প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধীর হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিন পরের কথা। কংগ্রেসের নেত্রী হিসেবে সনিয়া গাঁধীর নাম প্রস্তাব করেছিলেন কয়েক জন নেতা। রীতিমতো রেগে উঠেছিলেন আর এক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসিংহ রাও। আত্মজীবনীতে এ কথা জানিয়েছেন প্রয়াত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অর্জুন সিংহ।
আত্মজীবনী শেষ করে যেতে পারেননি অর্জুন সিংহ। সহ-লেখক অশোক চোপড়া জানিয়েছেন, প্রয়াত মন্ত্রীর লেখার কিছু কিছু ফাঁক তাঁর পরিবার ও সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে ভরানোর চেষ্টা করেছেন তিনি। তবুও আত্মজীবনীটি অসমাপ্ত বলেই ধরা উচিত।
রাজীব গাঁধী হত্যার পরের বর্ণনা অবশ্য অর্জুনের লেখায় খুবই স্পষ্ট। কংগ্রেস প্রধান হিসেবে সনিয়া গাঁধীর নাম শুনে কিছু ক্ষণ চুপ করে ছিলেন নরসিংহ। তার পরে হঠাৎ রাগত স্বরে বলেন, কংগ্রেসকে সবসময়েই ইঞ্জিনের পিছনে ট্রেনের মতো নেহরু-গাঁধী পরিবারের পিছনে জুড়ে থাকতে হবে কেন। অর্জুন লিখেছেন, রাজনীতির কদর্য চেহারাটা যেন হঠাৎ একেবারে সামনে এসে গেল তাঁর। অসুস্থ বোধ করছিলেন তিনি।
হাল ছাড়তে রাজি হননি সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির তৎকালীন কোষাধ্যক্ষ সীতারাম কেসরী। সনিয়াকেই কংগ্রেস সভাপতির পদ গ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন কেসরী।
অর্জুনের মতে, চালে একটু ভুল হয়ে গিয়েছে ভেবে থমকে যান নরসিংহ। নেহরু-গাঁধীদের বিরুদ্ধে বড় তাড়াতাড়ি মুখ খুলে ফেলেছিলেন। তাই এর পরে চুপ করে যান। পরে জানতে চান, সনিয়া রাজি হবেন কি না। বাকি নেতারা জানান, এই প্রশ্নের জবাব সনিয়াই দিতে পারেন। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময়ে নরসিংহের কাজকর্মেরও সমালোচনা করেছেন অর্জুন। তাঁর দাবি, বাবরি ধ্বংসের ইঙ্গিত আগেই পাওয়া গিয়েছিল। এমনকী, উত্তরপ্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিংহের সঙ্গে বৈঠক করে এসে নরসিংহকে সতর্ক করেছিলেন অর্জুন। কিন্তু, বাবরি ভাঙার সম্ভাবনার কথা পুরোপুরি মানতেই চাননি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। বাবরি ধ্বংসের সময়ে পঞ্জাবে ছিলেন অর্জুন। খবর পেয়েই প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি থেকে বলা হয়, তিনি ঘরে দরজা বন্ধ করে রয়েছেন। তাঁকে বিরক্ত না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নরসিংহের কাজকর্মের তুলনা খুঁজতে ইতিহাসের পাতা উল্টেছেন অর্জুন। রোম যখন জ্বলছিল সম্রাট নিরো তখন বেহালা বাজাচ্ছিলেন। অর্জুনের বক্তব্য, বাবরি ধ্বংসের সময়ে নরসিংহের আচরণ ছিল নিরোর মতোই। |