‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ) ভোট নির্বিঘ্নে মেটানোর জন্য প্রশাসনকে সব রকম ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্যের পক্ষ থেকে কেন্দ্রের কাছে জিটিএ ভোটের জন্য অন্তত ৪৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানোর আর্জি জানানো হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, জিটিএ ভোট অবাধে হবে কি না, সেই প্রশ্নে ক্রমশ উদ্বেগ বাড়ছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিরোধী দলগুলির। অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ, সিপিআরএম এবং সিপিএমের পক্ষ থেকে প্রশাসনের কাছে দার্জিলিং পাহাড়ে অবাধে ভোট করানোর জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক আধা-সামরিক বাহিনী মোতায়েনের দাবি তোলা হয়েছে। যতক্ষণ সুষ্ঠু ভাবে ভোট পরিচালনার স্বার্থে রাজ্য সরকারের তরফে ‘সদর্থক পদক্ষেপ’ করা না হচ্ছে, ততক্ষণ মোর্চা-বিরোধী অনেক দলই প্রার্থী ঘোষণা করতে চাইছে না বলে প্রশাসনের কাছে খবর পৌঁছেছে।
নিরাপত্তার অভাব বোধ করে মোর্চা বিরোধী দলগুলি ভোট থেকে সরে দাঁড়ালে রাজ্যকে যে কিছুটা হলেও অস্বস্তির মুখে পড়তে হতে পারে, সে কথা সরকারি কর্তাদের অনেকেই স্বীকার করেছেন। সরকারি সূত্রের খবর, বিষয়টি জেনেই মুখ্যমন্ত্রী সোমবার রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তার পরেই ৪৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে আর্জি জানানোর সিদ্ধান্ত হয়। মঙ্গলবার দার্জিলিঙের জেলাশাসক তথা জিটিএ-র নির্বাচনী অফিসার সৌমিত্র মোহন বলেছেন, “রাজ্য সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করাতে বদ্ধপরিকর। রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনই তা নিশ্চিত করতে পারবে বলে আমাদের ধারণা। কিন্তু কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্য পেলে বিষয়টি আরও জোরদার হতে পারে। দেখা যাক, কত কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মেলে!”
বস্তুত, দার্জিলিং পাহাড়ে জিটিএ ভোটে দাঁড়ানো নিয়ে মোর্চা-বিরোধী প্রায় সব দলের মধ্যেই একটা ‘টানাপোড়েন’ রয়েছে। কংগ্রেস এবং তৃণমূলের প্রদেশ নেতারা এখনও ভোটে দাঁড়ানো নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাননি। সব আসনে তাঁদের পক্ষে প্রার্থী দেওয়া যে সম্ভব নয়, সে কথা সিপিএমের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই ঘনিষ্ঠ মহলে মানছেন। অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ, সিপিআরএমের পাহাড়ের কিছু এলাকায় সংগঠন থাকলেও অন্যত্র অফিসই নেই।
এই পরিস্থিতিতে এ দিন সিপিএমের দার্জিলিং জেলা কমিটির কার্যকরী সম্পাদক জীবেশ সরকার গোর্খা লিগ, জিএনএলএফ ও সিপিআরএমের শীর্ষ নেতৃত্বকে চিঠি পাঠিয়ে পাহাড়ের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বসার আহ্বান করেছেন। ওই চিঠিতেও জিটিএ ভোট অবাধে হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। সিপিএম সূত্রের খবর, দলের অনেকেই এ বারের ভোটে প্রার্থী দেওয়ার পক্ষপাতী নন। তবে ভোটে না লড়লে সিপিএম ‘ভোট বয়কটের রাস্তায় হেঁটে পাহাড়ে শান্তি ফেরানোয় বাধা দিচ্ছে’ বলে অভিযোগ উঠতে পারে আশঙ্কা করে জীবেশবাবুরা চিঠি লিখে তাঁদের নির্বাচনে যোগ দেওয়ার ‘সদিচ্ছা’ প্রকাশ্যে এনেছেন। জীবেশবাবু বলেন, “আমরা পাহাড়ে শান্তি ও গণতন্ত্র ফেরানোর যে কোনও প্রক্রিয়ায় সাহায্য করতে প্রস্তুত। কিন্তু পাহাড়ে আধা-সামরিক বাহিনী ছাড়া অবাধ ভোট হওয়া অসম্ভব। সেটা সরকারকে জানিয়েছি। অন্য সহমর্মী দলগুলির সঙ্গেও পর্যায়ক্রমে কথা বলব। তার পরেই ক’টি আসনে প্রার্থী দেওয়া হতে পারে, তা নিয়ে ভাবব।”
পক্ষান্তরে মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, “পাহাড়ে শান্তিপূর্ণ ভোট করানোর দায়িত্ব রাজ্যের। আমরা তাতে সব রকম সহযোগিতা করব।” এ দিন কালিম্পঙের ডেলোয় দলের আর এক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছেন মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। তিনি পেডংয়ের বাসিন্দা দাওয়া লেপচা। রোশন গিরি বলেন, “বাকি ৪৩টি আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম সভাপতি শীঘ্রই ঘোষণা করবেন।” |