|
|
|
|
|
|
সিভিক পুলিশ |
নিধিরাম |
শান্তনু ঘোষ |
সিপিভিএফ লেখা আকাশি রঙের গেঞ্জি। মাথায় নীল টুপি। হাতে ছোট লাঠি বা ভাঙা বাঁশ। এই সম্বল করেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাওড়া শহরের রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণ করছেন এক দল যুবক।
তাঁরা হাওড়া সিটি পুলিশের ‘সিভিক পুলিশ ভলান্টিয়ার ফোসর্’ বা গ্রিন পুলিশ। ঊর্দিধারী ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি প্রতি দিন তাঁরাও যান নিয়ন্ত্রণ করছেন। ট্রাফিক আইন অমান্য করলে গাড়ি দাঁড় করিয়ে কেস দেওয়ার জন্য পুলিশ অফিসারকে সাহায্য করা, বেআইনি পার্কিং সরানো, একমুখী রাস্তায় গাড়ি ঢোকা আটকানো, যানজট সরানো, রাস্তার ধারে রিকশা, ঠেলা দাঁড়াতে না দেওয়া সবই করতে হয় এঁদের। কিছু সিপিভিএফ কর্মী ট্রাফিক গার্ডে লেখালেখি, কম্পিউটারেও কাজ করেন।
|
|
কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দা এবং নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, এই যুবকেরা কার্যত নিধিরাম সর্দার। অনেক সময়েই যানচালকেরা সিপিভিএফ কর্মীদের নির্দেশ অমান্য করেন। রয়েছে প্রশিক্ষণের অভাবও। অবশ্য সিপিভিএফ কর্মীদেরও একাংশ জানান, চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে দশ দিনের প্রশিক্ষণ হয়। কিন্তু তাতে সব খুঁটিনাটি শেখা সম্ভব হয় না।
২০১১-র সেপ্টেম্বরে তৈরি হয়েছিল হাওড়া পুলিশ কমিশনারেট। এর পরেই পুলিশ শহরের যান নিয়ন্ত্রণ ও গতি বাড়ানোর দিকে নজর দেয়। সেই উদ্দেশ্যেই ২০১২-র জানুয়ারিতে প্রথম ৫০০ জন সিপিভিএফ কর্মী নিয়োগ করে হাওড়া সিটি পুলিশ। এর পরে কর্মীর সংখ্যা আরও বাড়ানো হয়। বর্তমানে সিপিভিএফ কর্মীর সংখ্যা প্রায় এক হাজার।
অভিযোগ, প্রশিক্ষণের অভাবের পাশাপাশি রয়েছে আরও নানা সমস্যা। সিপিভিএফ কর্মীরা জানান, প্রথম তাঁদের টুপি দেওয়া হয়। সম্প্রতি গেঞ্জি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দু’টি করে বরাদ্দ থাকলেও মিলেছে একটি করে গেঞ্জি। ফলে নোংরা হলেও কিছু করার থাকছে না। এই কর্মীদের পরিচয়পত্রও নেই। সমস্যা রয়েছে বেতন নিয়েও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিপিভিএফ কর্মী বলেন, “বেতন ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েক মাসের টাকা এখনও বাকি রয়েছে।”
|
|
সিপিভিএফ কর্মীরা জানান, চড়া রোদের মধ্যেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাজ করতে হচ্ছে। তাঁদের জন্য কোনও ছাতা কিংবা রোদ চশমা বরাদ্দ হয়নি। বর্ষা চলে এলেও বর্ষাতি আসেনি। তা ছাড়া যানচালকদের হাতে সিপিভিএফ কর্মীরা আক্রান্তও হচ্ছেন। এক সিপিভিএফ কর্মী বলেন, “আমাদের ‘নো ওয়ার্ক নো পে’। তাই ছুটি নেওয়ারও সুযোগ নেই। প্রতি দিন এক ভাবে ৮ ঘণ্টা কাজ করতে গিয়ে শরীরেও ধকল পড়ে। তার উপর রয়েছে পরিকাঠামোর সমস্যা।”
তবে সিপিভিএফ কর্মীদের একাংশের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, কিছু পুলিশকর্মী সিপিভিএফ কর্মীদের একাংশকে গাড়ি থেকে টাকা তোলার কাজে ব্যবহার করেন। অনেকে বেআইনি কাজও করেন। যেমন, সম্প্রতি বালি রাজচন্দ্রপুরে লরি আটকে টাকা তুলতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন এক সিপিভিএফ কর্মী। |
|
হাওড়া সিটি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (ট্রাফিক) অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, “সিপিভিএফ কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও পরিকাঠামোর বিষয়ে আরও পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এক এক করে সবই বাস্তবায়িত হবে। সম্প্রতি এই কর্মীদের জন্য বিমা চালু করা হয়েছে।” টাকা তোলার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি জানান, কারও বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ এলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। |
|
|
|
|
|