নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
ব্যান্ডেল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের চারটি রুগ্ণ ইউনিটকে বন্ধ না করে আধুনিকীকরণের কথাই ফের ভাবতে শুরু করেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম। এ জন্য বিশ্বব্যাঙ্কের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া হতে পারে।
ব্যান্ডেলের ২১০ মেগাওয়াটের ৫ নম্বর ইউনিটটির ইতিমধ্যেই পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। এই কাজে ঋণ দিচ্ছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। প্রথম দিকে নিগম কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, এই ইউনিটটির আধুনিকীকরণের কাজ শেষ হলে ১ থেকে ৪ নম্বরের পুরনো ইউনিটগুলি বন্ধ করে দেওয়া হবে। কারণ প্রতিটি ৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই ইউনিটগুলি চালাতে গিয়ে নিগমের এখন ঢাকের দায়ে মনসা বিক্রির অবস্থা। আশানুরূপ বিদ্যুৎ তো মেলেই না, উল্টে দূষণ ছড়ায়।
বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত বলেন, “নতুন বিদ্যুৎপ্রকল্প গড়তে যত খরচ হয়, পুরনো ইউনিট সংস্কারে তার থেকে অনেক কম টাকা লাগে। অথচ একই পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে।” তিনি জানান, ব্যান্ডেলেও তাই ইউনিটগুলি সংস্কারের কথাই ভাবা হচ্ছে। নিগমের এক কর্তা জানিয়েছেন, ব্যান্ডেলের ৫ নম্বর ইউনিটটির সংস্কারের কাজ করছে দক্ষিণ কোরিয়ার বহুজাতিক সংস্থা ‘দুসান হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন’। ব্যান্ডেলের পুরনো ইউনিটগুলির বয়লার তৈরির মতো নকশা ও প্রযুক্তি তাদের হাতে রয়েছে। ওই কর্তা বলেন, ‘‘এই কাজেও বিশ্বব্যাঙ্কের কাছে ঋণ চাওয়া হতে পারে।”
ষাটের দশকে ব্যান্ডেলে ধাপে ধাপে ৬০ মেগাওয়াট করে মোট চারটি ছোট ইউনিট গড়ে ওঠে। ওই বয়লারগুলির বয়স হয়ে গিয়েছে প্রায় ৫৭ বছর। ফলে সেগুলির কর্মক্ষমতা তলানিতে এসে ঠেকেছে। ১৯৮২ সালে ব্যান্ডেলে ২১০ মেগাওয়াটের ৫ নম্বর ইউনিটটি গড়ে তোলা হয়। কিন্তু সময় যত পেরিয়েছে ব্যান্ডেল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির সার্বিক উৎপাদন ক্ষমতা ক্রমশ কমেছে। কয়েক দশকের পুরনো ইউনিটটিকে চাঙ্গা করে তোলা সহজ কাজ ছিল না বলেই বামফ্রন্ট সরকার এক সময় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে বাঁচাতে কয়লা থেকে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নেয়। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয়নি।
নিগম কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, পরিবেশ দূষণ কমাতে বিশ্বব্যাঙ্ক এখন পুরনো তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির আধুনিকীকরণে ঋণ দিতে চাইছে। তিন-চার দশকের পুরনো তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির আধুনিকীকরণ করা গেলে সেগুলির উৎপাদন ক্ষমতা যেমন বাড়বে, দূষণও কমবে। সেই যুক্তিতেই ব্যান্ডেলের ৫ নম্বর ইউনিটটির জন্য ঋণ পাওয়া গিয়েছে। বিদ্যুৎ শিল্প মহলের মতে, বিশ্বব্যাঙ্কের এই ভাবনার সঙ্গে অনেকটাই সহমত কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকও। তারাও এখন চাইছে পুরনো তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির আমূল সংস্কার। কারণ নতুন প্রকল্প গড়তে গেলে কম-বেশি সব রাজ্যেই জমি পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। আবার বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনও বাড়াতে হবে। তাই কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকও রাজ্যগুলিকে তাদের পুরনো তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির আধুনিকীকরণে উৎসাহ দিচ্ছে। ব্যান্ডেলের পুরনো চারটি ইউনিটের ক্ষেত্রেও তারা একই পরামর্শ দিয়েছে বলে রাজ্যের বিদ্যুৎ কর্তারা জানিয়েছেন।
|