প্রতিটি নির্বাচনের সময় সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের মুখে বার বার শোনা গিয়েছে, এ বার তাঁদের প্রার্থী জিতলে তাঁর প্রথম কাজ হবে এই সেতুর নির্মাণ। সেতু তৈরি করে দেওয়ার এমন বার বার প্রতিশ্রুতির মধ্যেই রাজ্যে ক্ষমতার হাতবদল হয়ে গিয়েছে। ক্ষমতায় আসার পরে নতুন সরকারের এক বছর পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেতু তৈরি নিয়ে আগের সরকারের আমলে যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল বাসিন্দাদের, নতুুন সরকারের কাছেও তার বেশি কিছু পাননি তাঁরা। বস্তুত, দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা ব্লকে হাতানিয়া-দোয়ানিয়া নদীর উপরে সেতু তৈরি নিয়ে প্রশাসনের টালবাহানায় ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষ সেতুর আশাই ছেড়ে দিয়েছেন। যদিও রাজ্যের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র বকখালিতে সুষ্ঠুভাবে পৌঁছতে নদীর উপরে সেতু তৈরি হওয়াটা জরুরি বলেই মনে করেন অনেকে।
হাতানিয়া-দোয়ানিয়া নদীর এক দিকে নারায়ণপুর, অন্য দিকে নামখানা বাসস্ট্যান্ড। নদীটি চওড়া প্রায় দু’শো মিটার। নারায়ণপুর থেকে যন্ত্রচালিত নৌকায় করে নামখানা ঘাটে পারাপার চলে। নামখানা ব্লকের ৫টি পঞ্চায়েতে বর্তমান জন সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৮১ হাজার। ওই ব্লকে রয়েছে রাজ্যের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র বকখালি। বকখালিতে রাজ্য পর্যটন দফতরের ট্যুরিস্ট লজ ছাড়াও রয়েছে অনেক বেসরকারি হোটেল। রয়েছে বন দফতরের অফিস। নামখানা ও ফ্রেজারগঞ্জ কোস্টাল থানা। ৩০টি হাইস্কুল ছাড়াও রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়, ব্লক অফিস, ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ৩টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। |
কলকাতা, কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার থেকে নিত্য যাতায়াত করতে হয় ওই সব সরকারি স্কুল ও প্রতিষ্ঠানগুলিতে। সে ক্ষেত্রে বাসে করে এলে হাতানিয়া-দোয়ানিয়া নদী নৌকায় পারাপার করতে হয়। অন্যথায় গাড়িতে যাতায়াত করতে হলে বার্জে গাড়ি পার করে নামখানায় পৌঁছতে হয়। নদীতে ভাটার সময় বার্জে গাড়ি পারাপারের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। সমুদ্র সৈকতে ও বকখালির জঙ্গল দেখতে সারা বছর ধরে মূলত শীতের মরসুমে প্রচুর পর্যটক বকখালি আসেন। কিন্তু সেতু না থাকায় নৌকায় এবং গাড়ি নিয়ে এলে বার্জে পারাপারের জন্য বহু সময় লেগে যায়। অথচ সেতু তৈরি হলে সরাসরি গাড়ি নিয়ে পর্যটকেরা দ্রুত বকখালি পৌঁছে যেতে পারতেন। শুধু পর্যটকেরা নন, সেতু না থাকায় স্থানীয় মানুষেরও প্রচণ্ড সমস্যা হচ্ছে। দিনভর নৌকার পারাপার করা গেলেও রাতে পারাপারে সমস্যা বাড়ে। কারণ, রাত দশটার পর ওই নদীতে নৌকা পারাপার বন্ধ হয়ে যায়। ফলে নামখানা এলাকার কোনও মুমূর্ষু রোগীকে কাকদ্বীপে বা ডায়মন্ড হারবার মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসার জন্য নৌকা পাওয়া যায় না। যদি পাওয়া যায়, তবে অনেক বেশি টাকা ভাড়া গুনতে হয়। সমস্যা আরও রয়েছে। নামখানা এলাকার কোনও রোগী কাকদ্বীপ কিংবা ডায়মন্ড হারবার মহকুমা হাসপাতালে মারা গেলে তাঁর মৃতদেহ বাড়ি নিয়ে যেতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় পরিবারের লোকজনদের। কারণ, বেশিরভাগ নৌকা মৃতদেহ বহন করতে রাজি হয় না।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, নির্বাচন এলেই সব দলই প্রতিশ্রুতি দেয় সেতু করে দেওয়ার। প্রতিশ্রুতি শুনতে শুনতে অনেকেই মারা গিয়েছে। নেতাদের ওই প্রতিশ্রুতি আসলে যে ফাঁকা আশ্বাস তা হাড়ে হাড়ে বুঝছেন তাঁরা। স্থানীয় বাসিন্দা বৃদ্ধা কমলা গায়েন, জয়ন্তী মণ্ডল বা অজয় জানাদের আক্ষেপ, এ জীবনে বোধহয় তাঁদের আর সেতু দেখা হবে না॥ নামখানা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি কংগ্রেসের কুমারেশ পন্ডা জানান, স্বাধীনতার পরে ৬৫ বছর পার হলেও এখনও সেতু পেল না নামখানা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে আবেদন, এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে তিনি যেন সেতুটি নির্মাণের ব্যাপারে উদ্যোগী হন। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী চৌধুরীমোহন জাটুয়া বলেন, “সেতু নির্মাণের জন্য কেন্দ্র ১৮০ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে। সেতু নির্মাণের পরিকল্পনার ক্ষেত্রে কিছু ত্রুটি থাকায় তা ঠিক করে ফের দিল্লিতে পাঠানোর ব্যবস্থা হয়েছে। তা অনুমোদন পেলেই সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে। এ বিষয়ে পূর্ত ও সড়ক দফতরের মন্ত্রীর সঙ্গেও কথা হয়েছে।” |