এক সময় কচিকাঁচাদের অন্যতম প্রিয় খেলা ছিল ‘কুমির-ডাঙা’ (‘জল ডিঙাডিঙ’ নামেও পরিচিত)। খুদেরা সময় পেলেই মেতে উঠত ওই খেলায়। কিন্তু আজকের প্রজন্মের অনেকেই ওই খেলার কথা জানে না। চর্চার অভাবে ‘কুমির-ডাঙা’র মতো এমন অনেক খেলা ধীরে ধীরে হারিয়েই যাচ্ছে।
১০-১৫ জন ছেলেমেয়ে একত্রে অথবা আলাদা ভাবে কুমির-ডাঙা খেলা চলে। গ্রামাঞ্চলে সাধারণত উঠোনে এই খেলা চলে। যেখানে খেলা হয় তার চারদিকটা উঁচু হতে হয়। খেলার পরিভাষায় নীচু জায়গাটিকে চিহ্নিত করা হয় নদী বা জলাশয় হিসেবে। উঁচু অংশটিকে বলা হয় ‘ডাঙা’। যা চিহ্নিত এই খেলার নিরাপদ স্থান হিসেবে।
প্রথমে ‘উবু-দশ-কুড়ি’ বা ভিন্ন কোনও গণনা পদ্ধতির মাধ্যমে একজনের মোড় নির্ধারণ করা হয়। মোড়ধারীকে ‘কুমির’ এবং অন্য খেলোয়াড়দের ‘মানুষ’ হিসেবে কল্পনা করা হয়। |
নিয়ম হল, মোড়ধারীকে অর্থাৎ‘কুমির’ নীচু স্থানটিতে দাঁড়িয়ে থাকবে। বাকি খেলোয়াড়রা থাকবে ডাঙায়। সুযোগ বুঝে অর্থাৎ মোড়ধারীর ছোঁয়া এড়িয়ে খেলোয়াড়রা ডাঙা থেকে নীচু জায়গায় নেমে ‘কুমির তোর জলে নেমেছি, জলে নেমে জল ঘোলা করেছি
পারলে ধর দেখি আমার পা, না হলে ঘোলা জল খা!’
জাতীয় ছড়া কেটে মোড়ধারীকে প্ররোচিত করবে। মোড়ধারী তাদের ছুঁতে গেলেই অন্য খেলোয়াড়রা তখন ছুটে ‘ডাঙা’য় উঠে পড়ে। এই ভাবে বারবার ছোটাছুটি করতে করতে মোড়ধারী ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলে ডাঙায় ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায়। তখন খেলোয়াড়রা একসঙ্গে ‘বাতাসে নড়ে ধর্মের কল, যেমন কর্ম তেমনি ফল’ কিংবা ‘ধাক্কা খেয়ে কেমন শিক্ষা হল
লোভ-লালসা ছেড়ে, এ বার থেকে হরিগুরু বলো।’
জাতীয় ছড়া কেটে হাততালি দিয়ে ওঠে। কিন্তু সব কিছু অগ্রাহ্য করে মোড়ধারী যদি কোনও খেলোয়াড়কে তার এলাকার মধ্যে (অর্থাৎ নীচু স্থানটিতে) ছুঁতে পারে তাহলেই তার মোড় ঘোচে। সেক্ষেত্রে প্রথম মোড়ধারী ডাঙায় ওঠার সুযোগ লাভ করে। আর নতুন মোড় খাটতে হয় ছোঁয়া-পড়া খেলোয়াড়টিকে।
মল্লারপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার সাধন সিংহ, লাভপুরের দাঁড়কার কাজল রায়রা বলেন, “ছোটবেলায় আমাদের প্রিয় খেলা ছিল কুমির-ডাঙা। হারিয়ে যেতে বসা খেলাগুলি নিয়ে প্রদর্শনী, প্রতিযোগিতা আয়োজন করে সরকারের উচিত তা আজকের প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা।” |