জেলার সব্জি বাজারে বুধবারও নজরদারি চালাল প্রশাসন। এ দিন আলু ও লঙ্কার গুদামেও টাস্ক ফোর্স হানা দিয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। পরপর দু’দিন নজরদারি চালানোয় এ দিন বেশ কয়েকটি সব্জির দাম কমেছে বলেও দাবি করেছেন জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা।
জেলাশাসক এ দিন দাবি করেন, লঙ্কার দাম প্রতি কেজি ১৫০ টাকা থেকে কমে হয়েছে ৮০ টাকা। আলু ১৬ টাকা থেকে ১৩ টাকা, করলা ৪০ টাকা থেকে নেমেছে ২৫ টাকায়। সমস্ত সব্জির দামই ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমেছে বলে তাঁর দাবি। এ দিন জেলাশাসক আলু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। জেলাশাসক জানান, ব্যবসায়ীরা তাঁকে জানিয়েছেন, আলুর দাম যাতে হঠাৎ না বাড়ে, সে দিকে নজর রাখবেন। |
এ দিন বর্ধমানের একটি পাইকারি বাজার ও দু’টি খুচরো বাজারে গিয়ে দেখা গিয়েছে, কিছু সব্জির দাম কমেছে। তবে প্রশাসনের দাবি সব ক্ষেত্রে ঠিক নয়। যেমন দুই খুচরো বাজার, রানিগঞ্জ বাজার ও বড়বাজারে আলু ১৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। করলা ২৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে বলে প্রশাসন দাবি করলেও দুই বাজারেই বিক্রেতাদের তা ৪৫ টাকায় বেচতে দেখা গিয়েছে। পাইকারি বাজারেই করলা ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কাঁচালঙ্কার দাম ১৫০ টাকা থেকে কমেছে। তবে খোলা বাজারে তা বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকায়।
সব্জির এই মূল্যবৃদ্ধির কারণ কী? উদয়পল্লি পাইকারি বাজারের সব্জি বিক্রেতা কানু সাহার মতে, “প্রথমে গরমের দাপটে প্রায় সমস্ত সব্জি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ফলনও বিশেষ ভাল হয়নি। তার পরে আচমকা বৃষ্টিতে লঙ্কা, মুলো, শাক, পটল, বেগুনের মতো প্রয়োজনীয় সব্জি পচে গিয়েছে। প্রতি বার ঝাড়খণ্ডের রাঁচি, পুরুলিয়ার বাগমুণ্ডি, কাশিপুর থেকে বাজারে লঙ্কা আসে। এ বার তা আসেনি। জলের অভাবে বহু ফসলই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাই দাম বেড়েছে।” ওই বাজারেই আর এক পাইকারি ব্যবসায়ী শিবু ঘোষের দাবি, ‘‘সার বা কীটনাশকের দাম যে ভাবে বেড়ে চলেছে, তাতে সব্জি চাষের খরচও বেড়েছে। চাষিও বাড়তি দাম চাইছে। আমরা তা হলে কী করে কম দামে সব্জি বিক্রি করব?”
নিত্যদিনের মতো এ দিনও ব্যাগ হাতে বাজারে এসেছিলেন নতুনগঞ্জের বাসিন্দা প্রদীপ চৌধুরী। তিনি জানান, কয়েক মাস আগেও শ’দুয়েক টাকা সঙ্গে এনে অনায়াসে মাছ-সহ সমস্ত সব্জি কিনে বাড়ি ফিরতেন। কিন্তু এখন সব্জি বাজারে ঢুকলেই টাকা ফুরিয়ে যাচ্ছে। কাঞ্চননগর বাজারের খুচরো সব্জি বিক্রেতা পতিতপাবন দত্ত আবার বলেন, “রোজ হাজার দুয়েক টাকার মাল আনতাম। প্রতি দিনই সমস্ত সব্জি বিক্রি হয়ে যেত। কিন্তু এখন দাম এত বেড়ে যাওয়ায় ওই টাকার সব্জি বেচতেই প্রায় দু’দিন সময় লাগছে। ফলে অনেক সব্জি পচে যাচ্ছে।” যদিও অনেক বিক্রেতাই আবার আগের চেয়ে পরিমাণে কম সব্জি কিনে এবং বেশি দরে বেচে ভাল লাভও করছেন।
রাজ্য সরকার সত্যিই দামে লাগাম লাগাতে পারে কি না, সাধারণ ক্রেতাদের প্রশ্ন এখন সেটাই।
|
পাইকারি দর বনাম খুচরো দর
(বুধবার সকালে বর্ধমান শহরের দর) |
|
দাম প্রতি কেজি টাকায় |
|