অচলাবস্থা কাটাতে নির্দেশ প্রশাসনের
সিপিএমের পঞ্চায়েত ঝাড়খণ্ডীদের হাতে
প্রশাসনিক পদক্ষেপের ফলে ঝাড়গ্রামের আগুইবনি গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষমতা সিপিএমের হাত থেকে ঝাড়খণ্ডীদের হাতে চলে গেল। প্রধানের দায়িত্ব পেলেন লক্ষ্মীকান্ত মাহাতো এবং উপপ্রধানের বনশ্রী মাহাতো। দু’জনেই ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টির সদস্য। ৩ জুলাই এ সংক্রান্ত এক নির্দেশ জারি করেছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত। আপাতত এক মাসের জন্য এই নির্দেশ বহাল থাকবে।
ঝাড়গ্রাম ব্লকের আগুইবনি এক সময়ে সিপিএমের ‘দুর্গ’ বলেই পরিচিত ছিল। এখানে গ্রাম পঞ্চায়েতের আসন সংখ্যা ৭। ২০০৮-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৫টি আসন দখল করেছিল সিপিএম। বাকি ২টি ঝাড়খণ্ডী-জোট। নির্বাচনের পরে প্রধান হন সিপিএমের বঙ্কিম মাহাতো। উপপ্রধান হন সিপিএমেরই বন্দনা পাত্র। উপপ্রধানের পদটিও মহিলা সংরক্ষিত। ২০০৯-এর গোড়ায় জঙ্গলমহলে অস্থিরতা দেখা দেয়। মাওবাদী-জনগণের কমিটির প্রভাব বাড়ে। একের পর এক হামলা-নাশকতার ঘটনা ঘটে। আগুইবনিতেও অস্থিরতা ছড়ায়। ২০১০-এর অক্টোবরে পঞ্চায়েত প্রধান ‘অপহৃত’ হন। স্থানীয় ছোটডিডিহা গ্রামে মাওবাদী-জনগণের কমিটির এক সভায় তাঁকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। তারপর থেকেই তাঁর আর কোনও খোঁজ মেলেনি। চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় বাঘঝাঁপা এলাকায় মাটি খুঁড়ে ৩টি কঙ্কাল উদ্ধার হয়। ধৃত কয়েক জন মাওবাদীকে জেরা করে পুলিশ দাবি করে, বঙ্কিমবাবুকে সম্ভবত খুনই করেছিল মাওবাদীরা। তার পর বাঘঝাঁপায় দেহ পুঁতে রাখা হয়। উদ্ধার হওয়া ৩টি কঙ্কালের মধ্যে একটি বঙ্কিম মাহাতোর দেহাবশেষ বলে দাবি করেন তাঁর পরিবারের লোকজনও। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত কার্যালয় দীর্ঘ দিনই বন্ধ। কাজকর্মেও অচলাবস্থা। এই অবস্থায় ঝাড়গ্রাম ব্লক অফিস থেকেই আগুইবনি পঞ্চায়েতের কাজ চালানো হত।
রাজ্যে পালাবদলের পরে আবার উপপ্রধানের পদ থেকেও সরে দাঁড়ান বন্দনা পাত্র। গত বছরের ২৭ জুন তিনি পঞ্চায়েত সদস্যের পদ থেকেও পদত্যাগ করেন। ফলে, পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। পঞ্চায়েতের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হওয়ায় সমস্যায় পড়েন গ্রামের মানুষ। জানা গিয়েছে, সিপিএমের যে ৩ জন সদস্য রয়েছেন, তাঁদের কেউই প্রধানের দায়িত্ব নিতে রাজি হননি। পঞ্চায়েতে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরানোর জন্য তখন ঝাড়খণ্ডী সদস্যদের পঞ্চায়েতের দায়িত্ব নিতে বলা হয়। লক্ষ্মীকান্তবাবু ও বনশ্রীদেবী দায়িত্ব নিতে রাজি হন। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত আইন অনুসারেই এই প্রশাসনিক পদক্ষেপ। পরিস্থিতি একই রকম থাকলে আগামী মাসেও এই নির্দেশ বহাল থাকবে।
এক সময় ঝাড়গ্রামের আগুইবনি, চন্দ্রি, নেদাবহড়া ও পাটাশিমুল অঞ্চলে সিপিএমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা প্রশান্ত দাস-ই ছিলেন ‘শেষ কথা’। মাওবাদী-জনগণের কমিটির আন্দোলন-পর্বেও বহুদিন তিনি নিজের প্রভাবাধীন এলাকায় কমিটির কার্যকলাপ হতে দেননি। চন্দ্রির আউসপাল গ্রামে নিজের বাড়িতে এবং এলাকায় একাধিক সশস্ত্র শিবির চালানোর অভিযোগও ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। বিধানসভা ভোটের আগে কয়েক বার তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে অবশ্য অস্ত্রের হদিস পায়নি যৌথ বাহিনী। গত বছর ৭ মার্চ পাটাশিমুল অঞ্চলের এক তৃণমূল-কর্মী খুনের অভিযোগে গত সেপ্টেম্বরে প্রশান্তবাবুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। দু’মাসের মাথায় গত নভেম্বরে জামিনে মুক্তি পান।
গত সাত মাসে ফের আগুইবনি অঞ্চলে সংগঠন গড়ে তোলার লক্ষ্যে বার চারেক মিছিল করেছেন প্রশান্তবাবু। সেই সব মিছিলে ভালই লোকজন হয়েছে। মাস খানেক আগে স্থানীয় একতাল ডিএম হাইস্কুলের পরিচালন কমিটিও ফের বামপন্থীরা দখল করেছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, পঞ্চায়েত পরিচালনা নিয়ে ব্যর্থতার দায় এড়াতে কৌশলগত কারণে ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টিকে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছে সিপিএম। যদিও প্রশান্তবাবুর দাবি, “প্রশাসনই নতুন প্রধান ও উপপ্রধান ঠিক করেছে।” তাঁর বক্তব্য, “কেবলমাত্র ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাসী নই। মানুষ এখনও আমাদের সঙ্গেই আছেন। তৃণমূলি সন্ত্রাসের মোকাবিলা করে আমরা শান্তি ও উন্নয়নের স্বার্থে আন্দোলন চালিয়ে যাব।” অন্য দিকে, ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ভোলানাথ মাহাতো বলেন, “এলাকার উন্নয়নের স্বার্থেই আমাদের দু’জন পঞ্চায়েত সদস্য গ্রাম পঞ্চায়েতের দায়িত্ব নিতে রাজি হয়েছেন।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.