আমার হিরো সব পারে

সুপারম্যান
বিশ শতকের শুরুর দিক। সবখানে নতুন নতুন যন্ত্রগুলোর প্রচণ্ড প্রতিপত্তি। তাতে মানুষদের বিষম বেইজ্জতি। রোখ চেপে গেল গল্প-লিখিয়েদের। কমিকসের রংচঙে দুনিয়ায় মানুষকে জেতাবেনই জেতাবেন। সেই থেকেই সুপারহিরোদের বাড়-বাড়ন্ত। তাদের মধ্যে সুপারম্যানই বোধ হয় প্রথম এসেছিল। ১৯৩৩ সালে। তখন কিন্তু সে ছিল ন্যাড়া মাথার আস্ত শয়তান। অসীম মনোবল পেয়ে অতিমানব হয়েছে। পাজিটা দুনিয়াটাকে দাস বানিয়ে রাখতে চায়। জেরি সিগাল আর জো সাস্টার-এর দুষ্টু লোকের গল্পটাকে কারও ভাল লাগল না। তখন শিল্পীদ্বয় পাঁচ বছর পর সুপারম্যানকে আবার নিয়ে এলেন। সে তখন অন্য মানুষ। ওহো মানুষ না তো, মানুষের মতো দেখতে ভিনগ্রহী। ক্রিপটন গ্রহের বাসিন্দা। বিশাল লম্বা, লোহার শরীর। মাইল মাইল দূরের বিপদ বুঝতে পারে, দেওয়াল ফুঁড়ে দেখতে পায়। উড়তে পারে, বুলেটের চেয়েও জোরে ছোটে। ওর শরীর সৌরশক্তি থেকে ‘রিচার্জড’ হয়। সেখান থেকেই এত কারবার। কিন্তু এমনি সময় সব লুকিয়ে রাখে। চুল আঁচড়ে, চশমা এঁটে এক কোনায় বসে থাকবে। ও তো সাংবাদিক ক্লার্ক কেন্ট। সহকর্মী লোয়ি লেন পর্যন্ত কিচ্ছুটি জানে না। এ দিকে ওই নাকি সুপারম্যানের ‘বিশেষ বান্ধবী’! কিন্তু, বিপদ হোক, ক্লার্ক পোশাক বদলে সুপারম্যান বডিস্যুট পরে আসবে। এক লাফে আকাশছোঁয়া বাড়ি, পাহাড়-পর্বত সব টপকে যাবে। এক হাতে চলন্ত ট্রেন আটকে, পৃথিবীটাকেই লাট্টুর মতো উলটো দিকে ঘুরিয়ে দেবে। আর দুনিয়াটাকে সমস্ত বিপদ থেকে বাঁচিয়ে দেবে। শুধু চশমাটা খোলার অপেক্ষা!

স্পাইডারম্যান
ভারী মুষড়ে পড়েছিল আঠারো-উনিশরা। ওরা ছোট্ট থেকে সুপারম্যান, ব্যাটম্যান, ফ্যান্টমদের কত্ত ভালবাসে। কিন্তু কী অন্যায় দেখো, সুপারহিরোদের জীবনে ওদের কোনও ভূমিকাই নেই। ওদের দৌড় ওই রবিন পর্যন্ত। মানে বড় জোর সহনায়ক। আরে, ওদেরও যে একার হাতে অমন ঢিস্যুম ঢিস্যুম করতে ইচ্ছে হয়! সে সাধ মিটল, ১৯৬২-তে পিটার পার্কার’কে পেয়ে। এক দম রোগাটে একটা টিন-এজ ছেলে, হাই-স্কুলে পড়ে। পড়াশুনায় সেরা। আর বুকের মধ্যে চেপে রেখেছে একটা মারাত্মক খবর। ও-ই হল স্পাইডারম্যান। রেডিয়োঅ্যাক্টিভ মাকড়সার কামড় খেয়েছিল, সেই থেকেই আশ্চর্য সব ক্ষমতা নিয়ে ঘুরছে। দেওয়াল বেয়ে তড়বড়িয়ে উঠে পড়ে, গায়ে প্রচুর তাগদ। হাত থেকে দড়ি ছুড়ে যখন-তখন জাল বানিয়ে ফেলে। ত্রিশের দশকে ম্যাগাজিনে ‘স্পাইডার’ নামের একটা চরিত্র দেখা যেত, সেও ওরকম জাল নিয়ে ঘুরত। সেই পথে ভেবেই নাকি স্ট্যান লি আর স্টিভ ডিটকো মাকড়সা-মানুষকে তৈরি করেন। আর খানিকটা এই ব্যাটম্যান, স্পাইডারম্যানদের দেখানো রাস্তায় হেঁটে কারা এসেছে বুঝেছ? টোয়াইলাইট-এর ভ্যাম্পায়ার ছেলে এডওয়ার্ড কালেন আর নেকড়ে-মানুষ জেকব ব্ল্যাক!

