দামের চোটে বাজারে দেশি লঙ্কার গায়ে হাত ছোঁয়ানো না গেলেও মধ্যবিত্তের বাজারের থলেতে কিন্তু উঠছে ‘বাংলা লঙ্কা’। দেশি লঙ্কার তুলনায় বেশ কম ঝাল এই লঙ্কা আসছে বাংলাদেশ থেকে। জেলার বাজারগুলিতে বিশেষ করে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর বাজারে দেশি লঙ্কার জায়গা নিয়েছে এই ‘বাংলা লঙ্কা’। আর তা মিলছে মোটামুটি ৮০ তেকে ১০০ টাকার মধ্যেই। ফলে অত্যধিক দামের কারণে যাঁরা দেশি লঙ্কা ‘ছুঁতে’ পারছিলেন না তাঁরা কিছুটা ‘স্বস্তি’ পেয়েছেন। বনগাঁ মহকুমার সব্জি বাজারে গেলেই দেখা মিলবে এই ‘বাংলা লঙ্কা’র। কালচে এবং আকারে বেশ সরু এই লঙ্কা শুধু জেলার বাজারেই নয়, কলকাতা-সহ আশপাশের বাজারেও ‘বাংলা লঙ্কা’ ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে লঙ্কা ব্যবসায়ীরা। এপারে লঙ্কার এমন চড়া দামের কারণে গত কয়েক দিনে সীমান্ত পেরিয়ে চোরাপথে প্রচুর ‘বাংলা লঙ্কা’ এ দেশে ঢুকেছে। দিন কয়েক আগেই গাইঘাটায় বিএসএফ প্রায় ২৫ কুইন্টাল লঙ্কা আটক করে।
বিএসএফ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গাইঘাটা, বনগাঁ, বাগদা সামীন্ত দিয়ে বস্তা বস্তা লঙ্কা এ পারে চলে আসছে। গাইঘাটার বর্ণবেড়িয়া, আংড়াইল গিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে এই লঙ্কা চলে আসছে চাঁদপাড়া বাজারে। সেখান থেকে তা ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন বাজারে। |
বিএসএফ সূত্রের খবর, বাংলাদেশে ভারতীয় টাকায় এই লঙ্কার দাম কেজি প্রতি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। বনগাঁর চাঁদাবাজারের হাটে বুধবার এই লঙ্কা কেজি প্রতি বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়। বনগাঁর ট-বাজারে বিক্রি হয়েছে কেজি প্রতি ৮০ টাকায়। দেশি লঙ্কার সঙ্গে এই ‘বাংলা লঙ্কা’র তফাৎ হল এর মধ্যে দানা কম। ফাঁপা ধরনের।
হঠাৎ এই ধরনের সঙ্কার রমরমা কেন? উত্তর ২৪ পরগনার হর্টিকালচার আধিকারিক দীপক কুমার ষড়ঙ্গী বলেন, “মে-জুন মাসে বৃষ্টি না হওয়া, অত্যধিক গরম এবং পোকামাকড়ের আক্রমণের ফলে এ বার জেলায় ৮০ শতাংশ লঙ্কাচাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।” বনগাঁর চাঁদা এলাকার লঙ্কাচাষি রণজিৎ দাস এ বার ১৫ কাঠা জমিতে এবং গাইঘাটার বড় সেহানা গ্রামের তপন মণ্ডল এক বিঘা জমিতে লঙ্কা চাষ করেছিলেন। সবই নষ্ট হয়েছে। বনগাঁর মহকুমাশাসক অভিজিৎ ভট্টাচার্য অবশ্য চোরাপথে বাংলাদেশ থেকে লঙ্কা আসার কথা জানেন না। তিনি বলেন, “এখনও তেমন খবর পাইনি।” তবে, বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক সুরজিৎ বিশ্বাস বলেন, “সমস্ত পাচারই বন্ধ হওয়া উচিত। তবে বাংলাদেশে থেকে লঙ্কা আসার ফলে এ পারে লঙ্কার দাম নিম্নমুখী। সাধারণ মানুষ কম দামে লঙ্কা খেতে পাচ্ছেন।”
তবে সীমান্তে গরু পাচার, মোটর সাইকেল পাচার নিয়ে তাঁদের প্রবল আপত্তি, অভিযোগ থাকলেও স্বাদের প্রয়োজনে লঙ্কা পাচারে যে তাঁদের আপত্তি নেই তা সকলেই স্বীকার করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমনই কয়েকজন জানালেন, “এখানে লঙ্কায় হাত দিলে দামের ‘ছেঁকা’ লাগছে। ‘বাংলা লঙ্কা’ তো প্রয়োজন মেটাচ্ছে।” |