যেমন কষ্ট হয়, তাপসীর ক্ষেত্রেও অনুভূতিটা আলাদা নয়। ছোট থেকে এখানেই তো মেয়েটা বড় হয়েছে।”
আর তাপসী? হয় তো অনেক কথাই বলতে চাইছিলেন নববধূ। গলা দিয়ে স্বর না বেরলেও, সজল চোখ দু’টোই সব অনুভূতি একাকার করে দিয়ে যাচ্ছিল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.