খেলাধুলা ১...
ওরা তিনজন
তিরিশ-বত্রিশ বছর আগের সাউথ ক্লাবের এক সকাল। আমি তখনও ডেভিস কাপ খেলছি। অফ সিজন প্র্যাক্টিসে গেছি সাউথ ক্লাবে। ট্রেনিংয়ের পর কোর্টের ধারেই চেয়ারে বসে জিরোচ্ছি। ভেস পেজের সঙ্গে বছর সাত-আটের একটা বাচ্চা ছেলে ঢুকল ক্লাবে। কালোর ওপর মিষ্টি চেহারা। বেশ ফিট। খানিকটা টেনিস খেলেই লনে গিয়ে ক্রিকেট বল পেটাতে শুরু করে দিল। তার খানিকটা পর দেখি মাঠের পিছনে ফুটবলে শট মেরে চলেছে একটার পর একটা। দেখে দারুণ লাগল। আরে! সব খেলাতেই তো বেশ সাবলীল। সহজ। ভেস পেজ হাসতে হাসতে আমাকে জিজ্ঞেস করল, “কী, আমার ছেলে কোন খেলাটা বেশি ভাল খেলে বলে তোমার মনে হয়?” এত বছর পর মনে হচ্ছে, ওই বাচ্চা বয়সেই লিয়েন্ডারের ওপর ওর বাবার কী অগাধ আস্থা ছিল যে, কোনও একটা খেলায় টপ লেভেলে যাবেই। আমারও বরাবরের বিশ্বাস, লিয়েন্ডার যদি টেনিস না খেলে ফুটবলও খেলত, তা হলেও ইন্ডিয়ার জার্সি পরত।
সাউথ ক্লাব থেকে জয়পুরের টেনিস স্টেডিয়াম। সালটা স্পষ্ট মনে আছে। ১৯৯৬। আমেরিকান কলেজ টেনিস ফেরত মহেশকে ভাল ভাবে সেই প্রথম দেখা আমার। চমকে গিয়েছিলাম ওর সার্ভিসের জোর আর সার্ভ রিটার্নের ক্ষমতা দেখে। মনে মনে বলেছিলাম, এ ছেলে ভারতীয় টেনিসের ভবিষ্যৎ। আর এক বার যদি ওই সময়ের বছর তেইশের লিয়েন্ডারের সঙ্গে বছর বাইশের মহেশের জুটির ‘জেল’টা ঠিকঠাক হয়, ভারত সর্বকালের সেরা ডাবলস টিম পেয়ে যাবে। আমার ভবিষ্যদ্বাণী যে একশোভাগ মিলে গেছে ভাবলে ভাল লাগে।
রাজস্থান থেকে আবার কলকাতা। দেশপ্রিয় পার্কে একটা সাব জুনিয়র টুর্নামেন্টে এক ফর্সা, সুন্দর দেখতে বছর এগারো-বারোর মেয়ের ফোরহ্যান্ডের অবিশ্বাস্য পাওয়ার দেখে বিশ্বাসই হচ্ছিল না যে, এ ভারতীয় মেয়ে! এ রকম ফোরহ্যান্ড স্ট্রোকে জোর তো এত কম বয়সে স্টেফি গ্রাফ-টাফের ছিল বলেই জানতাম। অনেক বছর পরে পেশাদার টেনিস সার্কিটে সানিয়ার ফোরহ্যান্ড স্ট্রোকের সঙ্গে স্টেফি গ্রাফের তুলনাই হয়েছে। কিন্তু আমার মাথায় স্টেফির নাম এসে পড়েছিল সানিয়াকে প্রথম দর্শনেই।
ওই তিন জন লিয়েন্ডার পেজ। মহেশ ভূপতি। সানিয়া মির্জা।
তিন জনের ঝগড়ায় ভারতীয় টেনিস বর্তমানে ক্ষতবিক্ষত। পান থেকে চুন খসলেও এখন ওই তিন জনের ভেতর খটাখটি লেগে যাচ্ছে। তিন টেনিস আইকনের নিজেদের মধ্যে চরম সম্পর্কহানির পরিপ্রেক্ষিতে ওদের নিয়ে ‘এক ফুল দো মালি’ টাইপ গল্পের সন্ধানও চলেছে কোনও কোনও মহলে। হিট বলিউড সিনেমার চিত্রনাট্যের মতোই ওই তিন জনের কাহিনিতেও রয়েছে বন্ধুত্ব, ভালবাসা, বিশ্বাসঘাতকতা, পুনর্মিলন, অবিশ্বাস, বিদ্বেষ, ঘৃণা। সব মিলিয়ে মুচমুচে সাড়ে বত্রিশ ভাজা।
আশ্চর্য! অলিম্পিক ডাবলসে কে কার সঙ্গে খেলবে, তা নিয়ে লি-হেশের মধ্যে তুমুল ঝামেলা। অথচ মাত্র কয়েক মাস আগে লারা দত্তের সদ্যোজাত মেয়ের ‘বেবি শাওয়ার’ অনুষ্ঠানে অনেকক্ষণ সময় কাটিয়ে এসেছে রিহা পিল্লাই। মহেশ-লিয়েন্ডারের বউদের মধ্যে এত বন্ধুত্ব। অথচ তাদের স্বামীরা ঝগড়া করে মরছে। পারে না, ওদের বউয়েরা দু’জনকে নিয়ে বসে মিটমাট করাতে? নিজেদের স্বামীদের হাতে একটা জম্পেশ সমাধানসূত্র ধরিয়ে দিতে?
