শিলিগুড়ি পুরসভার আ্যাসেসমেন্ট বিভাগের কর্মীর বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর সুজয় ঘটক। পক্ষান্তরে, সুজয়বাবুর বিরুদ্ধে অ্যাসেসমেন্ট বিভাগে গিয়ে ওই কর্মীকে ফাঁসানোর হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন কংগ্রেসের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেবশঙ্কর সাহা। তাই-ই নয়, দেবশঙ্করবাবুর অভিযোগকে ‘চ্যালেঞ্জ’ করে পুর কমিশনারকে চিঠি দিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবিও জানিয়েছেন সুজয়বাবু। তা নিয়ে কমিশনার তদন্তও শুরু করেছেন। এই ঘটনা নিয়ে পুরসভায় শুরু হয়েছে নানা জল্পনা। দুই কাউন্সিলরের অভিযোগ খতিয়ে দেখে কবে তদন্ত কমিশনার যাতে দ্রুত তদন্ত রিপোর্ট জমা দেন সেই দাবি উঠেছে পুরকর্মীদের মধ্যেই। ঘটনায় উদ্বিগ্ন মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত। তিনি বলেন, “কাউন্সিলরদের তরফে কিছু জানানো হয়নি। অভিযোগ যখন উঠছে, তখন পুরসভার তরফে খতিয়ে দেখা হবে।” পুর কমিশনার প্রভুদত্ত ডেভিড প্রধান বলেছেন, “কাউন্সিলর সুজয়বাবু লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর এবং আধিকারিকের কাছ থেকে পুরো ঘটনাটি লিখিত ভাবে জানতে চাওয়া হয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, অ্যাসেসমেন্ট বিভাগ মেয়রের হাতে থাকলেও তা দেখভালের দায়িত্ব তিনি ট্রেড লাইসেন্স বিভাগের মেয়র পারিষদ দেবশঙ্করবাবুকে দিয়েছেন। অ্যাসেসমেন্ট বিভাগের কর্মী কৃষ্ণ সাহার বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছেন সুজয়বাবু। তাঁর অভিযোগ, মাস কয়েক আগে তাঁর ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে একটি বাড়ি সমীক্ষার কাজ করতে গিয়েছিলেন পুরসভার জনৈক কর্মী। অন্তত ৩ টি ফ্ল্যাটের মালিকদের কাছ থেকে ‘নামজারির’ নথি তৈরির জন্য ৫১ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। পরে তিনি আর কাজে যাননি বলে অভিযোগ। সুজয়বাবুর দাবি, তিনি যোগাযোগ করলে ওই কর্মী জানান, কৃষ্ণবাবুর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। অথচ সুজয়বাবুর অভিযোগ, কৃষ্ণবাবু ওই কর্মীর সঙ্গে দেখা হচ্ছে না বলে এড়িয়ে যান। কিন্তু, ওই কর্মীর সঙ্গে কৃষ্ণবাবুকে নানা জায়গায় দেখা গিয়েছে বলে দাবি সুজয়বাবুর। সুজয়বাবুর অভিযোগ, “ওই পুরকর্মী দুর্নীতিতে জড়িত অভিযোগ তোলায় আমার বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। তা ছাড়া ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে এক ‘ট্যাক্স কালেক্টর’-এর বিরুদ্ধে অন্যায় ভাবে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। সেই টাকা খামে করে দফতরে কৃষ্ণ সাহাকে দিয়েছিলেন ওই কর্মী। কৃষ্ণ সাহা তা ছুড়ে ফেলায় হইচই হয়। বাস্তবে, কৃষ্ণবাবু যে পরিমাণ টাকা দাবি করেছিলেন ওই কর্মী তা না দেওয়ায় কৃষ্ণবাবু তাঁকে এ ভাবে ফাঁসিয়ে দেন। এ সব ঘটনার নিয়ে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। সে জন্য পুর কমিশনারকে চিঠি দিয়েছি।”তবে মেয়র পারিষদ দেবশঙ্করবাবু বলেন, “যাই হোক না কেন, তা মেয়রকে জানাতে পারতেন সুজয়বাবু। তা না-করে উনি দফতরের মধ্যে এক পুরকর্মীকে হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই আপত্তি জানিয়েছি।” পাশাপাশি, দেবশঙ্করবাবুর দাবি, “গত ২২ জুন অ্যাসেসমেন্ট বিভাগে কৃষ্ণবাবু কাজ করার সময় সুজয়বাবু সেখানে গিয়েছিলেন। তখনই তাঁকে এবং পরিবারের লোকদের ‘চোর’ অপবাদ দিয়ে ফাঁসিয়ে দেবেন বলে হুমকি দিয়েছেন। কৃষ্ণবাবু জানান, সুজয়বাবু তাঁকে বলেছেন, “তুমি টাকা না নিলেও তোমাকে, তোমার স্ত্রীকে ফাঁসাব। এর পর ওই কর্মী আমার কাছে এসে কেঁদে ফেলেন।” এ বিষয়ে ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হয়েছে জানিয়ে কমিশনারকে চিঠি দিয়ে তদন্ত দাবি করেন সুজয়বাবু। কৃষ্ণবাবু এই নিয়ে কথা বলতে চাননি। |