|
|
|
|
উদ্বিগ্ন বন দফতর |
আহতদের পিছু নিয়েছে শিকারি |
সঞ্জয় চক্রবর্তী • নকশালবাড়ি |
মহানন্দা অভয়ারণ্য, লামাগুম্বার শাল জঙ্গল, বামনপোখরি আর কলাবাড়ির জঙ্গলটা পেরিয়ে গেলেই মেচি নদী। নেপাল-ভারত, দু-দেশের সীমান্ত নির্দেশ করা সেই নদী পার হয়েই প্রতি বছর তাদের ‘চেনা পথে, চেনা পাড়া’, নেপালে ঝাঁপা জেলার বামনডাঙি এলাকা দাপিয়ে বেড়াত হাতির পাল। নেপালে হস্তিযূথ প্রবেশের পরেই তাদের উপরে স্থানীয় বাসিন্দাদের গুলি কিংবা ধারাল অস্ত্র নিয়ে হামলার ঘটনাও নতুন নয়। গত কয়েক বছর ধরেই এ ঘটনা চলছে। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দিন কয়েক আগেই কুপিয়ে মারা হয়েছে একটি হস্তি শাবককে। গুলিতেও গুরুতর আহত হয়েছে অন্তত পাঁচটি হাতি। তফাত একটাই, এ বার প্রায় ১২৫টি হাতির সেই দলটিকে আর ফেরানো যায়নি। মঙ্গলবার সন্ধে পর্যন্ত পাওয়া খবরে দলটি নেপাল সীমান্তের আরও গভীরে চলে গিয়েছে। নেপাল বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে তারা রয়েছে প্রায় কোশি নদীর তিরে। উদ্বেগের কারণ, বন দফতরের কাছে খবর, ওই দলে গুলিতে জখম হাতিগুলির পিছু নিয়েছে চোরাশিকারিদের একটি দল। বন দফতরের এক কর্তা বলেন, “অসম থেকে আসা চোরাশিকারিদের ওই দলটি অপেক্ষায় রয়েছে, আহত হাতিগুলি পিছিয়ে পড়লে তাদের গুলিতে ঝাঁঝরা করে দাঁতগুলি হাতিয়ে নেওয়া হবে। নেপালে তো তাদের বাধা দেওয়ার কেউ নেই!” সীমান্ত পারাপারের সময়ে হাতিগুলিকে প্রতি বার রোখার চেষ্টা হয়। কখনও পটকা পাটিয়ে ফাটিয়ে কখনও বা বৈদ্যুতিক তারের বেড়া দিয়ে। এ বার তা হল না কেন? বনকর্তারা জানান, ‘কোষাগার শূনা’। |
 |
ফাইল চিত্র। |
হাতি রুখতে খরচের বহর সামাল দেওয়ার মতো অর্থ বন দফতরের নেই। মাস কয়েক আগে রাজ্য সরকারের নয়া ট্রেজারি-বিধি চালু হয়েছে। নির্দেশ আসে বন দফতরের যাবতীয় ব্যয়ই হবে ট্রেজারির মাধ্যমে। দীর্ঘ মেয়াদি ব্যাপার। বনাধিকারিক, ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার-এর মাধ্যমে খরচ মেটানোর সুযোগ নেই। হাতি-রুখতে হুলা পার্টির খাওয়া দাওয়া থেকে যাতায়াতের খরচ, গাড়ির তেল কেনা, পশু চিকিৎসকদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার ব্যয়ভার এমনকী পটকা কেনার খরত মেটাতেও বন বিভাগকে ট্রেজারির দিতে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে। কিন্তু নগদ টাকা না মেলায় হুলা পার্টি জোগাড় করতেই হিমসিম বন দফতর। গাড়ির তেল কিংবা পটকা কেনাই বা কী করে নগদ ছাড়া হয়! হাতিদের সীমান্ত পেরিয়ে ভিন দেশে চলে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল ব্রিজরাজ শর্মা। তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের প্রজেক্ট এলিফ্যান্টের কর্তাদের ব্যাপারটা জানানো হয়েছে। দার্জিলিং এবং কার্শিয়াঙের ডিএফও-কেও নজর রাখতে বলা হয়েছে।” বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন বলেন, “দলটিকে ফেরাতে প্রয়োজনে দিল্লির হস্তক্ষেপ চাইব।” চোরাশিকারিদের হাত থেকে আহত হাতিগুলিকে বাঁচাতে কার্শিয়াং বন বিভাগের রেঞ্জার ভূপেন বিশ্বকর্মা এবং সুকনা এলিফ্যান্ট স্কোয়াডের রেঞ্জ অফিসার কাঞ্চন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একটি দল কলাবাড়ির জঙ্গলে আছেন। আহত হাতিগুলির খোঁজ মেলেনি। কার্শিয়াঙের ডিএফও শৈলেশ আনন্দ বলেন, “জখম দাঁতালের চিকিৎসার জন্যই কুনকি আনা হয়। কিন্তু নেপাল থেকে না ফিরলে কী করা যাবে!” |
|
|
 |
|
|