রকমসকম দেখেশুনে মনে হচ্ছে, না, পারে না। পারা সম্ভব নয়। নইলে কি আর এত দিন চুপচাপ বসে থাকত লারা বা রিহা? আমার তো বরং মনে হয়, ওদের দুই বউয়ের মধ্যে বন্ধুত্বটাও বলিউডি ঢং। লোক দেখানো। আরে, পেজ থ্রি জগতে তোমায় নিজেকে সর্বদা ক্যামেরার লেন্সের সামনে দেখতে হলে বা গসিপ কলামে হেডিং পেতে হলে যার সঙ্গে তোমার চরম শত্রুতা তার সঙ্গেও পাশাপাশি দাঁড়িয়ে হাসতে হয়। গলা জড়াজড়ি করতে হয়। পেজ থ্রি জগতের এটাই রীতি।
আসলে লি-হেশের ঝামেলা যে বহু পুরনো। শুরুটা যদ্দুর জানি, মহিলাঘটিত। ন’য়ের দশকের শেষাশেষি এক মডেল-কাম মাঝারি মাপের বলিউড নায়িকাকে লিয়েন্ডার, মহেশ, দু’জনেই ডেটিং করত যে, সেটা সবাই জানে। ইগো প্রবলেম দু’জনের মধ্যে বরাবরই আছে। লিয়েন্ডার মনে করে ডেভিস কাপ টিমে ও একমেবাদ্বিতীয়ম। মহেশের আবার বিশ্বাস, ওর অবদানও এতটুকু কম নয়। ডাবলসে ওর মতো পার্টনারকে না পেলে লিয়েন্ডারের রেকর্ডকে এত ভাল দেখাত না। দু’জনে জুটি বেঁধে যতই ২৬টা এটিপি ডাবলস খেতাব জিতুক না কেন, মহেশকে সব সময় তাড়া করে বেরিয়েছে, লিয়েন্ডারের ড্রইংরুমের শো-কেসে অলিম্পিক মেডেল আছে। তার আলমারিতে নেই। জীবনের শেষ অলিম্পিকে মহেশ তাই এতটা মরিয়া। যে ভাবে হোক সেরা টিম গড়ে খেলে ডাবলসে যদি একটা ব্রোঞ্জও জেতা যায়।
মহেশকে এতটা স্বার্থপরতা দেখাতে ‘সাহায্য’ করেছে লিয়েন্ডারই। গত নভেম্বরে নিজের তৎকালীন পার্টনার মহেশকে কিছু না জানিয়ে লুকিয়ে-লুকিয়ে বোপান্নাকে অফার দিয়েছিল লিয়েন্ডার, “চল্, আমরা একসঙ্গে অলিম্পিকে খেলি। অপেক্ষাকৃত তরুণ পা পেলে আরও ভাল করব।” মহেশ এটাকেই ওর পিঠে লিয়েন্ডারের ছুরি মারা বলেছে। খুব কি ভুল বলেছে? এর পরে মহেশ যদি পালটা কূটনীতি দেখিয়ে বোপান্নাকে নিজের নৌকোয় তুলে নেয়, তা হলে কি ওর একার দোষ? কে ওকে ও রকম করতে প্ররোচিত করেছে সেটা এক বার বোধহয় ভাবা দরকার।

লারা

রিহা
লন্ডনে সানিয়ার সঙ্গে কথা বলে পরিষ্কার বুঝতে পারলাম, ও মহেশের ওপরও বেজায় চটে আছে। লিয়েন্ডারের সঙ্গে তো মহেশ-বোপান্নাদের মতোই সানিয়াও গত কয়েক মাস যাবৎ কথা বলে না। কিন্তু মহেশের সঙ্গে খেলে তো গত মাসেই গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছে। উইম্বলডনেও দু’জনে একসঙ্গে মিক্সড ডাবলস খেলল। কিন্তু এগুলোর সঙ্গে অলিম্পিক-বিতর্কটা গুলিয়ে ফেললে চলবে না। সানিয়ার যথার্থই মনে হয়েছে যে, অলিম্পিকে ডাবলসে বোপান্নাকে পার্টনার পেতে মহেশ মিক্সড ডাবলসে তাকে বলি দিতে পিছপা হয়নি। বোপান্না ছাড়া কারও সঙ্গে অলিম্পিক ডাবলসে খেলব না এটা মহেশ গত পনেরো দিনে কয়েকশো বার বলেছে।
