পুরসভার অ্যাসেসমেন্ট বিভাগের আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তদন্ত শুরু হলেও আদতে কোনও অগ্রগতি হয়েছে কি না তা পুর কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট জানাতে পারছেন না। কবে তদন্ত শেষ হবে তাও পুর কর্তৃপক্ষের কাছে অস্পষ্ট। এমতাবস্থায় ওই অভিযোগ জানানো নিয়ে শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত, মেয়র পারিষদ দেবশঙ্কর সাহা ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুজয় ঘটকের মধ্যে মতবিরোধ শুরু হয়েছে। তিনজনই কংগ্রেস কাউন্সিলর। গঙ্গোত্রীদেবী ও দেবশঙ্করবাবুর দাবি, পুরসভার এক কর্মীর বিরুদ্ধে ওঠা আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ প্রথমে তাঁদের কাছে জানাননি সুজয়বাবু। পক্ষান্তরে, সুজয়বাবুর দাবি, তিনি মেয়র ও মেয়র পারিষদকে জানানোর পরেই কমিশনারকে চিঠি দিয়ে তদন্তের দাবি করেছেন। এই চাপানউতোরের জেরে কংগ্রেসের কাউন্সিলরদের একাংশও বিরক্ত। ক্ষুব্ধ কাউন্সিলরদের অনেকেই জানান, দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে তা মেয়রকে জানানোই প্রথা। এ ক্ষেত্রে তেমন হয়েছে কি না সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার দরকার। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুজয়বাবু দাবি করেছেন, পুরসভার অ্যাসেসমেন্ট বিভাগের এক কর্মীর বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির স্পষ্ট অভিযোগ পেয়েই তিনি মেয়র গঙ্গোত্রী দেবী ও মেয়র পারিষদ দেবশঙ্করবাবুকে মৌখিক ভাবে জানিয়েছেন। সুজয়বাবুর দাবি, “কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, উল্টে আমি ওই পুরকর্মীকে ‘ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি’ দিয়েছেন বলে মিথ্যে অভিযোগ তোলা হয়। সে জন্যই পুর কমিশনারের কাছে লিখিত ভাবে তদন্তের দাবি জানিয়েছি।” ঘটনায় বিরক্ত মেয়রও। তিনি বলেন, “অভিযোগ লিখিত ভাবে আমাকে জানানো হয়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে পুর কমিশনার বিভাগীয় তদন্ত করছেন। দোষী প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউন্সিলর কর্মীকে ‘হুমকি’ দিয়েছেন কি না তাও দেখা হচ্ছে।” মেয়র পারিষদের বক্তব্য, “কোনও কর্মী সুজয়বাবুর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের কাছ থেকে ‘নামজারির’ নথি তৈরির জন্য টাকা এনেছিলেন। অথচ সেই কাজ করেননি। যাঁরা টাকা দিয়েছেন তাঁদের কোনও অভিযোগ নেই। টাকা দিয়েছিলেন কি না তাও স্পষ্ট নয়। সুজয়বাবু আমার কাছে কোনও লিখিত অভিযোগ জানাননি। তা হলে কর্মীর বিরুদ্ধে কী ভাবে ব্যবস্থা নেব?” দেবশঙ্করবাবুর ক্ষোভ, “আমাকে যদি জানানো হয়ে থাকে সে কথা পুর কমিশনারকে সুজয়বাবু যে চিঠি দিয়েছেন সেখানে উল্লেখ করতে পারতেন।” সুজয়বাবুর দাবি, “গত বছর সেপ্টেম্বরে তাঁর ওয়ার্ডের কয়েকজন বাসিন্দার কাছ থেকে অ্যাসেসমেন্ট বিভাগের কর্মী স্বপন চক্রবর্তী প্রায় ৪৭ হাজার টাকা ‘নামজারির’ জন্য এনেছিলেন। অথচ কাজ হয়নি। পুর কর্তৃপক্ষকে জানালেও ব্যবস্থা হয়নি। অ্যাসেসমেন্ট বিভাগের অপর কর্মী হাবুল ঘোষ গত বছর জুন মাসে ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে একটি ‘লজ’-এ সমীক্ষা করতে গিয়ে সেখান থেকে টাকা নিয়ে এসেছিলেন। হাবুলবাবুর কাছ থেকেই তিনি জেনেছেন, কৃষ্ণবাবুর কথা মতো ওই কর্মী লজ মালিককে সুবিধা পাইয়ে দিতে টাকা এনেছিলেন। তবে দাবি মতো টাকা না মেলায় কৃষ্ণবাবু তা নেননি। ওই কর্মীকে ফাঁসিয়ে দেন। কৃষ্ণবাবুর নামে এ ধরনের বিভিন্ন অভিযোগ তাঁর কাছে রয়েছে।” এ ব্যাপারে স্বপনবাবু এবং হাবলুবাবুও দাবি করেন, “সংগ্রহ করার টাকার একাংশ কৃষ্ণবাবুকে দিয়েছি।” কৃষ্ণবাবু অবশ্য এ সব ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। পুর কমিশনার প্রভুদত্ত ডেভিড প্রধান বলেন, “সুজয়বাবু যে চিঠি দিয়েছেন। সেই মতো তদন্ত হচ্ছে।” তদন্তের কতটা অগ্রগতি হয়েছে বা কবে শেষ হবে সেই ব্যাপারে স্পষ্ট উত্তর মেলেনি। |