রাস্তা যেন পুকুর, ক্ষুব্ধ বাসকর্মীরা
খানা-খন্দ থেকে বড় গর্ত আগে থেকেই রয়েছে। বর্ষা নামতেই জলে ভরে সে সব ছোটখাটো পুকুরের চেহারা নিয়েছে। খনি ও শিল্পাঞ্চলের নানা রাস্তার এখন এমনই হাল।
আসানসোলের পুরনো জি টি রোডে সব থেকে বিপজ্জনক দশা কুমারপুর রেল ক্রসিং, লছিপুর ও কুলটির কলেজ রোড এলাকার। বরাকর, হনুমানচড়াই ও নিয়ামতপুর মোড়ের আগে বর্ষায় রাস্তা দিয়ে জল বয়ে যাচ্ছে। কুলটির সন্ন্যাসীতলা, রানিতলা, বরাকর বাসস্ট্যান্ড,এল সি মোড়েরও হাল তথৈবচ। বাসিন্দারা জানান, প্রতি দিনই ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগে আছে। পুরনো জি টি রোড থেকে নিয়ামতপুর হয়ে চিত্তরঞ্জন যাওয়ার পথে দেন্দুয়া মোড়, রূপনারায়ণপুর নিউমার্কেট ও দেন্দুয়া কাচ কারখানা থেকে বনজেমারি যাওয়ার রাস্তায় হাঁটা দায়। ডাবর মোড় থেকে আলডিহি মোড়ের মাঝামাঝি রেল ব্রিজের একাংশ ভেঙে পড়েছে। নেই ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাও। প্রধান রাস্তাটিতে আবার রেলসেতুর কাছে আবার এমন উঁচু হাম্প বসানো হয়েছে যা প্রায়ই যানবাহন চলাচলে অসুবিধা তৈরি করে। এ ছাড়াও এই রাস্তার রূপনারায়ণপুর গুরুদ্বার, রামডিহি গ্রাম, সালানপুরের কালীতলা, জেমারির সিনেমা হল মোড়, কেন্দুয়ার জলট্যাঙ্কি, কালীতলা রেলগেট, চলবলপুর, নিউরোড, ডেডি গ্রাম সংলগ্ন অঞ্চল খানাখন্দে ভর্তি।

আসানসোলে ছবিটি তুলেছেন শৈলেন সরকার।

অন্ডালে ওমপ্রকাশ সিংহের তোলা ছবি।
আসানসোলের পুরনো জিটিরোডের আশ্রম মোড় থেকে চুরুলিয়া ভায়া দোমহানি রুটে, আড়াডাঙা আরপিএফ আউটপোস্ট থেকে ২ নম্বর জাতীয় সড়ক, ভানোড়া মোড় থেকে দোমহানি বাজার, চুরুলিয়া থেকে জামুড়িয়া যাওয়ার রাস্তায় তালতোড় মোড় অবধি রাস্তার বেহাল দশা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চুরুলিয়া থেকে অজয়ের ঘাট পর্যন্ত সিএসআর প্রকল্পে রাস্তা পাকা করার দায়িত্ব নিয়েছিল স্থানীয় একটি বেসরকারি কয়লা সংস্থা। কিন্তু, কার্যক্ষেত্রে তারা শুধু ওই এলাকার মাটি ভরাট করেছে। বাধ্য হয়ে পুরনো রাস্তা দিয়েই যানবাহন চলছে ওই এলাকায়। চুরুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা ভুট্টো সিদ্দিকি জানান, বর্ষায় ওই রাস্তায় যানবাহন চলাচল দুষ্কর। দোমহানি বাজার থেকে ভানোড়া, বেলডাঙা, হনুমানচড়াই, বারাবনি রেলগেট, ভানোড়া মোড় থেকে ভানোড়া কোলিয়ারির সংযোগকারী রাস্তার হালও বেহাল। দোমহানি বাজার থেকে জামুড়িয়া যাওয়ার পথে দোমহানির বাউরিপাড়া, ফরিদপুর রেলগেট, শিবপুর শিবমন্দির,শিবপুর পাম্পহাউস, দোমহানি গোয়ালাপাড়া যাওয়ার রাস্তার হালও এক। চাঁদা থেকে জামুড়িয়া যাওয়ার পথে জামুড়িয়া বাইপাসের বিভিন্ন অংশই জীর্ণপ্রায়। কেন্দুলিয়া গ্রাম থেকে শ্রীপুর, জামুড়িয়া-হরিপুর রাস্তা, জামুড়িয়া সিনেমা হল থেকে পুরভবন ও শেখপুর ইকড়া এলাকায় উঠে গিয়েছে রাস্তার পিচও। কোনও দিন যে পাকা ছিল রাস্তা, তাও এখন বোঝা যায় না।