কিন্তু এক বারও বলেনি যে, অলিম্পিকে মিক্সড ডাবলসে তাকে আর সানিয়াকে যদি জুটি করে না পাঠানো হয়, তা হলে ও অলিম্পিকেই যাবে না। অন্য দিকে আবার লিয়েন্ডারকে ঠান্ডা করে অলিম্পিকে পাঠাতে তার মিক্সড ডাবলসে সানিয়াকে চাই। “নইলে ডাবলসে বিষ্ণুর মতো জুনিয়রকে নিয়ে খেলব না”র আব্দার মেনে নিয়েছে এআইটিএ। যতই সানিয়া-লিয়েন্ডার জুটির অলিম্পিকে পদক জেতার সম্ভাবনা কম থাক না কেন। এর পরে ভারতীয় খেলাধুলোর জগৎকে সানিয়া ‘পুরুষতান্ত্রিক’ বললে ওকে সেই মন্তব্যের জন্য কী করে দোষ দেব?
যেটা আমায় বারবার ভাবাচ্ছে, সেটা হল লিয়েন্ডারের পার্টনার হতে কেউই চাইছে না কেন? মহেশ, বোপান্না, সানিয়া কেউ না! লিয়েন্ডার খুব গর্ব করে যে, তেইশ বছরের পেশাদার জীবনে ও ডাবলস সার্কিটে একশো জন পার্টনারের সঙ্গে খেলেছে। খুব ভাল কথা। কিন্তু মুদ্রার উলটো পিঠও আছে। কারও সঙ্গে বেশি দিন বনাবনি হয় না বলেই কি লিয়েন্ডারের এত জন পার্টনার? বিদেশি পার্টনাররা যেটা বলেনি, বা বলার দরকার পড়েনি তাদের, সেটাই বলে দিয়েছে লিয়েন্ডারের দেশজ পার্টনাররা। “ওর সঙ্গে খেলব না।” মহেশের একটা বড় গুণ, সোজাসাপটা কথা বলে। পেটে এক, মুখে আর এক নয়। অপ্রয়োজনে কারও সঙ্গে মিষ্টি-মিষ্টি কথা বলে না। ভারতীয় টেনিসে কেউ কেউ যা করে থাকে নিজেদের স্বার্থে। কিন্তু এক দিন না এক দিন সেই খেলায় ধরা পড়ে আবিষ্কার করে নিজে একঘরে হয়ে গেছে। বছর পনেরো আগে ভারতের এক সফল নন প্লেয়িং ক্যাপ্টেনকে বাধ্য হয়ে রেজিগনেশন দিতে হয়েছিল লিয়েন্ডারের কলকাঠি নাড়াতেই। দেড় যুগ পরে নিজের সেই ওষুধেই লিয়েন্ডারকে ধরাশায়ী দেখাচ্ছে। আর সেই নন প্লেয়িং ক্যাপ্টেন এখন মুচকি হাসছে।
লেখাটা তৈরি করতে বসে বারবার ফিরে আসছে ওই তিন জনকে আমার প্রথম দেখার আরও স্মৃতি।
লিয়েন্ডারের বয়স তখন ছয় কী সাত। ভীষণ জেদি। এক বার যেটা করবে ভাববে সেটা করেই ছাড়বে। খুব ফোকাসড্। তবে খামখেয়ালি গোছের। এখন এক রকম ভাবছে, পরক্ষণেই আবার সম্পূর্ণ উলটো ভাবনা। পরে যখন বিজয় অমৃতরাজ চেন্নাইয়ে ‘ব্যাট’ খুলেছিল, আমার কাছে জানতে চেয়েছিল, কলকাতায় সে রকম ট্যালেন্টেড বাচ্চা কেউ আছে কি না। আমি তখন লিয়েন্ডারের নাম বলেছিলাম বিজয়কে। ওর অ্যাকাডেমিতে নেওয়ার জন্য।
