|
|
|
|
|
|
|
বঙ্গে বাণিজ্য |
গুঁড়ো থেকে শুরু
গৌতম বসুমল্লিক |
|
আজ থেকে একশো সাতাত্তর বছর আগে শুরুটা হয়েছিল গান-পাউডার আর ছররা বন্দুকের গুলি বিক্রি দিয়ে। এখন তা ভারতের অন্যতম প্রাচীন বন্দুকের দোকান হিসেবেই পরিচিত। বাঁকুড়ার কোতুলপুর থেকে ভাগ্যান্বেষণে কলকাতায় আসেন রামনারায়ণ দাঁ। তাঁরই এক উত্তরপুরুষ নরসিংহচন্দ্র ১৮৩৫-এ ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওল্ড চিনেবাজার স্ট্রিটে দোকান খুললেন বন্দুকের। দোকানের নাম ‘নরসিংহচন্দ্র দাঁ অ্যান্ড কোং, গান অ্যান্ড রাইফেল মেকার্স’।
|
|
কিন্তু সব ছেড়ে বন্দুক কেন? নরসিংহচন্দ্রের উত্তরপুরুষ, দোকানের এখনকার অন্যতম স্বত্বাধিকারী অরুণকৃষ্ণ দাঁ বলেন, ‘‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে ভারত জুড়ে ছিল অনেক দেশীয় রাজ্য। তাদের মধ্যে রেষারেষিও কম ছিল না। ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং রাজ্যের সুরক্ষার প্রয়োজনে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দেশীয় রাজা ও তাঁদের প্রতিনিধিরা আসতেন বন্দুক, গুলি-গোলা কিনতে। শিকারের বন্দুক তো ছিলই। বন্দুক-গুলির সঙ্গে লাইসেন্সও তখন আমাদেরই করিয়ে দিতে হত। সেই সব রাজাদের কল্যাণে অচিরেই দাঁড়িয়ে গেল নরসিংহচন্দ্রের বন্দুকের দোকান।’’ চিনেবাজারের ছোট জায়গা ছেড়ে দোকান উঠে এল সাবেক ডালহৌসি স্কোয়ার ইস্ট অঞ্চলে, এখন ঠিকানা ৬৪এ হেমন্ত বসু সরণি।
ক্রমে একনলা ও দোনলা ‘মাদার লোডিং গান’ বিক্রি আরম্ভ হল। একেবারে প্রথম যুগের ওই বন্দুকে গুলি বের হওয়ার মুখ দিয়েই গান-পাউডার (বারুদ), টিকলি, ছিটে (লোহার টুকরো) ও ভুসি পুরে দেওয়া হত। তার পরে ট্রিগার টানলে ওই নল দিয়েই ‘ছিটে’ বা গুলি ছুটে যেত লক্ষ্যে। |
|
সিপাহি-যুদ্ধের সময় এল ‘ব্রিচ লোডিং গান’ বা টোটাদার বন্দুক এবং রিভলভারও। ওই বন্দুকে গুলি আর বারুদ আলাদা করে ভরতে হত না, টোটার মধ্যেই পোরা থাকত গুলি-বারুদ। এক বা দোনলা বন্দুকের পিছন দিকে ওই টোটা ভরে ট্রিগার টানলে গুলি ছুটে যেত। ছোট এক রকম কামানও তাঁরা বিক্রি করতেন। উইনচেস্টার রিপিটিং আর্মস কোম্পানির তৈরি মাত্র ১৭ ইঞ্চি লম্বা সেই কামান দেগেই আজও সূচনা হয় দাঁবাড়ির সন্ধিপুজো।
সে যুগে এ দেশে ব্যক্তিগত মালিকানার বন্দুক তৈরির কারখানা ছিল না। ইংলন্ড ও জার্মানি থেকে আমদানি করতে হত বন্দুক ও তার বিভিন্ন সরঞ্জাম। কলকাতায় আর বি রডা অ্যান্ড কোং, ম্যান্টন অ্যান্ড কোং নামের সব সাহেবি দোকানও ছিল বন্দুক বিক্রির। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই ব্যবসা করতে হত নরসিংহচন্দ্র দাঁয়ের দোকানকে। নরসিংহচন্দ্রের পরে ব্যবসার হাল ধরেন তাঁর তিন ছেলে আশুতোষ, নীলমাধব ও নন্দলাল। চাহিদা বাড়তে থাকায় বড় ছেলে আশুতোষ ধর্মতলার মোড়ে ‘এ টি দাঁ অ্যান্ড কোং’ নামে নতুন দোকানও খোলেন। |
|
স্বাধীনতার পরে লুপ্ত হয় দেশীয় রাজ্যগুলি। জমিদারি-বিলোপ আইনের ফলে জমিদারেরাও আর থাকলেন না। আইন করে বন্ধ করে দেওয়া হল বন্যপ্রাণী শিকারও। স্বাভাবিক ভাবেই এর প্রভাব পড়ল বন্দুক ব্যবসায়ীদের উপরে। এখন ব্যবসা চলে? অরুণবাবু জানালেন, ‘‘বন্দুকের চাহিদা এখনও আছে। রাজ্যের ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এখন অনেক নতুন দোকানও হচ্ছে। সেখানেও আমরা বন্দুক সরবরাহ করি।’’ এ ছাড়া, তিনি জানান, বিভিন্ন ব্যবসায়ী, বিখ্যাত ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতাদের সুরক্ষার জন্য তৈরি হওয়া বিভিন্ন সিকিউরিটি এজেন্সি বা ওই রকম সংস্থার প্রয়োজনীয় বন্দুকও যায় এখান থেকে। পাশাপাশি রয়েছে নানা রকম এয়ারগান বিক্রি। এই বন্দুক কিনতে লাইসেন্স লাগে না, দামও কম। |
|
|
|
|
|