বাম শরিক ফ ব-র বিধায়ক আলি ইমরান রাম্জ (ভিক্টর)-কে ফের ‘সতর্ক’ করলেন বিধানসভার স্পিকার। ন’দিনে দু’বার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে একটি মন্তব্যের জন্য ২৩ জুন তাঁকে এক দিনের জন্য সভা থেকে ‘বহিষ্কার’ করেছিলেন স্পিকার। স্বাস্থ্য বাজেট বিতর্কের সময় মঙ্গলবার ফ ব-র বিধায়ককে ‘সতর্ক’ করার পরে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বাইরে বলেন, “ওই সদস্য আরও কিছু আপত্তিকর কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে। রেকর্ড দেখে ব্যবস্থা নেব।” তবে বিধায়কের কথা কার্যবিবরণী থেকে বাদ দিতে এখনও নির্দেশ দেননি স্পিকার।
পক্ষান্তরে, বিরোধী দলনেতা তথা প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্রকে সরাসরি ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ বলার জন্য সভায় তৃণমূল বিধায়ক নির্মল মাজির শাস্তি দাবি করেছেন সিপিএমের আনিসুর রহমান। স্বাস্থ্য বাজেট নিয়ে বলার সময় বাম সরকারের আমলে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে দুর্নীতির তদন্ত দাবি করেন নির্মলবাবু। তখনই প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরাসরি তোপ দাগেন তিনি। বাম বিধায়কের দাবির প্রত্যুত্তরে স্পিকার বলেন, “ঠিকই বলেছেন, কোনও সদস্যকে সরাসরি এ ভাবে এমন কথা (দুর্নীতিগ্রস্ত) বলা যায় না। আমি ভাষণের রেকর্ড দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।”
স্বাস্থ্য দফতরের বাজেট-বিতর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন ছিলেন না। বাজেট পেশ করেন প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। চাকুলিয়ার বিধায়ক ভিক্টর হিন্দি-উর্দু মিশিয়ে বলেন, “পাঁচ হাজার কোটি টাকার বাজেট মাত্র পাঁচ পাতায় শেষ করেছেন, এটাই সব চেয়ে আশ্চর্যের!” তিনি ঘোষণা করেন, তিনিও এই বাজেট বই ছিঁড়ে ফেলতে চান “যেমন ভাবে এখনকার মুখ্যমন্ত্রী লোকসভার সদস্য থাকাকালীন কেন্দ্রীয় বাজেট ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন।” প্রবল চিৎকার শুরু করে দেন তৃণমূল বিধায়কেরা। হইচইয়ে কারও কথাই বোধগম্য হচ্ছিল না। এই সময়েই স্পিকার ভিক্টরকে ‘সতর্ক’ করেন। পরে সভার বাইরে স্পিকার বলেন, “ওই বিধায়ককে আমি তৎক্ষণাৎ সতর্ক করে বলি, আপনি মুখ্যমন্ত্রীর নাম করে আবার যা তা মন্তব্য করছেন। এ রকম করতে পারেন না। সংযত হোন। নইলে আমি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব।” কিন্তু তার পরেই ভিক্টর বলেন, “যে বাজেটের সমর্থনে আপনারা হইচই করে লম্বাচওড়া কথা বলছেন, তাতে সবই অসত্যে ভরা! জেনেও আপনারা কিছু বলতে পারছেন না। বিড়ালের গলায় কে ঘণ্টা বাঁধবে? স্বাস্থ্য দফতরের বাজেট নিয়ে মানুষের চিকিৎসা করার আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীরই ‘ইলাজ’ করানো দরকার।!” লাফিয়ে ওঠেন তৃণমূল সদস্যেরা । স্পিকার পরে বলেন, “এত চিৎকার হচ্ছিল যে, কিছু শোনা মুশকিল। রেকর্ড পরীক্ষা করে আপত্তিকর মনে করলে ব্যবস্থা নেব।”
স্বাস্থ্যের পরেই ছিল অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের বাজেট-বিতর্ক। দুটি বিতর্কেই বিরোধী পক্ষ সক্রিয় ভাবে অংশ নেয়। কিন্তু একেবারে শেষে ‘সময়াভাবের কারণে’ ৩১টি দফতরের বাজেট আলোচনা ছাড়াই ‘গিলোটিনে’ চাপিয়ে পাশ করানোর প্রক্রিয়া শুরু হতেই বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবু প্রতিবাদ জানান এবং তাঁর সঙ্গে গোটা বিরোধী পক্ষ ওয়াকআউট করে বেরিয়ে যায়।
বস্তুত, বিরোধী এবং শাসক বেঞ্চের বিধায়কদের হইচইয়ে আলোচনার ‘সুস্থ পরিবেশ’ নষ্ট হচ্ছে বলে স্পিকার নিজেই স্বীকার করেছেন। |