মহেশের বাবা কৃষ্ণ ভূপতি বেশ ভাল ডাবলস খেলত। ঘরোয়া টুর্নামেন্টে শ্যাম মিনোত্রার পার্টনার ছিল। আমি তখন সিনিয়র সার্কিটে নিয়মিত খেলি। সে সময় কৃষ্ণর সঙ্গে আমার আলাপ। পরে ব্যবসার কাজে ও মাস্কাটে চলে যায়। মহেশ চলে যায় আমেরিকান কলেজ টেনিসের জগতে। যখন ফিরে এল আমি ইন্ডিয়া ডেভিস কাপ টিমের নন প্লেয়িং ক্যাপ্টেন। জয়পুরে আমি প্রচুর ঝুঁকি নিয়ে ওকে ওয়ার্ল্ড গ্রুপ টাইয়ে সিঙ্গলস, ডাবলস, দুটোতেই খেলিয়েছিলাম। জিশান আলিকে টিম থেকে বাদ দিয়ে। অনেকে অনেক কথা বলেছিল আমার বিরুদ্ধে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে ম্যাচটা ‘মহেশ-টাই’ হিসেবেই চিরকাল রয়ে গেছে। তিনটে ম্যাচেই জিতেছিল মহেশ। এমনকী ২-২ অবস্থায় ভয়ঙ্কর চাপের মধ্যে শেষ সিঙ্গলসটাও।
সানিয়াদের পরিবারের সঙ্গে বিখ্যাত ক্রিকেটার গুলাম আমেদের আত্মীয়তা আছে। সানিয়ার বাবা ইমরান সে জন্য ক্রিকেট মাঠে খুব আসত। মুম্বইয়ের ক্রিকেট মাঠেই ওর সঙ্গে আমার পরিচয়। সত্যি বলতে কী, ইমরানের মেয়ে যে দেশি কোচেদের ট্রেনিং নিয়ে পেশাদার সার্কিটে এত উঁচুতে উঠবে গোড়ার দিকে আমি ভাবতে পারিনি। সিঙ্গলসে এক সময় প্রথম তিরিশে। ডাবলসে এখনই ১৪টা ডব্লিউটিএ খেতাব। মিক্সড ডাবলসে দু’টো গ্র্যান্ড স্লাম। আমি নিশ্চিত, সানিয়া যদি ঠিক সময়ে আরও উন্নত, আধুনিক কোচিং পেত, বিদেশে ট্রেনিং করতে পারত, তিন-তিনটে অস্ত্রোপচার করাতে না হত, আরামসে সিঙ্গলসে বিশ্বের প্রথম দশে উঠে আসত।
সানিয়া বরাবরের ভীষণ লাজুক মেয়ে। কখনও কারও বিরুদ্ধে মুখ খোলে না। নিজের খেলার প্রতি প্রচণ্ড আন্তরিক। ভদ্র কিন্তু খুব কঠিন মানসিকতা। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করতে পিছপা নয়। সেই মেয়ে অলিম্পিক ইস্যুতে ও রকম আক্রমণাত্মক স্টেটমেন্ট দেওয়াতে আমি সত্যিই যারপরনাই অবাক। এখনও বিশ্বাসই করতে পারছি না, এত কড়া কড়া কথা সানিয়া বলেছে। আসলে লি-হেশ ঝগড়ায় অনাবশ্যক ভাবে ওর নিজের নাম জড়িয়ে পড়ায় সানিয়া সত্যিই প্রচণ্ড কষ্ট পেয়েছে। সানিয়ার মনে হওয়া মোটেও বিচিত্র নয় যে, অলিম্পিকে নিজেরা ভাল পার্টনার পেতে লি-হেশ দু’জনেই ওকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করেছে।
মহেশ আবার ভীষণ ‘মেটিকুলাস’। যে কাজটাই করে আটঘাঁট বেঁধে, অনেক পরিকল্পনা নিয়ে করে। লিয়েন্ডারের সঙ্গে ও ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্ন’-এ পৌঁছে গেছে। লি-হেশের ‘লাভ অ্যান্ড হেট’ সম্পর্ক নিয়ে উইম্বলডন চত্বরে হাসাহাসি চলছে। আমাকে অন্তত আট-দশ জন বিদেশি প্লেয়ার আর প্রবাসী ভারতীয় চিমটি কেটেছে— “ওদের এই গত বছর গলায়-গলায় ভাব। কোর্টে বিগ পয়েন্ট জেতার পরে বুকে-বুকে ঠোকাঠুকি করা। আর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই একে অন্যের বাপান্ত করে ছাড়ছে! এরা কি চল্লিশে পা দেওয়ার মুখে এসেও এখনও অপরিণত? নাকি চরম স্বার্থপর? দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিতেও কিস্যু যায়-আসে না!
