মেনু সয়াবিনের তরকারি আর মোটা চালের ভাত। সেটুকুও বন্ধ হয়ে গেলে স্কুলে হয়ত ছাত্রছাত্রীরাও আসবে না। তাই মুদির দোকানে বাকির ‘ঊর্ধ্বসীমা’ শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রধান শিক্ষকের বেতনের টাকা দিয়ে স্কুলে মিড ডে মিল রান্না হচ্ছে। প্রায় দেড় মাস ধরে স্কুলের তহবিলে মিড ডে মিলের অর্থ নেই। শেষ গত জানুয়ারি মাসে স্কুল কর্তৃপক্ষ মিড ডে মিল রান্নার বরাদ্দ পেয়েছিল। তিন মাসের খরচের জন্য নির্ধারিত টাকা দিয়ে গত মে সামের মাঝামাঝি পর্যন্ত মিড ডে মিল রান্না হয়েছে। তার পরে মুদির দোকানে বাকির বহর বাড়তে থাকে। তা ঊর্ধ্বসীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় শিক্ষকের দেওয়া টাকাই ভরসা জলপাইগুড়ি শহরের দুই নম্বর ঘুমটি এলাকার শিশু শ্রমিক স্কুলের। স্কুলের শিক্ষকরা জানালেন, স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরা সকলেই বাসাবাড়ি বা বাজারে কাজ করে। অনেকেরই পরিবারের আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে, দুপুরে পেটভরে খাওয়ার টানে স্কুলে আসে। সেই সুযোগে তাদের পড়াশোনাও হয়। মিড ডে মিল বন্ধ থাকলে সেই পড়াশোনার সুযোগ থেকেও ওরা বঞ্চিত হবে। সেই আশঙ্কাতেই সরকারি বরাদ্দের ভরসায় না থেকে নিজের পকেট থেকে মিড ডে মিলের খরচ যোগাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক প্রতিম চৌধুরী। জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশনের পাশেই জলপাইগুড়ির পুর এলাকার একমাত্র শিশু শ্রমিক স্কুল। বাবুন মাহাতো এই স্কুলেই ছাত্র। বয়স ১১ বছর। |
রোজ সকাল সাড়ে আটটার সব্জি বোঝাই প্যাসেঞ্জার ট্রেন স্টেশনে এলে ট্রেনের কামরা বেয়ে উঠে ঝুলতে থাকা সব্জির বস্তা নামিয়ে আনার কাজ করে বাবুন। বস্তা পিছু পাঁচ টাকা করে পায়। বিকেলে আবার বাজারের সব্জির দোকানে কাজে যেতে হয়। পরিচারিকার কাজ করা নেহা থেকে শুরু করে ১২ বছর বয়সেই চৌকিদারির কাজে যোগ দেওয়া বাবু—সকলেরই কাহিনি প্রায় একই রকম। প্রধান শিক্ষক প্রতিমবাবু বললেন, “এটি আর পাঁচটি স্কুলের মতো নয়। অনেক ক্ষেত্রেই এখানে বাড়ির লোকেরা ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে চান না। পারিবারিক অভাবে তাদের কাজে পাঠিয়ে দেন। আমরাই ধরে বেঁধে স্কুলে নিয়ে আসি। পড়ার সঙ্গে মিড ডে মিলে দুপুরের খাবারও হয় বলে অনেকের বাবা-মা আপত্তি করেন না। এখন কয়েক দিনের জন্যও মিড ডে মিল বন্ধ হয়ে গেলে অনেকেই আর স্কুলে আসবে না। সেই সময়ে অন্য কাজে ঢুকে গেলে তাদের আর স্কুলে আনা সম্ভব হবে না। তাই যে ভাবেই হোক মিড ডে মিল চালানো হচ্ছে।” এমন স্কুলের চেহারা যেমন হওয়ার কথা তেমনই রয়েছে। ঘিঞ্জি ক্লাসঘর। স্কুলের শিক্ষদের সাম্মানিক জোটে মাথা পিছু মাত্র দেড় হাজার টাকা। স্কুলের শিক্ষক দীপঙ্কর রাউত বলেন, “এই স্কুলের পড়ুয়ারা সাধারণ নয়। ছোট বয়সেই তাদের কঠোর বাস্তবের মুখোমুখি হতে হয়। টাকার জন্য কাজ করতে হয়। তবু প্রতিকূলতার মধ্যে তারা স্কুলে এলেও তাদের জন্য বিশেষ কিছুই করার নেই। সরকারি নিয়মের ফাঁক রয়েছে।” ওয়ার্ড শিক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান তথা এলাকার কাউন্সিলর নারায়ণ সরকার বলেন, “এ বার মিড ডে মিলের টাকা পেতে দেরি হচ্ছে এটা সত্যি। বিষয়টি দেখছি। যাতে দ্রুত টাকা আসে তার ব্যবস্থা করছি।” |