উত্তর কলকাতা
পুর-উদ্যোগ
পা বাড়ালেই বন
নানা রকমের গাছে সেজে উঠছে শহরের এক বনবীথি। নিজেদের পার্কেই প্রথম বার শহরভিত্তিক বনসৃজনের এ হেন উদ্যোগ কলকাতা পুরসভার। উত্তর কলকাতার টালা পার্কে এই প্রকল্প রূপায়ণ করছে কলকাতা পুরসভার উদ্যান বিভাগ। শহরের বিভিন্ন পার্কে অথবা ফাঁকা জায়গায় এই ধরনের বনসৃজন করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভা।
মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার বলেন, “কলকাতা পুরসভার উদ্যোগে এই ধরনের বনসৃজন এই প্রথম। এর আগে রাজ্য বন দফতর বিভিন্ন এলাকায় এই ধরনের প্রকল্প করেছে ঠিকই। কিন্তু এ ভাবে এত রকমের গাছ একটি নির্দিষ্ট জায়গায় রোপণ করা হয়নি। ফাঁকা জায়গা পেলে আমরা এই ধরনের আরও কিছু উদ্যান তৈরি করব।”
পুরসভার উদ্যান দফতর সূত্রে খবর, টালা পার্কের একাংশে ফাঁকা জায়গায় চারপাশ ঘিরে অন্তত ১৬টি ভিন্ন প্রজাতির প্রায় পাঁচশো গাছ লাগানো হয় ২০১০-এ। গত বছর এবং এ বছরেও আরও বেশ কিছু গাছ লাগানো হয়েছে। যে সমস্ত গাছ এখানে লাগানো হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে আম, জাম, পেয়ারা, সবেদা, লিচু, লেবু, চালতা, জামরুল, নিম, মেহগনি, সেগুন, কদম, ছাতিম, শিরীষ, রাধাচূড়া প্রভৃতি। প্রায় দু’বিঘা জমিতে এই বনবীথি গড়ে তুলতে খরচ হয়েছে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা।
দেবাশিসবাবু জানান, শহরের বিভিন্ন জায়গায় নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে গাছের সংখ্যা কমেছে। পরিবর্তে সমসংখ্যক গাছ রোপণও করা হয়নি। এই পরিস্থিতিতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতেই বনসৃজনের এই পরিকল্পনা। টালা পার্কের মতো ফাঁকা জায়গায় এই ধরনের বনবীথি তৈরি করাও সহজ। কারণ এই পার্ক পুরসভারই। ফলে অন্য কোনও দফতরের অনুমতির প্রয়োজন নেই। তবে, অন্যান্য জায়গায় পার্ক থাকলেও জায়গার অভাবে এই ধরনের বনবীথি গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানালেন দেবাশিসবাবু।
পুরসভার এক আধিকারিক জানান, ২০০৫ সালের পরে সৌন্দর্যায়নের উদ্দেশ্যে পূর্ব কলকাতার মানিকতলার খালপাড় ধরে বেলেঘাটা পর্যন্ত অংশে নারকেল, শিরীষ-সহ বেশ কিছু গাছ লাগিয়েছিল পুরসভার উদ্যান বিভাগ। পরে পূর্ব কলকাতার ধাপাতেও কিছু নারকেল গাছ লাগানো হয়।
২০০০ সালের পর তৎকালীন পুরবোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, শহরের বিভিন্ন রাস্তার ধারে আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা-সহ নানা রকম ফলের গাছ লাগানো হবে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ছাড়াও, নানা ধরনের পাখিকেও আকৃষ্ট করা সম্ভব হবে। পরে অবশ্য পুরকর্তৃপক্ষ এই ধরনের সিদ্ধান্ত বাতিল করেন।
রাস্তার ধারে এই ধরনের ফলের গাছ লাগালে ফল চুরি এবং ফল চুরি করতে গিয়ে শহরে দুর্ঘটনার প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা থেকেই তা করা হয়। পাশাপাশি, ঘন বনবীথি তৈরির জন্য যে পরিমাণ জায়গা দরকার, তা-ও পাওয়া যায়নি। তার পর থেকেই শহরে ফলের গাছ লাগানোর পুর-পরিকল্পনা কার্যত বাতিল হয়ে যায়। তবে, ফুলের গাছ এবং নিম, শিরীষ গাছ লাগানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, বট বা অশ্বত্থ গাছ পোঁতা বন্ধ করেছিল পুরসভা। আয়লার পরে ঝড়ে উপড়ে যেতে পারে, এমন কোনও বড় গাছ লাগানোর ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন পুর-কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু টালা পার্কের এই নতুন বনবীথি থেকেও তো ফল চুরির সম্ভাবনা থাকতে পারে? তা ছাড়া এই বনবীথি যেখানে হচ্ছে, তার পাশে পুরসভারই অন্য একটি পার্ক জবরদখল করে রয়েছেন বেশ কিছু ঝুপড়িবাসী। তাঁরা এই পার্কেও ঢুকে পড়ে জবরদখল করতে পারেন, সেই ভয়ের পাশাপাশি বনবীথি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও করছেন পুর-কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় কাউন্সিলর এবং ১ নম্বর বরো চেয়ারম্যান তরুণ সাহা বলেন, “যে পার্কটি ঝুপড়িবাসীরা জবরদখল করেছেন, সেখান থেকে তাঁদের সরিয়ে মাঠের চার দিকে পাঁচিল দেওয়া হবে। রেলিং দিয়ে ইতিমধ্যেই বনবীথি ঘিরে রাখা রয়েছে। এ ছাড়া, বনবীথি পাহারার জন্য রক্ষীরও ব্যবস্থা রয়েছে।”

ছবি: দেবস্মিতা চক্রবর্তী




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.