মহেশকে মোটেও ক্লিনচিট এই কেসে দেওয়া যায় না। অতীতে লি-হেশ অনেক বার খটাখটি লেগেছে। কিন্তু মহেশ ভূপতিকে এতটা উগ্র মেজাজে কখনও দেখা যায়নি। এ বার মহেশের এতটা উগ্রতার পিছনে কারণ মনে হয় লারা দত্ত ভূপতি। মহেশের ব্রহ্মাণ্ডসুন্দরী স্ত্রীর রাজনৈতিক মহলে ‘সোর্স’ যথেষ্ট। নিজেকে ক্ষমতাবান দেখতে ভালবাসে। কিছু পেতে সংশ্লিষ্ট শিবিরের ওপর রাজনৈতিক চাপ দিতে কুণ্ঠাবোধ করে না। মহেশ সেই জিনিসগুলোই অনুসরণ করেছে অলিম্পিক ইস্যুতে। ‘পতি পরম গুরু’ হয়ে থাকলে ‘পত্নী পরম গুরু’ হতে দোষ কী?
যে কোনও বিতর্কে মহেশের একটা খুব পছন্দের ‘কোট’ আছে। “নেভার সে নেভার!” কোনও ঝামেলাই চিরকালীন নয়। কোনও বন্ধুত্বও চিরকালীন নয়। কাল পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে আজ কেউ বলতে পারে না। এ বারও মহেশকে ভবিষ্যতে লিয়েন্ডারের সঙ্গে পুনর্মিলন ঘটবে কি না জিজ্ঞেস করায় ও বলেছে, “নেভার সে নেভার।” কিন্তু আমি নিশ্চিত এ বার ওদের ছাড়াছাড়ি ‘ফরএভার’! এত কুৎসিত ভঙ্গিতে ওদের দু’জনের মধ্যে এর আগে কখনও লাগেনি। এর পরে কোনও লোকের সামান্যতম আত্মসম্মান থাকলে সে সন্ধির হাত বাড়াবে না।
আমার যা মনে হচ্ছে, অলিম্পিকের পরেই লিয়েন্ডার অবসর নিয়ে ফেলবে। টিমমেটদের এতটা বিদ্বেষী মনোভাবের মধ্যে কোনও প্লেয়ারের পক্ষে একই লকাররুম ‘শেয়ার’ করা অসম্ভব। ছ’বছর আগে লিয়েন্ডারের ক্যাপ্টেন্সির প্রতি দলের অন্য সদস্যরা অনাস্থা প্রকাশ করায় ও ডেভিস কাপ দলের নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়েছিল। আর এ বার লিয়েন্ডারকে সঙ্গেই চাইছে না মহেশরা। অলিম্পিকের পরপরই ভারতের ডেভিস কাপ ম্যাচ। এআইটিএ নিজেদের মেরুদণ্ডের পরিচয় রেখে মহেশ-বোপান্নাকে জাতীয় দল থেকে সাসপেন্ড করলে অন্য কথা। নইলে ভারতের ডেভিস কাপ দলে ভূপতি-শাসনকাল শুরু হতে চলেছে। পেজ-যুগের সমাপ্তি হয়তো সময়ের অপেক্ষা।
আর এর পরেও ডেভিস কাপ টিমে লি-হেশ একসঙ্গে থাকলে? লকাররুম-কেলেঙ্কারি অনিবার্য!

অনুলিখন: সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায়


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.