হি-ম্যান
সব সুপারহিরোর শুরু গল্প দিয়ে, কিন্তু হি-ম্যানের গল্প শুরু খেলনা দিয়ে। কী রকম? ‘স্টার ওয়ার্স’-এ হ্যান সোলো চরিত্রে হ্যারিসন ফোর্ডকে দেখে সবাই মুগ্ধ। আশির দশকে এল ‘কোনান দ্য বারবারিয়ান’। কিংবদন্তি যোদ্ধা কোনানের চরিত্রে ছিলেন লৌহমানব আর্নল্ড শোয়ারজেনেগার। একটু হ্যান সোলো আর অনেকটা কোনান মিশিয়ে ম্যাটেল সংস্থা নতুন খেলনা আনল বাজারে। হি-ম্যান। পেশিবহুল শরীর, হাতে খাপখোলা তরোয়াল চকচকাচ্ছে। ঠিক সিনেমার কোনানের মতোই। পুতুল হি-ম্যানকে একটা আস্ত গ্রহের রাজপুত্তুর বানিয়ে, সাঙ্গোপাঙ্গো দিয়ে, টেলিভিশন সিরিজও চলতে লাগল। হি-ম্যান অ্যান্ড দ্য মাস্টার্স অব দি ইউনিভার্স। যেই প্রিন্স অ্যাডাম জাদু তলোয়ার ধরে বলবে, ‘বাই দ্য পাওয়ার অব দ্য গ্রে-স্কাল’, অমনি বিদ্যুৎ-টিদ্যুৎ চমকে বাজ ইত্যাদি পড়ে সে সর্বশক্তিমান হি-ম্যান হয়ে যাবে। আর ওর সঙ্গে সব খুদে ওস্তাদরা, হাতের স্কেল উঁচিয়ে, তেড়ে চেঁচিয়ে বলে উঠবে, ‘আই হ্যাভ দ্য পাওয়ার’। তার পর নিজের সরু সরু হাত টিপে-টুপে দেখা কই আমারও হল নাকি কিছু, পাওয়ার-টাওয়ার?

ব্যাটম্যান
সুপারম্যান তো অন্য গ্রহের লোক। তবে মানুষের জিত হল কই? এই আফশোস থেকেই এল ব্যাটম্যান। ১৯৩৯ সালে। লেখক বিল ফিঙ্গার, শিল্পী বব কেন। ব্যাটম্যান হল কোটি-কোটিপতি ব্রুস ওয়েন। তুখোড় বুদ্ধিমান, মার্শাল আর্টও জানে। ভাল জিমন্যাস্ট তাই দুরন্ত সব কসরত দেখায়। উঁচু বাড়ি থেকে লাফ মারে, পাহাড়ের ঢালে শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ করে, একবারও গড়িয়ে পড়ে যায় না। তার পোশাকের অনুপ্রেরণা শুধুই সুপারম্যান নয়। তখনকার দিনে দ্য মাস্ক অব জোরো, দ্য ব্যাট হুইস্পারস নামের রহস্য-রোমাঞ্চ সিনেমাগুলো খুব হিট করত। সেখানে ওরকম আলখাল্লাপরা, মুখোশওলা মানুষদের দেখা যেত। বব নাকি তাদের দেখেই ব্যাটম্যানকে এঁকেছিলেন। ব্যাটম্যানের আত্মপ্রকাশের এক বছর পরে স্রষ্টারা তাকে ছায়াসঙ্গী অ্যাসিস্ট্যান্টটি দেন। রবিন। কিন্তু ব্যাটম্যান সিরিজ জমে গেল ১৯৪০ সালে। তখন থেকেই তো হাড়হিম-বজ্জাত জোকার’টা ব্যাটম্যানকে জ্বালাতে শুরু করল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.