অন্য দিকে, আসানসোলের ভগৎ সিং মোড় থেকে গৌরান্ডির রুনাকুড়া ঘাট যাওয়ার রাস্তায় নিবেদিতা বাস টার্মিনাস থেকে পাঁচগাছিয়া রেলগেট ও নুনি থেকে লালগড় যাওয়ার রাস্তার অবস্থাও খারাপ। বাতাসপুর মোড়, গৌরান্ডি কোলিয়ারি, পাঁচকুলিয়া খানা-খন্দে পূর্ণ। অন্ডালের হরিপুর গাইঘাটা মোড় থেকে উখড়া যাওয়ার পথের প্রায় অর্ধেক অঞ্চল, হরিপুর কোলিয়ারি মোড়, অন্ডাল থেকে উখড়া যাওয়ার রাস্তায় ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে দক্ষিণখন্ড, উখড়ার বাজপেয়ী মোড়ের কিছু দূরে রাস্তায় রয়েছে অজস্র ছোট গর্ত। একই অবস্থা ভগৎ সিং মোড় থেকে বার্নপুর যাওয়ার রাস্তার স্কব গেট পর্যন্ত রাস্তার। আসানসোলের বিজয়ী পাল সরনির আদালত সংলগ্ন এলাকা, শশীভূষণ গড়াই রোডে লেভেল ক্রসিংয়ের সামনের দিকে ভেঙে পড়তে শুরু করেছে রাস্তা। ইতিমধ্যে জলও জমছে সেখানে। রানিগঞ্জের প্রধান রাস্তা নেতাজি সুভাষ রোডের কিছু জায়গায় যেমন ফাটল ধরতে শুরু করেছে, তেমনই বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে পান্ডবেশ্বর, গৌরবাজারের রাস্তা। ভেঙে পড়েছে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের তপসী ও চাঁকতলার সেতুর একাংশ। কুলটির সমীপ্রেন্দ লাহিড়ি, জামুড়িয়ার বুধন বাউরি, অন্ডালের শান্তি মণ্ডল, রানিগঞ্জের জীবন মুখোপাধ্যায়দের আশঙ্কা, যে কোনও সময়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশন জানায়, এই অঞ্চলে ৪৫০টি মিনিবাস, প্রায় ৩০০টি বড় বাস যাতায়াত করে। তাঁদের কথায়, “আসানসোল পুরনো জিটিরোডে শতাব্দী শিশু উদ্যান ও বস্তিন বাজারের সামনে দু’টি কালভার্ট সংস্কার শুরু হয়েছে ন’মাস আগে। কবে শেষ হবে, কেউ জানে না। প্রধান রাস্তায় খুচরো কাজ করতে এত সময় লাগছে যে অসুবিধায় পড়ছেন যাত্রীরা। এখন বর্ষায় রাস্তাও কর্দমাক্ত হয়ে পড়ছে। এতে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বাড়ছে।” সংগঠনের সম্পাদক সুদীপ রায় জানান, ২০১১ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১২র জানুয়ারি পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সব মহলকেই চিঠি দিয়ে রাস্তার অবস্থার কথা বারবার জানানো হয়েছে। প্রায় কোনও উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক সত্যজিৎ দত্তের কথায়, “এই রাস্তাগুলির কোনওটি পূর্ত দফতর, কোনওটি জেলা পরিষদ, :আবার কোনওটি পুরসভার নিয়ন্ত্রণে। সব দফতরের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করা হলেও কার্যক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি ছাড়া কিছুই মেলে না। চলতে গিয়ে প্রতিদিনই যানবাহনের যন্ত্রপাতি ভেঙে যায়, ফলে বিভিন্ন রুটের বাস বন্ধ থাকে। যাত্রীদের নাজেহাল অবস্থার শেষ নেই।” বারাবনির তৃণমূল নেতা পাপ্পু উপাধ্যায়ের ক্ষোভ, “দীর্ঘদিন কাজ না হওয়ায় এই হাল। বারাবনি বিধানসভা কেন্দ্রে ৪০ কোটি টাকা ধার্য করে কাজ শুরু হয়েছে। যে গতিতে কাজ হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে, একা বারাবনিতেই কাজ শেষ হতে দু’বছর সময় লাগবে।”
এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সালানপুর ও হিন্দুস্থান কেব্ল এলাকায় রাস্তার কাজ চলছে। বর্ষার আগেই কাজ শুরু হয়েছে। পরিকল্পনা নিয়ে সব কাজই করা হবে।” তবে, মহকুমাশাসক সুরজিৎ দত্ত শর্মার বক্তব্য, “আপাতত, আপৎকালীন কাজ করা হবে।এখন স্থায়ী কাজ করতে গেলে বর্ষায় তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.