আইএপি, এনআরইজিএ এবং এনআরএইচএমকেন্দ্রীয় এই তিনটি প্রকল্পের কাজে নজরদারি আরও বাড়াতে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসককে নির্দেশ দিল রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর। এই নির্দেশের প্রেক্ষিতে কী কী পদক্ষেপ করা হল, তার একটি রিপোর্টও পাঠাতে বলা হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, এই ৩টি প্রকল্পের উপর নজরদারি আরও বাড়ানোর নির্দেশে এসেছে খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতর থেকে। দফতরের সচিব এম কে ভরদ্বাজ গত মে মাসে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে এক নির্দেশ পাঠান। তার প্রেক্ষিতেই জঙ্গলমহল এলাকার ৩ জেলাশাসকের কাছে নির্দেশ পাঠিয়েছে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর। জানিয়েছে, এ ক্ষেত্রে ‘ক্লোজ মনিটরিং’ করা প্রয়োজন। স্বরাষ্ট্র দফতরের নির্দেশ পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রশাসন। ‘পিছিয়ে পড়া’ জঙ্গলমহল এলাকার উন্নয়নের জন্যই ‘ইন্টিগ্রেটেড অ্যাকশন প্ল্যান’ (আইএপি) চালু করেছে কেন্দ্র। ‘মাওবাদী প্রভাবিত’ জেলাগুলিকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রত্যাশিত উন্নয়ন হলে মাওবাদীরা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেএমন লক্ষ্যেই ২০১০-১১ আর্থিক বছরে এই প্রকল্পে পশ্চিম মেদিনীপুরের জন্য বরাদ্দ হয়েছিল ২৫ কোটি টাকা। তার মধ্যে খরচ হয়েছে ২১ কোটি ৪৭ লক্ষ ২৩ হাজার টাকা। ২৩৫টি প্রকল্পের মধ্যে ২৩৪টির কাজ সম্ভব হয়েছিল। ২০১১-’১২ আর্থিক বছরে ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। খরচ হয়েছে মাত্র ২২ কোটি ৮৯ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা। ৮৬৯টি প্রকল্পের মধ্যে মোটে ৮২৭টির কাজ হয়েছে। চলতি আর্থিক বছরেও এই প্রকল্পে ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ হতে পারে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের দাবি, “আইএপি-র কাজ সন্তোষজনক। এ বার ৯৪ শতাংশ কাজ হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের নজরদারি থাকেই।” ওই আধিকারিকই মানছেন, “শুরুর দিকে বেশ কিছু সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। তবে আলোচনার মাধ্যমে তার সমাধান হয়েছে। কেন্দ্র জানিয়েছে, চোখে দেখা যায় এমন কাজই করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশিকাও দেওয়া রয়েছে। তা মেনেই কাজ হচ্ছে।”
গ্রামের গরিব মানুষকে কাজ দেওয়ার লক্ষ্যে চালু হয়েছে ‘ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়েমেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট’ (এনআরইজিএ) বা ‘একশো দিনের কাজ’ প্রকল্প। দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষ আবেদন করলে কাজ পেতে পারেন। ২০০৯-১০ সালে আবেদনকারীদের গড়ে ৫২ দিন কাজ দেওয়া গিয়েছিল জেলায়। এ বার (২০১১-১২) মানুষ কাজ পেয়েছেন মাত্র ২৮ দিন। তা-ও আর্থিক বছরের শেষ দিকে কাজের গতি বেড়েছিল। না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হত। গত বছর এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই প্রকল্পে খরচ হয়েছিল ১১০ কোটি ৩৫ লক্ষ ৭ হাজার টাকা। আর চলতি বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১১৬ কোটি ৩৬ লক্ষ ৪৭ হাজার টাকা। কেন এই পরিস্থিতি? জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত আর্থিক বছরে বেশ কিছু সমস্যার জন্য কাজ ব্যাহত হয়েছে। এক সময়ে জেলার একাংশ পঞ্চায়েত অচল হয়ে পড়েছিল। ফলে, সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতে প্রকল্পের কাজ এক সময়ে দারুণ ভাবে ব্যাহত হয়। এখন অবশ্য পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টেছে। এ ক্ষেত্রে সবস্তরে সমন্বয় বাড়ানো হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “প্রকল্পের কাজে গতি আনতে ইতিমধ্যেই কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে। সবস্তরে নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে।”
এনআরইজিএ, আইএপি-র তুলনায় আরও খারাপ অবস্থা ‘ন্যাশনাল রুরাল হেলথ মিশন’ (এনআরএইচএম) প্রকল্পে। গ্রামীণ স্বাস্থ্য-ক্ষেত্রের উন্নতির জন্যই কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্প চালু করেছে। বরাদ্দ অর্থে মূলত স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ হয়। এ ক্ষেত্রেও জেলায় কাজের অগ্রগতি সন্তোষনজনক নয়। এই প্রকল্পে আগে থেকে ২০ কোটি ৫২ লক্ষ ৫৯ হাজার ৩৬১ টাকা পড়েছিল। পরে ২০১১-’১২ আর্থিক বছরে পশ্চিম মেদিনীপুরের জন্য আরও ৩৫ কোটি ৯৫ লক্ষ ৯ টাকা বরাদ্দ হয়। এর মধ্যে খরচ হয়েছে মাত্র ২৫ কোটি ১০ লক্ষ ১৫ হাজার ৬৪৭ টাকা। পড়ে রয়েছে ৩১ কোটি ৩৩ লক্ষ ৭৮ হাজার ৩১১ টাকা। সব মিলিয়ে মোটে ৪৪ শতাংশ কাজ করা সম্ভব হয়েছে। একটি প্রকল্পের ৩ লক্ষ ৬৫ হাজার ৪১২ টাকা ফেরত চলে গিয়েছে। গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির একাংশ সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে। কোথাও ছাঁদ চুঁইয়ে জল পড়ে। কোথাও বা সংস্কারের অভাবে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একাধিক ঘর ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। অনেক সময়ে ‘হাল’ ফেরানোর ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ থাকে না বলেও অভিযোগ। এর ফলে, সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। কেন সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ করা যাচ্ছে না? জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “এ ক্ষেত্রেও সবস্তরে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করা হচ্ছে।” প্রশাসন সূত্রে খবর, এই ৩টি প্রকল্পে কী কী পদক্ষেপ করা হল, তার একটি রিপোর্টও (অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট) শীঘ্রই রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হবে। |