মাদ্রাসায় ‘সাড়া’ নেই
সিলেকশন বোর্ডে সংখ্যালঘু চেয়ে সুপারিশ স্থায়ী কমিটির
রকারি অনুমোদিত ও সাহায্যপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের ‘সিলেকশন বোর্ডে’ এক জন করে সংখ্যালঘু প্রতিনিধি রাখা আবশ্যক করার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে সুপারিশ করল বিধানসভার স্থায়ী কমিটি। চাকরির ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের সুযোগ কম পাওয়া-জনিত সমস্যার সুরাহা করতে এর ফলে সুবিধা হবে বলে কমিটি মনে করছে। রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যালঘুদের প্রতি ‘বার্তা’ দেওয়ার যে ধারাবাহিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন, এই সুপারিশও সরকারের সেই নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে তৃণমূল সূত্রের ব্যাখ্যা। ওই স্থায়ী কমিটি যে সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের অধীন, সেই দফতর স্বয়ং মমতার অধীন।
তৃণমূল বিধায়ক নাসিরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন স্থায়ী কমিটির রিপোর্টে সুপারিশ করা হয়েছে ‘সরকার অনুমোদিত ও সাহায্যপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে এক জন করে সংখ্যালঘু প্রতিনিধি থাকা আবশ্যক বলে কমিটি মনে করে। চাকুরি ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু মানুষের শতকরা হার কম হওয়ার পিছনে বোর্ডে তাঁদের প্রতিনিধিত্ব না-থাকা অন্যতম কারণ বলে কমিটি মনে করে’। সরকার অনুমোদিত ও সাহায্যপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য এই দাওয়াই দেওয়ার পাশাপাশিই কমিটি সুপারিশ করেছে, সংখ্যালঘু বিষয়ক দফতরের শূন্য পদে অবসরপ্রাপ্তদের পুনর্নিয়োগ না-করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত শিক্ষিত বেকারদের চুক্তির ভিত্তিতে কাজে লাগানো হোক।
তবে একই সঙ্গে রাজ্যের সংখ্যালঘু নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে একটি ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ তথ্যও ধরা পড়েছে তৃণমূলের নেতৃত্বাধীন কমিটির রিপোর্টে। কমিটি তাদের পর্যবেক্ষণে বলেছে, ‘রিকগনিশন ফর আন-এডেড মাদ্রাসা’, এই শিরোনামে বিভাগের তরফে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। যাতে বলা হয়েছিল, অনুমোদন দেওয়া হবে। কিন্তু কোনও আর্থিক সহায়তা দেওয়া যাবে না। কিন্তু বিজ্ঞাপনের আশানুরূপ সাড়া মেলেনি বলে বিভাগীয় আধিকারিকগণ কমিটিকে জানিয়েছেন’। মুখ্যমন্ত্রী তথা সংখ্যালঘু বিষয়ক দফতরের মন্ত্রী মমতা প্রায়শই ঘোষণা করে থাকেন, তাঁর সরকার রাজ্যে ১০ হাজার মাদ্রাসাকে অনুমোদন দেবে। কিন্তু রাজ্যে এত মাদ্রাসা নেই এবং তাদের অনুমোদন দেওয়ার প্রয়োজনও নেই বলে গোড়া থেকেই পাল্টা বলে আসছে বিরোধীরা। খোদ প্রধান শাসকদলের হাতে-থাকা স্থায়ী কমিটির রিপোর্টেই এ বার মাদ্রাসা অনুমোদনের ঘোষণার বাস্তবে রূপায়ণের সমস্যা ধরা পড়ল।
ঢালাও মাদ্রাসার অনুমোদনের ঘোষণার বাস্তবতা নিয়ে বামেরা যে প্রশ্ন তুলেছিল, তার সঙ্গে কমিটির পর্যবেক্ষণ মিলে যাওয়ায় তৃণমূল শিবিরও এখন সমস্যা ‘অনুধাবন’ করতে পারছে। এক তৃণমূল বিধায়কের কথায়, “আর্থিক সহায়তা ছাড়া মাদ্রাসার অনুমোদনে হয়তো বিশেষ উৎসাহ পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু সংখ্যালঘুদের অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে সরকার বদ্ধপরিকর।” পক্ষান্তরে, সিপিএমের এক বর্ষীয়ান বিধায়কের মতে, “১০ হাজার মাদ্রাসার অনুমোদন যে সম্ভব নয়, রাজ্যে সংখ্যালঘু শিক্ষা চিত্রের খোঁজখবর রাখলেই তা বোঝা সম্ভব। সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত এলাকায় বেশি সংখ্যায় প্রথাগত স্কুল বা কলেজ গড়ার চেষ্টা করলে মুখ্যমন্ত্রী বরং ভাল করবেন।”
স্থায়ী কমিটি যেমন ‘সিলেকশন বোর্ডে’ সংখ্যালঘু প্রতিনিধি আবশ্যক করার কথা বলছে, তেমনই সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার উপরেও গুরুত্ব অরোপ করেছে। কমিটির মতে, ‘৩৯% ওবিসি-র (অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি) মধ্যে মুসলিম ওবিসি সর্বাধিক। অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের মাধ্যমে সমপরিমাণ সুযোগ-সুবিধা যাতে মুসলিম ওবিসি-রাও পায়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগের জন্য কমিটি সুপারিশ করছে’। ‘প্রয়োজনীয় উদ্যোগে’র অঙ্গ হিসাবেই ওবিসি-র আওতায় আরও বেশি সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে আনার জন্য বিল আনছে সরকার। ওবিসি-র তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলে সরকারি চাকরিতে ‘ক্যাটিগরি এ’-র আওতায় ‘বেশি অনগ্রসর’ হিসাবে ১০% এবং ‘ক্যাটিগরি বি’-র অধীনে ‘অনগ্রসর’ হিসাবে ৭% (মোট ১৭%) সংরক্ষণের সুযোগ পাবে আরও বেশি সংখ্যক সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের বিলটি শুক্রবার (চলতি অধিবেশনের বর্ধিত দিন) পেশ হওয়ার কথা। সংখ্যালঘুদের ‘বার্তা’ দিতেই বিলের উপরে বিতর্কে বক্তা হিসাবে থাকার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। বাম আমলে গত বছর বিধানসভায় পাশ একই শিরোনামের একই বিষয়ের বিলটি ওই দিনই প্রত্যাহার করবে মমতার সরকার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.